শিরোনাম: বান্দরবানের রুমায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের দুই সন্ত্রাসী আটক বান্দরবানে তারুণ্যের উৎসবঃ উদ্বোধনের অপেক্ষায় জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫ রোয়াংছড়ি আর্মি ক্যাম্পের উদ্যোগে মাতৃদুগ্ধ পোষ্যকালীন মায়েদের সহায়তায় বিশেষ অনুষ্ঠান ও উপহার বিতরণ ডাকাতচক্রের মূলহোতাসহ ৭ সদস্য গ্রেফতার নাইক্ষ্যংছড়ির তিনটি ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগ আলীকদমে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-সুশীল সমাজ ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লামায় আইন অমান্য করে অবৈধ ইটভাটায় জ্বলছে আগুনঃ অসহায় স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর আলীকদমে ট্রাক-মোটরবাইক সংঘর্ষে নিহত ৩

একুশের প্রথম কবিতা রচনার প্রেক্ষাপট


মো. আলী আশরাফ মোল্লা প্রকাশের সময় :২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ৩:১৯ : অপরাহ্ণ 928 Views

বাংলা কে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে সারাদেশ তখন উত্তাল,গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। এই পরিষদের চট্টগ্রামের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, সারা দেশে এক দাবি। দাবি ক্রমান্বয়ে আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে সারাদেশে জোর আন্দোলন চলছে। কিন্তু এরই মধ্যে রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদের চট্টগ্রামের আহবায়কের দায়িত্ব পালন কারী মাহবুব উল আলম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। জ্বল বসন্ত রোগে তিনি আক্রান্ত হন। মারাত্মক ভাবে তিনি অসুস্থ বোধ করেন। আর এরই মধ্যে তিনি খবর পান ঢাকায় মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে মিছিলরত ছাত্রদের উপর পুলিশ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করছে। পুলিশের গুলিতেই প্রাণ হারান বাংলা মায়ের দামাল ছেলে রফিক, বরকত ও সালাম। এই খবর শুনার সাথে সাথেই শোকাহত হয়ে বেদনাবিধুর মন নিয়ে কবি মাহবুব উল আলম চোধুরী খাতা কলম নিয়ে বসেন। কিন্তু তিনি এতটাই অসুস্থ যে উঠে নিজে লেখার মত শক্তি টুকু তার নেই। তিনি মুখে মুখেই বলতে লাগলেন

এখানে যারা প্রাণ দিয়েছে রমনার উর্ধধমুখী কৃষ্ণচূড়ার তলায়
যেখানে আগুনের ফুলকির মতো এখানে ওখানে জ্বলছে অসংখ্য রক্তের ছাপ
সেখানে আমি কাঁদতে আসিনি।

সে সময় কবির পাশেই ছিলেন তার আরেক জন নিবেদিত সহকর্মী ননী ধর। কবির মুখে বলা কথাগুলো তিনি একটি কাগুজে লিপিবদ্ধ করেন। কবিতার নাম হয় কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কবিতাটি রচিত হয়। আর এটিই হচ্ছে একুশের প্রথম কবিতা। কিছুক্ষণ পরে সেখানে উপস্থিত হন সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সাংবাদিক সাহিত্যিক খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস। সিদ্ধান্ত হয় কবিতা টি দ্রুত প্রকাশ করার। রাতেই কবিতা টি মুদ্রিত হয়। চট্টগ্রাম এর আন্দরকিল্লায় কোহিনূর প্রেসে কবিতা টি ছাপানো হয়। কবিতা টি ছাঁপাতে গিয়ে পুলিশ ওই প্রেসে হানা দেয়। কিন্তু প্রেসের ম্যানেজার দবির আহমেদ চৌধুরী সহ কমর্চারীরা দ্রুত পান্ডুলিপি লুকিয়ে রাখে। পুলিশ অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে চলে যায়। ২২ ফেব্রুয়ারি ১৭ পৃষ্টার একটি পুস্তিকায় ছাঁপা হয়। কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি কবিতা টি। ওই দিনই মতান্বরে ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে প্রতিবাদ বিশাল সমাবেশে রাজনৈতিক কর্মী এবং কবির সতীর্থ চৌধুরী হারুনুর রশীদ কবিতাটি পাঠ করেন। কবিতা টি শুনে ময়দানে জমা হওয়া হাজারো মানুষ ফেটে পড়লো বিক্ষোভে। মুর্হুমুর্হু স্লোগানে কেপে উঠল পুরো লালদিঘী ময়দান। হাজারো বুলেটের চাইতে যে এই কবিতার ক টি লাইন শক্তিশালী তার প্রমাণ মিলল সেই দিন।
পাকিস্তান সরকার কবিতাটি বাজেয়াপ্ত করল। হুলিয়া জারি হলো কবির বিরুদ্ধে। তিনি এবং তার কবিতা হয়ে গেল ইতিহাসের অংশ। আর কবিতা টি ছাঁপানোর অপরাধে কোহিনূর প্রেসের ম্যানেজার দবির আহমেদ চৌধুরী এবং কবিতাটির প্রথম পাঠকারী চোধুরী হারুনুর রশীদকে দীর্ঘ দিন কারাবাস করতে হয়। পরে চোধুরী জহুরুল হক এই কবিতার দুর্লভ কপি উদ্ধার করেন। আর এই ভাবেই রচিত হয় বিখ্যাত কবিতা কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি। আর এটিই হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা।

লেখকঃ সাবেক সাধারণ সম্পাদক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি ও পুলিশ কর্মকর্তা,
বাংলাদেশ পুলিশ।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
January 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!