বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের সম্ভবনা থাকে প্রায় পাহাড়ি অঞ্চলে।প্রতি বর্ষায় পাহাড় ধসের মৃত্যুর খবর আসে কোন না কোন পাহাড়ি অঞ্চল থেকে।এছাড়া অবিরাম বর্ষণে বৃষ্টির পানির স্রোতে কিছু পাহাড়ি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হয়ে উঠে চলাচলের অনুপযোগী।এবারও গত ১৫ থেকে ১৮ জুন টানা ৩ দিনের ভারি বর্ষণে বান্দরবানে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধ্বসের সম্ভবনা।
শনিবার (১৮ জুন) জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি এর নির্দেশে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখায় একটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।জেলা প্রশাসনের সংস্থাপন শাখা এর একটি অফিস আদেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার বিশ্বাস এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো.ছাইফুল্লাহ মজুমদার কে এই কন্ট্রোল রুমের সার্বিক দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।রাতদিন ২৪ ঘন্টা জেলা প্রশাসনের ১৪ জন কর্মী এই কন্ট্রোল রুমে দায়িত্ব পালন করবেন এবং যেকোনও দুর্যোগ এর খবর পাওয়া মাত্র দায়িত্বশীল কর্মীরা যাতে সার্বিক দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে অবহিত করে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে অনুরোধ করে মাইকিং করেছে বান্দরবান পৌরসভা।মেয়র মো.বেবি ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে নয়টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবাইল নাম্বার উল্লেখ করে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর নাম লিখে দেয়া হয়েছে।
বান্দরবান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মন্ডল জানান, গত ১৫ জুন ৪৩,১৬ জুন ২৪,১৭ জুন ১৮,১৮ জুন সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩৫ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।এছাড়া আগামীকালও ভারি বৃষ্টি পাতের সম্ভবনা রয়েছে।অতি বৃষ্টির কারনে পাহাড় ধসের সম্ভবনাও রয়েছে।
বান্দরবানের মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো.মাহাবুবুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত পরিমানে পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ে মাটির ওপরের রক্ষাস্তর সরে গিয়ে ভেতরের নরম অংশ বেরিয়ে আসে।এর ফলে ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয়।এ অবস্থায় বর্ষার ভারী বর্ষণে পাহাড়ের ফাটলে পানি ঢুকে পাহাড় ধস হয়।এ ছাড়া পাহাড় ধসের অন্যতম কারন হচ্ছে ভূমিকম্প,নির্বিচারে বৃক্ষনিধন এবং অতিবৃষ্টি অন্যতম।
ধারণা করা হচ্ছে জেলার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে অন্তত ৩০ হাজারেরও অধিক পরিবার।স্থানীয়দের মতে,উন্নয়নের নামে শুষ্ক মৌসুমে নির্বিচারে পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণ,ইমারত নির্মাণ, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ,সড়কে মাটি দেওয়া,নিন্মাঞ্চল ভরাটসহ অপরিকল্পিতভাবে ঝুঁকি নিয়ে গড়ে তোলা হয় বসতঘর।ফলে মাটির রক্ষাস্তর নষ্ট হয়ে বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে ধসে পড়ে সে পাহাড়।এতে পাহাড়ের মাটি চাপা পড়ে ঘটে প্রাণহানির ঘটনা।
তথ্য অফিস সুত্রে জানায়ায়,গত ৫ বছরে বান্দরবানে পাহাড় ধ্বসে ২১ জন নিহত হন।তৎমধ্যে ২০১৭ সালের ১৩ জুন সদরের কালাঘাটায় ৭,রুমা সড়কে ২৩ জুলাই ৫, ২০১৮ সালের ৩ জুলাই কালাঘাটায় ১ ও লামায় ৩, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই লামাতে ১,২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর আলীকদমের মিরিঞ্জা এলাকায় ১ ও ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাইঙ্গ্যা ঝিরিতে একই পরিবারের ৩ জন।
এবিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কায়েসুর রহমান বলেন,দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা সকল বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে অত্র এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।এছাড়াও চলতি বছরে সর্বশেষ তথ্য পাওয়া পর্যন্ত জেলায় পাহাড় ধসে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।তবে জেলা প্রশাসন এই ধরনের সকল দুর্ঘটনা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় জেলা জুড়ে পর্যবেক্ষণ করছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে তৎপর রয়েছে।
বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরোজ সিএইচটি টাইমস ডটকমকে বলেন,জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় এর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে।ইউনিয়ন পরিষদ গুলোর দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদেরও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।পাদদেশে বসবসরত ঝুঁকিপূর্ন এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে কাজ করছে সদর উপজেলা প্রশাসন।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন,দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ে ঝুঁকিপুর্ণ বসবাস কারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেও ঝুঁকিপূর্ন এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের তাগাদা দেয়া হয়েছে।এছাড়া সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে,যাতে দূর্যোগকালীণ সময়ে মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।
এদিকে জেলার অন্য উপজেলা গুলোতেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নেতৃত্বে দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যপক প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন এমনটাই জানিয়েছে বেশ কয়েকটি উপজেলার নির্ভরযোগ্য সুত্র।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.