১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়েছে ৩০ লক্ষ বাঙালি সূর্য সন্তানের রক্তের বিনিময়ে। পৃথিবীর আর কোনো জাতিকে তার স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এতো আত্মত্যাগ করতে হয়নি। ১৯৭১ সালে লন্ডন টাইমস তাদের রিপোর্টে বলেছিলো, "If blood is the price of independence then Bangladesh has paid the highest price in history''। স্বাভাবিকভাবেই অনুমেয় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কি নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছিলো বাঙালি জাতির উপর।
একাত্তরে পাকিস্তানি সেনা দ্বারা এই ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতনের বিষয়টিকে সামনে এনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০১৭ সাল থেকে ২৫শে মার্চকে গণহত্যা দিবস পালন করছে। দেশের জাতীয় সংসদে এবং মন্ত্রিসভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও পাশ হয়েছে।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এই ইতিহাসের বর্বরোচিত এই গণহত্যার আজও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। আর তাই আন্তর্জাতিক মহলে এত বড় হত্যাকান্ড অনুচ্চারিতই থেকে যায়। পাকিস্তানের এত বড় অপরাধ বিশ্বের অজানাই থেকে যায়। সেইসঙ্গে দেশের ভেতরের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের প্রমাণিত সত্যকে অস্বীকার করে ইতিহাস বিকৃত করার প্রয়াস পায় এবং এই একই দেশবিরোধী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারে আন্তর্জাতিক মহলকে বাংলাদেশের প্রতি বৈরি করে তোলার সুযোগ পায়।
একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে হত্যা ও নির্যাতন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করেছেন ডা. এম এ হাসান। গণহত্যার আন্তর্জাতিক সংজ্ঞার আলোকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে যে হত্যা, নির্যাতন হয়েছে সেটি নিশ্চিতভাবেই জেনোসাইড বা গণহত্যা।
তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে ২০০৪ সালে ইউনেস্কোর কাছে ২৫শে মার্চকে গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। সে চিঠির জবাবেও বলা হয়েছিল জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র আবেদন করলে সেটি বিবেচনা করা যায়। তিনি জানান, পরবর্তীকালে তৎকালীন বিএনপি জামায়াত জোট সরকার কোনো এক রহস্যজনক কারণে বিষয়টি নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
তবে আশার ব্যাপার হচ্ছে দেরিতে হলেও ক্ষমতাসীন সরকার ৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে তৎপর হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি ও গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা অ্যাডামা ডিয়েং এর সাথে একান্ত বৈঠকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কীভাবে এ দেশে গণহত্যা শুরু হয়েছিল, এদেশের সাধারণ মানুষকে কীভাবে নির্বিচারে হত্যা করেছিল পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ও এদেশে তাদের দোসরেরা, সে বিষয়গুলো তুলে ধরেন এবং একই সাথে একাত্তরে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর চালানো গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চেয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দাবি আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে এ বিষয়টি আলোচনায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন অ্যাডামা ডিয়েং। রোববার (২৪ মার্চ) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অ্যাডামা ডিয়েং এ আশ্বাস দেন।
২৫ মার্চে কালরাতে পাকিস্তানিদের ধ্বংস ও নিধনযজ্ঞ বাঙালিকে তো দমাতে পারেইনি, বরং তাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির মরণপণ সংগ্রামে অবতীর্ণ করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে অত্যাচার, অবিচার ও নৃশংসতা করেছে তা নজিরবিহীন। দেরিতে হলেও ৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.