আজিজ মোহাম্মদ ভাই। সাধারনত মাফিয়া ডন বা গডফাদার দের ভাই ডাকে তাদের অনুগতরা। নামের সাথে ‘ভাই’ শব্দটি নিয়ে অনেকেই মনে করেন গডফাদার বলেই তাকে ভাই বলা হয়।
কিন্তু আজিজ মোহাম্মদের ভাইয়ের ‘ভাই’ তাদের বংশপদবী। তাঁদের পরিবারের সকলেরই নামের শেষে ভাই পদবী আছে। এই মাফিয়া ডন আজিজকে নিয়ে রয়েছে নানা মুখরোচক কাহিনী।
তবে তাকে নিয়ে এসব গল্পের বেশিরভাগই চলচ্চিত্র জগতের নারী ও হ’ত্যা কেন্দ্রিক। জানা গেছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাই একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী।
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
তিনি হ’ত্যা ও মা’দক পা’চারসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অ’পরাধে জড়িত ছিলেন বলে অ’ভিযোগ রয়েছে। ৫০টির মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন তিনি।
তিনি সার্ক চেম্বার অব কমার্সের আজীবন সদস্য। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানেরও মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
এছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসা। মা’দক ব্যাবসার সাথে তার জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
মুম্বাইয়ের ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ১৯৯৭ সালে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হ’ত্যা করার অ’ভিযোগ ওঠে তার বি’রুদ্ধে।
যদিও হ’ত্যাকাণ্ডের সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন আজিজ। কিন্তু সেটাকে আ’ত্মহত্যা বলেই প্রচার করা হয়। যদিও সালমান শাহের পরিবার ও তার ভক্তদের ধারণা এটা হ’ত্যাকান্ড।
শোনা যায় সালমান শাহ নি’হত হওয়ার আগে একটি পার্টিতে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে চুমু দেয় আজিজ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সকলের সামনে আজিজকে চড় মারে সালমান।
এটাকে মোটিভ হিসেবে ধরেন অনেকেই। যদিও হ’ত্যাকাণ্ডের সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন আজিজ। সালমান হ’ত্যাকান্ড নিয়ে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় আজিজকে।
কিন্তু কোন প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। সালমান শাহের মৃ’ত্যুর দুই বছর পর ১৯৯৯ সালে ঢাকা ক্লাবে খু’ন করা হয় আরেক চিত্র নায়ক সোহেল চৌধুরীকে।
সে সময় সোহেল চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিল ঢাকার ডিশ ব্যবসা। এই ব্যবসা নিজেদের ক’ব্জায় নিতে সোহেল চৌধুরীকে হ’ত্যা করা হয় বলে ধারণা।
এ হ’ত্যাকাণ্ডেও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবারের জ’ড়িত থাকার অ’ভিযোগ ওঠে। তবে বারবারই প্রমাণের অভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন আজিজ।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই দাবি করার সুযোগ পেয়েছেন তার বি’রুদ্ধে এসব অ’ভিযোগ ভিত্তিহী’ন, মিডিয়াই তাকে ডন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে বারবার।
২০০৭ সালে তাকে ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরির জন্য অ’ভিযুক্ত করা হয়। এই একই অ’পরাধে ২০১৩ সালে তার ভাতিজা আমিন হুদার ৭৯ বছরের জেল হয়েছে।
সম্প্রতি আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। তার স্ত্রী নওরিন মোহাম্মদ ভাই দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। আরো আছে ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে।
থাইল্যান্ডে গেলে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের অনেকেই আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের আতিথেয়তা পান। তার মতো সালমানের স্ত্রী সামিরারও থাইল্যান্ড এ বসবাস স’ন্দেহকে বাড়িয়েই দেয়।
সেই ঘটনা আবার তুমুল আলোচনার ঝড় তুলে সালমানের বিউটিশিয়ান যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী রাবেয়া সুলতানা রুবির ফেসবুকে তুলে ধরা এক ভিডিওবার্তায়।
দেশের বিজ্ঞাপন জগতে গ্লামার আনতেও তার ভূমিকা ছিল। নিজের প্রতিষ্ঠান অলিম্পিক ব্যাটারির ‘আলো আলো বেশি আলো’ বিজ্ঞাপনে মিতা নূরের ঝলমলে উপস্থিতি তখন বেশ নজর কেড়েছিল।
প্রসেনজিৎ ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই এরশাদের আমলে একবার তিনি গ্রে’ফতার হন। প্রচলিত আছে এক নারী নিয়ে দ’ন্দ্বের কারনেই এরশাদ তাকে গ্রে’ফতার করিয়েছিলেন।
এরশাদ এক নারীকে পছন্দ করেন, একই নারীর প্রতি আকাঙ্খা ছিল আজিজের। অবশ্য দ্রুতই প্রিন্স আব্দুল করিম আগা খানের সুপারিশে মুক্তি পান আজিজ মোহাম্মদ ভাই। চলচ্চিত্র নায়িকা সহ বিভিন্ন নারীর সাথে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এর সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প ছড়াতে থাকে।
২০১২ সালে মা’দক ব্যবসার অ’পরাধে আজিজের ভাতিজা, ইয়াবা সম্রাট বলে খ্যাত আমিন হুদার ৭৯ বছরের জেল হয়েছে। এদিকে, আজ রোববার (২৭ অক্টোবর) বিকেল থেকে গুলশানে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় অ’ভিযান চালাচ্ছে মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
অ’ভিযানে বিপুল ম’দ ও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। আটক করা হয়েছে বাড়ির দুই তত্ত্বাবধায়ককে। তবে তিনি বাসায় ছিলেন না। উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পরিবার ভারতের গুজরাট থেকে বাংলাদেশে আসে।
তাদের পরিবার মূলত পারস্য বংশোদ্ভূত। তারা ‘বাহাইয়ান’ সম্প্রদায়ের লোক। ‘বাহাইয়ান’কে সংক্ষেপে ‘বাহাই’ বলা হয়। উপমহাদেশের উচ্চারণে এই ‘বাহাই’ পরবর্তীতে ‘ভাই’ হয়ে যায়। ধনাঢ্য এই পরিবার পুরান ঢাকায় বসবাস শুরু করে।১৯৬২ সালে আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের জন্ম হয় আরমানিটোলায়।