রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরানো, মালিক চালক পথচারীসহ সবার জন্যই রাস্তায় সঠিকভাবে চলাচলের জন্য একটি যুগোপযোগী আইন অপরিহার্য ছিল। আইন হলো, নাম হলো তার সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮। যা বাস্তবায়নের জন্য বলা হলো ১ নভেম্বর ২০১৯ইং থেকে। কিন্তু বাস্তবে আমরা তার বাস্তবায়ন পেলাম না। কিন্তু কেন বাস্তবায়ন করা হলো না বা বাস্তবায়ন করা গেল না, সেটাই আমার প্রশ্ন ? নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়ন না করেই কেনইবা পুরনো মোটরযান আইন ১৯৮৮ বাতিল করা হলো? একটি নতুন আইন বাস্তবায়ন হলেই কেবল পুরনো আইনটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে সারা বাংলাদেশের কোথাও বা কোন জেলাতেই ট্রাফিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বা গাড়ীর কাগজপত্র পূর্ণাঙ্গ না থাকার ফলেও বা ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার ফলে ও কোন মামলা প্রদান করা যাচ্ছে না। কোন কোন জেলাতে এখনো ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্টদের কাছে কোন মামলা প্রদান করার কোন বই নেই। এই মুহুর্তে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ভাঙ্গার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নিতে পারছে না ট্রাফিক বিভাগ। ফলে এখন আগের চেয়েও বেশী খারাপ অবস্থা হয়েছে ট্রাফিক শৃঙ্খলার। আর হ্যাঁ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ আইনের বাস্তবায়ন না থাকার দরুনই এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি।
যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং করা,অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক দ্বারা গাড়ী চালনা, ফিটনেস বিহীন গাড়ি,রুট পারমিট বিহীন গাড়ী রাস্তায় অবাধে চলছে।
আবার নিবন্ধন বিহীন যানবাহন ও অবাধে চলছে- যার মধ্যে রয়েছে টমটম, নছিমন, করিমন, অটো রিক্সা সহ ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক। এছাড়াও রয়েছে দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে তিন চাকার জনপ্রিয় বহন সি.এন.জি। যার আবার অধিকাংশই হলো অন টেস্ট। এই রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সি.এন.জি গুলো অপ্রাপ্ত চালক কতৃক চালানো হচ্ছে। যার ফলে ঘটছে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা।
বাস, ট্রাকের বেলায়ও চলছে চরম নৈরাজ্য। পুরনো লক্কড় ঝক্কর, রাস্তার চলাচলের অনুপযোগী গাড়ী ও চলছে। এখন পুরোদমে। যাদের আবার অধিকাংশ গাড়ীর কোন ফিটনেস নেই,নেই রুট পারমিটও। আমি এমন ও দেখেছি একটি গাড়ীর রুট পারমিট দেওয়া হচ্ছে ঢাকা টু চাদপুর অথচ এই গাড়ীটিই চলছে নোয়াখালী টু চট্টগ্রাম। এই রকম বহু উদাহরণ রয়েছে।
বহু ঢাকডোল পিটিয়ে বলা হলো। নতুন আইন হলো আর এই নতুন আইন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮, যা ১ নভেম্বর ২০১৯ ইং থেকে কাযর্কর করা হবে। মোটর যান আইনের জরিমানা আগের চেয়ে কয়েকগুন বেশী জরিমানা করা হলো। যার ফলশ্রুতিতে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, অক্টোবরের ১৫ তারিখের পর থেকে নভেম্বরের ১৫ তারিখ,২০১৯ পর্যন্ত রাস্তায় অনিবন্ধিত যানবহন,ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতিত চালক এবং যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং নেই বললেই চলে। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। দূর্ঘটনার মাত্রা কমে এসেছে। জনগণ তার সুফল ভোগ করেছে। যদিও আইনের বাস্তবে প্রয়োগ হয়নি। তথাপিও জনগণের সচেতনতার জন্য আবার আইনের অধিক জরিমানার ভয়েও আমরা আইন মেনে চলতে বাধা হয়।
কিন্তু বিধি বাম সেই সুখকর পরিবেশ ও বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। কতিপয় শ্রমিক আন্দোলনে নেমে গেল জরিমানা কমাতে হবে বলে। অথচ আইনটি পাস করার আগে অনেকবার মিটিং হয়েছে। সেখানে অনেক মালিক নেতা এবং অনেক শ্রমিক নেতাও উপস্থিত ছিল। তাদের মতামতও নেওয়া হয়েছিল দিয়েছিল। তারা সেখানে তাদের মতামত দিয়েছে। তারপরে এখন কেন তাদের আন্দোলন? বহু আলোচনা পর্যালোচনা শেষে নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ যখন পাস হলো তখন সর্বস্থরের জনগণের মধ্যে একটি বিশ্বাস তৈরী হলো। এবার বোধ হয় সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, মৃত্যুর মিছিল কমে আসবে। আর কোন মানুষ সড়কে প্রাণ হারাবে না। কোন প্রিয়তমকে হারাবে না কোন প্রিয়তমা। কোন বোন হারাবে না তার ভাইকে। কোন প্রিয়জন হারাবে না তার কোন স্বজনকে। কারণ আইনের কঠিন প্রয়োগই পারে অপরাধের মাত্রা কমাতে। আমি তখন দেখেছি সড়কে হেলমেট বিহীন কোন মোটর সাইকেল চালক বাইক ড্রাইভ করেনি। আর সেটা আইনকে মেনেই, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই সবাই আইন মেনে চলতে উদুদ্ধ হয়েছিল।
যেই বলা হলো ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত কোন গাড়ীর বিরুদ্ধে মামলা প্রদান করা হবে না। সেই আবার শুরু হলো আগের অবস্থা। যে যার মতো করে চলছে। ওয়ান ওয়ে ভঙ্গ করে মোটর সাইকেল তিনজন আবার কেউ কেউ চারজন নিয়েও চালাচ্ছে। এই মুহুর্তে ট্রাফিক সার্জেন্টদের ও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। কারণ ব্যবস্থা নেওয়ার মতো এদের কাছে মামলা প্রদান করার কোন বই/স্লিপ প্রদান করা হয় নাই। আইন কঠিন হলে অধরাধের মাত্রা একদিকে যেমন কমে আসবে ঠিক তেমনি করে মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। আইনের কঠিন প্রয়োগই পারবে সড়ক শৃঙ্খলা ফিরাতে এবং মৃত্যুর মিছিল কমাতে।
লেখক:-সাবেক সাধারণ সম্পাদক,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি ও পুলিশ কর্মকর্তা।