রহস্যজনক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত সুয়ালকের ছেনোয়ারার স্বামী কথিত পল্লী চিকিৎসক ওয়াসিম নিজের স্ত্রী কে দাফনের ৪৮ ঘন্টা পার না হতেই রবিবার সকালে স্ত্রীর মৃত্যু সনদের আবেদন পত্র নিয়ে সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার পর প্রত্যাখ্যাত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উ ক্য নু মার্মা।এবিষয়ে সিএইচটি টাইমস ডটকমকে তিনি বলেন,নিহত ছেনোয়ারার স্বামী জনৈক ওয়াসিম মৃত্যু সনদের কাগজে আমার সাক্ষর নিতে আসেন কিন্তু আমি তাকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছি ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আপনি আপনার স্ত্রীর মৃত্যু সনদ পাবেন না।আইনগতভাবে এটা দেয়ার সুযোগ নাই।পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় একটি মৃত্যু সনদ পেতে হলে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সুপারিশ নিতে হয়।এই সুপারিশটি নিহত নারীর নিজ এলাকার ইউপি সদস্য অথবা সংরক্ষিত নারী সদস্যের সুপারিশ নিয়ে আবেদন প্রক্রিয়াটি চেয়ারম্যান বরাবরে পাঠাতে হয়।প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় কোন ইউপি সদস্য মৃত্যু সনদ প্রাপ্তির আবেদন পত্রটিতে সুপারিশ করেছেন নাকি তিনিও প্রত্যাখ্যান করেছেন এটি জানা সম্ভব হয়নি।পরে রহস্যজনক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত নারীর এলাকার ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন ফোন করা হলে তিনি মোবাইল কলটি রিসিভ করেননি।এবিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ক্যমংহলা কে মোবাইল কল করা হলে মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।রহস্যজনক একটি ঘটনায় মৃত্যুবরণ কারী একজন নারীর দাফনের ৪৮ ঘন্টা পার না হতেই ইউপি চেয়ারম্যান এর শক্ত অবস্থানের কারণে মৃত্যু সনদটি ওয়াসিম নিতে পারেননি এবং সুয়ালক ইউপি চেয়ারম্যান এর দৃঢ় অবস্থানের খবরটি এলাকায় প্রশংসিত একটি সিদ্ধান্ত হিসেবে আলোচিত হয় বলে জানা যায়।এদিকে নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে কথিত এই পল্লী চিকিৎসক ওয়াসিম স্ত্রীর দাফনের ৪৮ ঘন্টা পার না হতেই ব্যাংকের একটি কাজে মৃত্যু সনদটির জন্য হন্য হয়ে চেষ্টা তদ্বির করছিলেন।উল্লেখ্য,বান্দরবান সদরের ৪নং সুয়ালক ইউনিয়নের কাইচতলি ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছেনুয়ারা (৩৫) এর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে বান্দরবানে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।বলা হচ্ছে গত বুধবার (৯ মার্চ) সকালে বান্দরবানের একজন সিনিয়র আইনজীবীর চেম্বারে ছেনুয়ারা তাঁর স্বামী পল্লী চিকিৎসক ওয়াসিমের সাথে ৪ বছর বয়সী সন্তানসহ ২০১৯ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে করা একটি মামলার আপোষনামা (নারী ও শিশু মামলা নম্বর ৬১/-২০১৯,ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১১ (ক)/৩০) তৈরির কাজে বান্দরবান আসেন।পরে কাজ শেষে তাঁরা মোটরসাইকেল যোগে সুয়ালকের কাইচতলির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।পথিমধ্যে রেইচা সেনা ক্যাম্প সংলগ্ন গ্রীন পিক রিসোর্টের সামনে তাদের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়।এতে ছেনুয়ারা গুরুতর আহত হয় এবং তাকে তাৎক্ষণিক নিকটবর্তী বান্দরবান সদর হাসপাতালে না এনে প্রথমে কেরানিহাট এর মা ও শিশু হাসপাতালে নেয়া হয়।কিন্তু গুরুতর আহত ছেনুয়ারার সাথে থাকা স্বামী ওয়াসিম নিজের পরিচয় নিয়ে লুকোচুরি করায় আহত নারীকে ভর্তি না নিয়ে চট্টগ্রাম নিয়ে যেতে পরামর্শ দেয়া হয়।পরে চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশ এলাকার সিএসটিসি নামক একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পর থেকে আইসিইউতে ভর্তি করা পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময় ছেনুয়ারার বাবা আবুল হোসেনসহ তার দুই খালার কাছে দুর্ঘটনা এবং চিকিৎসার পুরো বিষয়টি অন্ধকারে রাখা হয় বলে অভিযোগ তুলেন নিহত নারীর আত্মীয় স্বজনরা।বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সকালে মৃত নারীর পিতা আবুল হোসেনকে তাঁর মেয়ের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।পরে মৃত ছেনোয়ারার লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স চট্টগ্রাম থেকে রওনা হবার তথ্য জানায়।এ্যাম্বুলেন্স কাইচতলিতে পৌছার পর ছেনোয়ারার মা মৃত মমতাজ বেগমে বাড়িতে রাখা হয় এবং দাফন প্রক্রিয়া শুরু হয়।দাফন কার্যক্রম শুরুর পর ছেনোয়ারার হাসপাতালের রিপোর্ট দেখতে গিয়ে তাঁর লাশের ডেথ সার্টিফিকেট কোথায় এই প্রশ্ন তোলা হলে অভিযুক্ত ওয়াসিম সদুত্তর দিতে না পারায় ছেনোয়ারার খালা কাজী নিরুতাজ বেগম এবং তাঁর খালাতো ভাই শহিদুল আলম বাবু এই মৃত্যু নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রশ্ন তুলে দাফন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন।পরে বান্দরবান সদর থানা পুলিশ বান্দরবান সদর হাসপাতালে লাশ নিয়ে আসেন এবং সুরতহাল ও ময়না তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করে শুক্রবার বাদ জুমা জানাজা শেষে ছেনোয়ারার দাফন সম্পন্ন করা হয়।এদিকে সিএইচটি টাইমস ডটকম এর নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখা যায় মৃত ছেনোয়ারার হাসপাতাল বিলে ইংরেজিতে Status শব্দের বিপরীতে একই ভাষায় Alive শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে।অর্থাৎ অবস্থা হিসেবে তাকে জীবিত উল্লেখ করা হয়েছে।যেকারনে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে মৃত সেনোয়ারা কবে-কখন-কোথায় মারা গেলেন।হাসপাতালের বিলটি নিচে সংযুক্ত করা হলো।