স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম বাঙালির জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পর স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাঙালিরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের শোষণ, অত্যাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সংগ্রাম ও আন্দোলন চালিয়ে এসেছিল। ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে তা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। বাঙালি জাতি গড়ে তুলে সশস্ত্র প্রতিরোধ।
১৯৭১ সনের ৩০শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকে ভারপ্রাপ্ত পাক সেনাদের মেজর পৌরসভায় টেলিফোনে সংবাদ দেন রোকেয়া হলের চারিদিকে মানুষের লাশের পচা গন্ধে বসা যাচ্ছে না, অবিলম্বে ডোম পাঠিয়ে লাশ তুলে ফেলা হোক। ছয়জন ডোম নিয়ে রোকেয়া হলে প্রবেশ করে রোকেয়া হলের সমস্ত কক্ষে তন্ন তন্ন করে খুঁজে কোন লাশ না পেয়ে চারতলা ছাদের উপর গিয়ে আঠার বছরের জনৈক রুপসী ছাত্রীর উলঙ্গ লাশ দেখতে পায় তৎকালীন সুইপার ইন্সপেক্টর ছাহেব আলী। রোকেয়া হলের চার তলার ছাদ থেকে উদ্ধার করা হয় বিবস্ত্র যুবতীর ক্ষত-বিক্ষত লাশ। সেখানে দায়িত্বরত জনৈক পাকী সেনাকে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে পাকী সেনাটি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে বললো, আমরা সকলে মিলে ওকে ধর্ষণ করতে করতে মেরেছি। এদিন বুড়িগঙ্গা নদী থেকে কয়েকটি ট্রাকে করে লাশ তুলে স্বামীবাগে আনা হয়।
পাকিস্তানিরা বিভিন্ন কলাকৌশল গ্রহণ করে তখনও পূর্ব-পাকিস্তানের ব্যবসায়ী এবং পুঁজিপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলো। এদিন রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রকাশিত পাকিস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, মার্চের প্রথম দিকে রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে যে অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছিল তা দ্রুত কেটে যাচ্ছে এবং শেয়ার বাজারের অবস্থাও স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
সামরিক কর্তৃপক্ষের এক ঘোষণায় এদিন হাসপাতালের কর্মচারীদের অবিলম্বে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। আর এক সামরিক ঘোষণায় ৫ জনের অধিক ব্যক্তিকে একত্রে জমায়েতের উপর বিধি নিষেধ জারি করা হয়। পশ্চিম-পাকিস্তানের ‘ডন’ পত্রিকায় ভুট্টোর অভিমত প্রকাশিত হয়। ভুট্টো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফ্যাসিস্ট ও সাম্প্রদায়িক হিসেবে আখ্যায়িত করে। ভুট্টো আরো বলে যে, পূর্ব-পাকিস্তানের পরিস্থতি সম্পূর্ণভাবে শেখ মুজিবের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিলো। তিনি জনসাধারণকে ভুল পথে পরিচালিত করলেন এবং প্রকৃতই তিনি দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিলেন। ভুট্টো জানায়, পূর্ব-পাকিস্তানের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা পাকিস্তানের নিজস্ব ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
তখনও পূর্ব-পাকিস্তান রাইফেলস সেক্টর হেড কোয়ার্টার এবং রিজার্ভ পুলিশ লাইনে বাঙালি সৈনিকরা পাকী সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দুর্গ তৈরি করে রেখেছে। কমান্ডো হামলার মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষতি স্বীকার করে পাকী সেনারা বেতার কেন্দ্র দখল করে। বেতার কেন্দ্র দখল করতে ঢাকা থেকে দুটো জেট বিমান নিয়ে গিয়ে আক্রমণ চালায়। কুষ্টিয়া শহরেও এদিন পাকী সেনারা বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করে।
এদিন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে রংপুর শহর ও সংলগ্ন গ্রামগঞ্জের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে বহু লোক প্রাণ হারায়। পাশাপাশি পাকিস্তানি বাহিনী আগুন জ্বালিয়ে বাড়িঘর-মহল্লা-গ্রাম ধ্বংস করে এবং পাশবিক অত্যাচার চালায়।
সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও সাহায্য দানের জন্য বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক সরকার ও জনগণের প্রতি পুনরায় আবেদন জানায়।
১৯৭১ সালের এইদিনে সকাল ৮টায় ১০৭তম ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার এস এ আর দুররানী যশোর সেনানিবাসের অস্ত্রাগারের চাবি নিজের কাছে নিয়ে নেয়। বিকেল ৫টার দিকে মতিন পাটোয়ারীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনস দখল করেন। অন্যদিকে গোদাবাড়ীতে অবস্থানরত ইপিআর বাহিনীর ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর সর্বাত্মক আক্রমণে সিপাহি আবদুল মালেক শহীদ হন।
এভাবে যত দিন যেতে থাকে বাঙালির প্রতিরোধ সংগ্রাম জোরালো হতে থাকে।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.