আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম


নিউজ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৭ মার্চ, ২০১৯ ১২:৩৩ : অপরাহ্ণ 758 Views

জাতিগতভাবে বাংলাদেশের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবময় অধ্যায় হচ্ছে স্বাধীনতা লাভ। দীর্ঘ দিনের শোষণ বঞ্চনা আর পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয় বাংলাদেশ। এরপর ৯ মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয়। ১৯৭১ সালের শুরু থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও নয় মাসব্যাপী চলা স্বাধীনতা সংগ্রামের খবর গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দ্বারা রচিত ৭১ এর গণহত্যা নাড়া দিয়েছিলো বিশ্ব বিবেককে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে বিদেশি গণমাধ্যম। বিশেষ করে বিদেশি প্রিন্ট মিডিয়া তখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পাশে ছিল। এ ছাড়া বিদেশী সাংবাদিকরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ, নির্মমতা এবং বর্বরতার কাহিনী ছড়িয়ে দেন। এতে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপপ্রচারে বিশ্ববাসী বিশ্বাস করেনি। একাত্তরের ২৫ মার্চের গণহত্যার চিত্র যাতে বিশ্ববাসী জানতে না পারে, সে জন্য পাক হানাদার বাহিনী বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিংয়ের জন্য তাদের পরিকল্পনা সফল হয়নি। সাইমন ড্রিং–ই সর্বপ্রথম বিশ্ববাসীকে জানান, পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা হয়েছে। তিনি লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফে লিখেন, ‘ট্যাংকস ক্রাশ রিভোল্ট ইন ইস্ট পাকিস্তান’।
সিঙ্গাপুরের জাতীয় পত্রিকা দ্য নিউ নেশন বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের হত্যাকাণ্ডের খবর তুলে ধরে বলেছিলো, ‘পূর্ব পাকিস্তানে নৃশংস হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতেই হবে–অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বের পাণ্ডিত্যপূর্ণ ব্যাখ্যা শুনিয়ে বিশ্ব বিবেকের কণ্ঠ রোধ করা যাবে না।’ ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদকরা সবার আগে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে এসে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য প্রকাশ করে। এরপর যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত গণমাধ্যমের প্রতিবেদকরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ প্রকাশ করেছে।
বিশ্বের সর্বাধিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম বিবিসি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ প্রচার করে, ‘পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের হুলিয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সমর্থকরা এখনো যশোর, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা নিয়ন্ত্রণ করছে।’ এ ছাড়া অ্যান্থনি মাসকারেনহাস, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এর সিডনি শ্যানবাগ, ইতালির সাংবাদিক ওরিয়ানা ফেলাচি, ফরাসি সাংবাদিক বার্নার্ড হেনরি লেভিসহ আরও অনেক বিদেশি সাংবাদিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সরাসরি প্রত্যক্ষ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিখ্যাত ব্রিটিশ পত্রিকা লন্ডন টাইমস বলেছিলো, If blood is the price of independence then Bangladesh has paid the highest price in history” -London Times (1971). লন্ডন টাইমসের এই উক্তির মাধ্যমেই আসলে সহজেই অনুমেয় কি পরিমাণ আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশীয় গণমাধ্যমের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গণমাধ্যমের কারণে বিশ্ববাসী মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরেছে। এতে এক দিকে পাকিস্তানি বর্বরতা-নৃশংসতার প্রতি ঘৃণার উদ্রেক হয়েছে, অন্য দিকে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সহানুভূতি-সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস-মনোবল-শক্তি সঞ্চার করেছে; ফলশ্রুতিতে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হয়েছে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!