বিনোদন ডেস্কঃ-দেশীয় চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহ আত্মহত্যা করেননি,তাকে খুন করা হয়েছে-দাবি করে অনলাইনে ভিডিওবার্তা প্রকাশ করে আলোচনায় আসা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাবেয়া সুলতানা রুবির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনস (পিবিআই)।
রুবি পেশায় ছিলেন বিউটিশিয়ান, তিনি সালমান শাহ’র রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার ৭ নম্বর আসামি। সোমবার তার প্রকাশিত ভাইরাল হয়ে পড়া ভিডিওবার্তার তথ্যকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করে পিবিআই।
পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘রুবি ছিলেন সালমান শাহ’র বিউটিশিয়ান। সম্প্রতি তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। রুবির সঙ্গে আমরাও যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কিন্তু তিনি দেশে নেই। এ কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিনি যে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন তা বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করে দেখা হবে।’
আলোচিত এ মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সালমান শাহ হত্যা মামলাটি কয়েক পর্যায়ে তদন্ত হয়েছে। বর্তমানে এটি পিবিআই তদন্ত করছে। অনেক আলামতও নষ্ট হয়েছে। যে কারণে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।’
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহর। রহস্যজনক এ মৃত্যুর ঘটনায় সে সময় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এরপর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।
২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহের মা নীলুফার চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।
পরে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলুফার চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন।
নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। আদালত নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যা ব) তদন্তভার প্রদান করেন।
মামলাটিতে র্যাাবকে তদন্ত দেয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ-৬ এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র্যা ব মামলাটি আর তদন্ত করতে পারবে না বলে আদেশ দেন। ঘটনার ২০ বছর পর আলোচিত ওই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় পিবিআইকে।
ভিডিওবার্তায় যা বলেছেন রুবি
রুবি দাবি করেছেন, সালমান শাহকে খুনে জড়িত ছিলেন তার স্বামী যিনি চীনা নাগরিক চ্যান লিং চ্যান ওরফে জন চ্যান নামে বাংলাদেশে পরিচিত। ধানমন্ডির সাংহাই রেস্টুরেন্টের মালিক তিনি। চীনাদের দিয়ে এই খুন করানো হয়। এতে জড়িত ছিলেন সালমান শাহের স্ত্রী সামিরার পরিবারও। এই খুনের বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানেন। বিষয়টি যেভাবেই হোক, আবার যেন তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। তিনি যেভাবেই পারেন আদালতে সাক্ষী দেবেন।
রুবির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সালমান শাহ’র মায়ের মন্তব্য
রুবির বক্তব্য দেখে এক ফেসবুক পোস্টে সালমান শাহ’র মা রাবেয়া সুলতানা বলেছেন, ‘প্রিয় দেশবাসী। আমাকে সাহায্য করুন। দেখুন, রুবি সুলতানার স্বীকারোক্তি। কীভাবে সালমানকে হত্যা করা হয়েছে। যেভাবে পারেন এফবিআইকে জানান, বাংলাদেশের সকল চ্যানেলকে অনুরোধ করছি রুবির স্বীকারোক্তিটা চালিয়ে দেন। প্রিয়জন, খেয়াল রাখবেন এই নিউজের পর অনেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে। শান্তভাবে কাজ করবে।’
তিনি সালমানের স্ত্রী সামিরা ও তার পরিবার যেনো দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে সে দিকেও নজর দিতেও অন