সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-পাহাড়ে তো এর আগেও এমন হয়েছে;অন্যায়-অপরাধ যেই করুক না কেন–শুরুতেই বাঙালি অথবা সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করে মাঠ গরম করা হবে,দেশ গরম করতে হবে, মানববন্ধন,আলোচনা সভা,প্রতিবাদ মিছিল,বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জন,কালো ব্যাজ ধারণ ইত্যাদি চলবে। পরে হয়তো জানা যাবে যে,এর সাথে কোন বাঙালি বা সেনাবাহিনীর কেউ আদৌ জড়িত নয়;এমন ঘটনার ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে।একই ঘটনার প্রেক্ষিতে লেখা ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীঃ নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত দোষী’তে,আমি ইতি চাকমা,বালাতি ত্রিপুরা, বিশাখা চাকমা,উ প্রু মারমা বা সবিতা চাকমার ঘটনার উল্লেখ করেছিলাম।আর এজন্যেই,আমি এখন আর অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া সমাজের অনেক সম্মানীয় কারো ফেসবুক স্ট্যাটাস বা ভিডিও কিংবা কিছু উগ্র পাহাড়ির উস্কানীমূলক পোস্ট দেখে মন খারাপ করি না।আর ঠিক এই কারণেই,বিলাইছড়ির ঘটনা নিয়ে,পার্বত্য অঞ্চলের কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের চিরাচরিত স্বভাব মতোই সেনাবাহিনীকে নাটের গুরু বানানোর যারপরনাই কসরত দেখে,সত্যি বলতে কি আমার মোটেও মন খারাপ হয়নি। মন খারাপ হওয়ার আদৌতে কোন কারণ দেখছি না;কারণ এমনই আশা করেছিলাম।তার মানে কি এই যে,যা ঘটছে,তাতে আমার কোন প্রতিক্রিয়া নেই?অবশ্যই আছে,আছে বলেই তো আমি এই লেখাও লিখছি।আসলে,আমার খুব মন খারাপ হয়েছে মেয়ে দুজনের বাবা-মা আর ছোট ভাইটার জন্যে।আমি খুব কস্ট পাচ্ছি মেয়ে দুজনের অবর্ণনীয় কস্টের কথা ভেবে।আমার কষ্ট আজ আরো বেড়ে গেছে যখন জানতে পারলাম কিছু মানুষ নাকি এই মেয়ে দুজনকে আজ হাসপাতাল থেকে জোর করে রিলিজ করানোর চেষ্টা করেছিলো,তাদের জিম্মায় নেয়ার উদ্দেশ্যে..!!একই চেষ্টা নাকি গতকালও তারা করেছিল..!!!আমি কি বলব,বুঝতে পারছি না। মেয়ে দুজন কি তাহলে সুস্থ,তাদের আর চিকিৎসার দরকার নেই?যদি দরকার না থাকে,হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কি কোন কারণে বাবা-মা কে ডেকে তাদের কাছে হস্তান্তর করতে পারছেন না?কারা বাঁধা দিচ্ছে?যারা বাবা-মায়ের অজ্ঞাতে দুই বোনকে ঘর থেকে তুলে এনে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে,তারাই কি?পুরো ঘটনা একটি স্বাভাবিক ধর্ষণের ঘটনা মনে হতো,যদি ঘটনার পর পরই মেয়ে দুজনের বাবা-মা তাদের অসুস্থ মেয়েদের চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে নিয়ে আসতো।কিংবা,মেয়ে দুজনকে আনার সময় বাবা-মাকে সাথে নিয়ে আসতো।কিন্তু,ঘটনা তা নয়।অন্য কেউ অথবা মেয়েদের বাবা-মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী ‘কে বা কারা’ মেয়ে দুজন কে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।ঘর থেকে আনার সময় কি বাবা–মা ঐ খানে ছিল না?কেন ছিলো না?অবশ্য,বাসায় যদি কেউ অসুস্থ না থাকে,তাহলে বাবা-মা কি জুমের কাজে বাইরে যাবে না?তাহলে কি ধরে নিবো,মেয়েদের কোন অসুস্থতা ছিল না বলেই বাবা–মা বাড়িতে ছিল না এবং বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে সুস্থ দুই বোনকে জোরপূর্বক তুলে আনা হয়েছিল?যারা পরে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল?শুধু তাই নয়,একটা বিশেষ গোষ্ঠী উঠে পড়ে লেগেছে প্রমাণ করার জন্যে যে,বড়জন ধর্ষিতা হয়েছে।এমতাবস্থায়,একটা প্রশ্ন আমি কোন মতেই আমার মাথা থেকে দূর করতে পারছি না।সেটি হল-এমন কি হওয়ার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই যে,এই ‘কে বা কারা’ মেয়ে দুজনকে জোর করে তুলে এনেছে এবং আনার পথে যা করার করে অসুস্থ বানিয়েছে বা ধর্ষণ করেছে, এরপরে হাসপাতালে ভর্তি করার অব্যবহিত পরেই জোর গলায় দাবি করতে শুরু করলো যে,এদের একজন ধর্ষিতা..!এরা নিশ্চিত যে,ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়বেই যে,আসলেই একজনকে ধর্ষণ করা হয়েছে;এতটা নিশ্চিত আপনি কখন হবেন?যখন আপনি নিজেই জানেন যে, আসলে একজাক্টলি কি কি ঘটেছে?কিভাবে জানলেন? আপনি তখন উপস্থিত ছিলেন?নাকি,যারা করেছে,তারাই আপনাকে জানিয়েছে?আমি মনে করিয়ে দিতে চাইনা যে, আমাদের দেশের একটা অঞ্চলে ‘বিজাতীয়’ ছেলের সাথে প্রেম বা বিয়ে করার অপরাধে মেয়েদেরকে গণধর্ষণ এমন কি হত্যা পর্যন্ত করা হয়।আর এই শাস্তির ব্যবস্থাটা অনেকটাই প্রচলিত এবং অনেকটাই প্রকাশ্য বলা যায়। তাহলে,জাতির বৃহত্তর স্বার্থে (?) কি এখানে স্বজাতির বা কাছাকাছি জাতির কেউ কি এই মেয়ের চরম সর্বনাশ করতে দ্বিধা করতে পারে?ব্যক্তিস্বার্থে বা দলীয়স্বার্থে বিগত দিনগুলোতে পার্বত্য অঞ্চলে কি পরিমাণ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে,দয়া করে আমার কাছে জানতে চাইবেন না।এমন কি এই বিলাইছড়িতেই,রাজনৈতিক মতভিন্নতার জন্যে কোন দলের সশস্ত্র গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষকে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে?এমন কি,সরকার দলীয় কতজন রাজনৈতিক নেতাকর্মী সম্প্রতি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে এদের ভয়ে?মেয়ে দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পরে,সাংবাদিকদেরকে কারা প্রথম জানিয়েছে?এরা কি ওই দলেরই নাকি?একই দলের হলে কাকতালীয় হতে পারে,কি বলেন?মেয়ে দুজন অসুস্থ,তাই চিকিৎসাধীন;কোন কোন সংবাদ পত্রে অসুস্থতার গা শিউরে ওঠা বিবরণের পরে চিকিৎসায় যে ট্যাবলেট ব্যবহৃত হচ্ছে,তার নাম পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে।সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে,মেয়ে দুইজন যে সার্বক্ষণিক প্রহরায় আছে,সে সংবাদও জানা হয়ে গেছে।এমনকি হাসপাতালে, ‘পুলিশ আছে অনেক,সাদা পোশাকে আরও কত কেউ আছে’।আরো আছে,নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ পোশাকধারী ও ওয়াকি-টকি-ওয়ালা ও ওয়াকিটকি-বিহীন ও বিশেষ পোশাক বিহীন লোকজন,যাদের কারণে দর্শনার্থীদের সমস্যা ও হচ্ছিল।এরকম অবস্থা থেকে,তাদেরকে কিছু লোক কেন রিলিজ করানোর চেষ্টা করবে? ‘নিরাপত্তার নামে তাদের মুখ বন্ধের প্রয়াস’ থেকে কাঊকে বঞ্চিত করার অভিপ্রায়ে?মুখ বন্ধ করা প্রয়োজন কাদের স্বার্থে?যারা মেয়ে দুজনের বাবা-মায়ের অজ্ঞাতে জোর করে তুলে এনেছে,তাদের?নাকি তাদের স্বার্থে–যারা নিশ্চিত যে,বড়জন ধর্ষিতা?এমন তো হতেই পারে না যে, বিলাইছড়ি এলাকায় সরকার দলীয় সমর্থকদের হত্যার ভয় দেখিয়ে বা প্রয়োজনে হত্যা করে হলেও একটা বিশেষ গোষ্ঠী নিজেদের আধিপত্য যখন প্রায় নিরঙ্কুশ করে ফেলেছে,তখনই নিরাপত্তা বাহিনী ওই এলাকায় ২১ জানুয়ারিতে দুই সন্ত্রাসীকে ধরে ফেলে।যাদের গ্রেপ্তারে ঐ দলের সাম্প্রতিক অর্জন ম্লাণ হওয়ার সম্ভাবনা তো আছেই,ভবিষ্যতেও নিরাপত্তা বাহিনীর এ ধরনের সাফল্যে ঐ গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তারের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কোন ঊপায় থাকবে না।হয়তো বা,এসব বিবেচনা করে,নিরাপত্তা বাহিনীকে টার্গেট করেই পুরো ঘটনাটি সাজানো হয়েছে।এখন যখন কেঊ মুখের উপর বলে দেয় যে, ‘সে শিখিয়ে দেয়া কথা বলতে পারবে না’ বা মেয়ে দু’জনের বাবা-মা যখন সবার সামনেই বলে যে,নিরাপত্তা বাহিনী কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার বেশ কিছু সময় পরে তারা মেয়ে দুইজনকে সুস্থ রেখে কাজের জন্যে বাইরে যায়–তখন জোর করে হলেও হাসপাতাল থেকে এই দুই জনকে রিলিজ করে নিজেদের হেফাজতে নেয়া কি জরুরি হয়ে পরে না?বিলাইছড়ির ঘটনাপ্রবাহে আলোকে আমি যে প্রশ্নের জটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছি,তার উত্তর নিশ্চয় আপনাদের জানা নেই? যদি জানা থাকেই,তাহলে দয়া করে এগিয়ে আসুন,এই সব পাহাড়ি অপকর্মকারিদের গোঁমড় ফাঁস করে দিন।আর যদি উত্তর নাও জানা থাকে,এগিয়ে এসে উচ্চকণ্ঠে বলুন,যথেষ্ট হয়েছে।আমাদেরকে আর বিব্রত করবেন না, আমাদের মান-সম্মান নিয়ে আর খেলবেন না।আমাদের কে বাঁচতে দিন,আমাদের কে শান্তিতে থাকতে দিন। আমাদেরকে বা আমাদের পরিবারের কাউকে,দয়া করে, আপনাদের স্বার্থ আর রাজনীতির পণ বানাবেন না।
লেখক:-(মাহের ইসলাম),পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক লেখক ও গবেষক।