মো.আলী আশরাফ মোল্লা
বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু কে ছাড়া বাংলাদেশ পরিচয় দেওয়া যায় না। যার সারাজীবনের লালিত স্বপ্নই ছিল বাংলাদেশের মানুষ কে নিয়ে। এদেশের মানুষ সুখে থাকবে,ভালো থাকবে। কোন অন্যায় হবে না। বাংলার মানুষের অধিকার নিয়ে কোন প্রকার বঞ্চিত হবে না। সবাই বাংলায় যার যার অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদৃঢ় নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রাম শেষে বিশ্ব মানচিত্রে লাল সবুজের পতাকা খোচিত একটি রাষ্ট্রের জম্ম হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে। বঙ্গবন্ধু আজীবন বাংলার মানুষ কে ভালো বাসতেন। তার বড় দূর্বলতা ছিল বাংলার মানুষের প্রতি। এদেশের মানুষের প্রতি তার ছিল অগাধ বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাসই একদিন তার জন্য কাল হয়ে দাড়াল। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকে সহ তার পরিবারের আঠারো জন সদস্যকে ইতিহাসের নির্মমভাবে,পাশবিক,বর্বরোচ্চিত,পাষণ্ড এবং জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটায় কতিপয় বিপদগামী সেনা সদস্যরা। তার ভেবে ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই সব হয়ে যাবে শেষ কিন্তু তারা জানে না বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব আকাশের বিশালতার মতোই ব্যপ্তি ছিল। তিনি শুধু এদেশের স্বাধীনতার জন্যই আজীবন লড়াই করেছেন সংগ্রাম করেছেন। বাংলার মানুষ কে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত করেছেন। তার মধ্যে কোন ক্ষমতার লোভ ছিল না, অহংকার ছিল না। ছিল শুধু বাংলার মানুষ কে ভালোবাসার এক সম্মোহনী শক্তি। পাকিস্তানি শত্রুরা যারা তাকে যুদ্ধের সময় দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি কারাগারে আটক রাখলেও তাকে মারার দুঃসাহস দেখান নি অথচ সেই বিশ্ব বরেণ্য নেতা স্বাধীনতার মুক্তিগামী বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু কে এই দেশের কতিপয় কুলাঙ্গার ক্ষমতা লিপ্সু বিপদগামী সেনা সদস্যরা হত্যা করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয় বিশ্ব ইতিহাসে একটি কলংকজনক দিন। এই দিনেই ভোরে জাতির জনকের ধানমন্ডির ৩২ এর বাসায় ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। সেই দিন ঘাতকরা শুধু তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, হত্যা করেছিল তার শিশু পুত্র রাসেলকেও। হত্যা করেছিল তার পুত্র ক্যাপ্টেন কামাল, লেফটেন্যান্ট জামালসহ তার পরিবারের আঠারো সদস্যকে।
সেইদিন তার হত্যাকাণ্ডের সময় রাষ্ট্রের এতগুলো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা থাকলেও কেউই তাকে বাচাঁতে এগিয়ে আসেন নি। সেইদিন সুবেদার মেজর ওয়াহাব সুকৌশলে সবার গুলি তার জিম্মায় নিয়ে গেলেও পুলিশের গুলি তার জিম্মায় নিতে ব্যর্থ হয়।
একমাত্র পুলিশের সদস্যরাই সেই দিন বঙ্গবন্ধু কে বাচাঁতে পাল্টা গুলি ছুড়েছিল। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ পুলিশের এস বি র এ এস আই সিদ্দিকুর রহনানকে গুলি করে হত্যা করে। আহত হয় ডি এস পি নুরুল ইসলাম খানও। এখানেও সুকৌশলে বঙ্গবন্ধুর হত্যার ট্রাজেডির মতোই পুলিশের অবদানকে ট্রাজেডি করেই রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নিহতের ঘটনার সাথে কর্নেল জামিল নিহত হওয়ার ঘটনা মানুষ জানলেও পুলিশের এএস আই সিদ্দিকুর রহমানের নিহতের ঘটনাটি মানুষ জানতো না। এখানেও ইতিহাসের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে সব সময় পুলিশ চেয়েছিল জন গনের কাছে নিয়ে যেতে। ১৯৭৫ সালে পিজি আর গঠনের আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ঢাকা জেলা পুলিশ। তারা তাদের দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠা, সততা, সাহসিকতা এবং আন্তরিকতার সাথেই পালন করেছিল।
বঙ্গবন্ধু কে হত্যার পরে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিল তারা চরমভাবে বঙ্গবন্ধুর এই হত্যার বিচার কে বাধাগ্রস্ত করেছিল। ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। পরবর্তীতে জিয়া ক্ষমতায় এসে সেটা কে আইনে রুপান্তর করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে করে দেয়। দীর্ঘ ২১ বছর পরে ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার কাজে হাত দেন। ইতিহাস কখনোই কাউকে ক্ষমা করে নাই। যারা ভেবেছিল এই হত্যার বিচার হবে না। তারা এখন স্বচক্ষে দেখে যান এই বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর বিচার সম্পূর্ণ হতে চলেছে। কলংক মুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনা করা যায় না। তাকে মেরে যারা মনে করেছিল, এই দেশ থেকে তার স্মৃতি মুছে দিবে তারাই এবং তাদের দোসররা এখন তাদের খোলস পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করছে। তারা আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে বিভিন্ন অন্যায় অনিয়ম করে যাচ্ছে। তাদের কে সনাক্ত করে এখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান। ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান। কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের কথার সাথেই পুরোপুরি একমত। এই বাংলা থেকে তার স্মৃতি মুছে দেওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু কে ছাড়া বাংলাদেশ ভাবাই যায় না। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ একই সূত্রে গাথা। বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ আর বাংলাদেশই বঙ্গবন্ধু।
লেখকঃ কলামিস্ট,সাংস্কৃতিক কর্মী এবং পুলিশ কর্মকর্তা।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2025 Chttimes.com. All rights reserved.