বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।গতকাল রবিবার (১৪ জুলাই) দিবাগত রাত ১১ টার পর থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করে।রবিবার বিকাল থেকে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় সাংগু নদীর পানি প্রবলবেগে কমতে শুরু করে যদিও এখনও পর্যন্ত নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।পানি কমায় লোকজন বাড়িঘরে ফিরে ধোঁয়া মুছার কাজ শুরু করেছে।বান্দরবান সদরের পৌর এলাকার বাসস্টেশন,আর্মি পাড়া,শেরেবাংলা নগর,বনবিভাগ কোয়ার্টার,ওয়াব্দা ব্রীজ,বনানী সমিল,ইসলামপুর,বালাঘাটার পুলপাড়া,নোয়া পাড়া,উজানী পাড়া,মেম্বারপাড়াসহ আশপাশের নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি নামতে শুরু করায় জনজীবনে স্বস্তি নেমে আসার সাথে সাথে দুর্ভোগও বাড়ছে।বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ঘরবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে জমে থাকা কাদা-মাটি,ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে বন্যার্তরা।পরিস্কার এবং বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে।ময়লা-আবর্জনা এবং কাদা-মাটি থেকে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পরছে বন্যায় প্লাবিত এলাকাগুলোতে।ফলে ডায়রিয়া,সর্দি-কাশি’সহ পানিবাহিত নানা ধরণের রোগ ছড়িয়ে পরার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।ইতিমধ্যে পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের ৪১টি মেডিক্যাল টিম কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।যেকোনও সময় দেখা দিতে পারে তীব্র স্বাস্থ্য সংকট।জেলা শহরের অভ্যন্তরীণ সড়ক গুলোতে প্রচুর কাদামাটির কারণে তাদের জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটছে।ঝুঁকি থাকায় জেলা ও উপজেলা গুলোর বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।জেলা সদরের পাশাপাশি লামা,থানচি,আলীকদম উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে।টানা বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলে আতঙ্কিত অনেক পরিবার নিরাপদে অবস্থানের জন্য এখনও আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে অবস্থান করছে।বান্দরবান সেনা রিজিয়ন,জেলা প্রশাসন,পৌরসভা, রেডক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত পরিবার গুলোর মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।বান্দরবান পৌরসভা মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী বলেন,বান্দরবান সদরের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১০ হাজার বন্যার্ত নাগরিক অবস্থান করছে।বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় এবং বান্দরবান পৌরসভার ব্যাবস্থাপনায় এসব নাগরিকদের প্রতিবেলা রান্না করা খাবার বিতরণের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি,শুকনো খাবার,পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেট সহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে।এসময় তিনি বলেন,পৌরশহরের কর্দমাক্ত রাস্তা গুলো পরিষ্কার করার জন্য পৌরসভার নিজস্ব পরিচ্ছন্ন কর্মীরা খুব দ্রুত তৎপরতা শুরু করবে,তাদেরকে সেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বান্দরবান-চট্টগ্রাম ও বান্দরবান-রাঙামাটি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।এছাড়াও বান্দরবান-রুমা-থানচি সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধ্বসে পড়ায় অভ্যন্তরীণ উক্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।গত ৬ জুলাই শনিবার থেকে একটানা বর্ষনে বান্দরবান-কেরানিহাটের বড়দুয়ারা নামক স্থানে সড়কে পানি উঠায় এক সপ্তাহের বেশি সময় যাবৎ বান্দরবানের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।আর এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বান্দরবান-চট্টগ্রাম,বান্দরবান-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত চলাচলকারী বিভিন্ন শ্রেণী পেশার জনসাধারণ ও বান্দরবানের স্থানীয় বাসিন্দারা।অতি জরুরী কারণে এই পথে চলাচলকারীরা ৫ থেকে ৬ গুন ভাড়া বেশি দিয়ে ভেঙে ভেঙে চলাচল করছে।এবিষয়ে বান্দরবান বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দাশ ঝন্টু বলেন,প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর কারনে যোগাযোগ ব্যাবস্থা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।তবে গতকাল রবিবার (১৩ জুলাই) বিকেল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় আজকে বা কালকের মধ্যে রাস্তায় জমে থাকা পানি কমে গেলে পূর্বের সিডিউল অনুযায়ী নিয়মিত বাস গুলো যাত্রী সেবায় নিয়োজিত হবে।লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন,পাহাড়ী ঢল ও ভারী বর্ষনে লামা পৌর এলাকার ৬০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় শতশত পরিবার নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে অবস্থান করছে।লামা পৌরসভা ও লামা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সার্বক্ষণিক সাহায্য সহযোগিতা ও বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।আলীকদম-লামা-চকরিয়া সড়কের বিভিন্ন জায়গা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।শনিবার (১৩ জুলাই) দিবাগত রাতে লামার মধুঝিরিতে পাহাড়ের মাটি চাপায় নুরজাহান বেগম (৬৫) নামে একজন বৃদ্ধা নিহত হবার পর গতকাল রবিবার (১৪ জুলাই) চিম্বুকে আরও একজন জুমচাষী মাটি চাপায় নিহত হয়েছেন।স্থানীয়রা জানান চিম্বুকের পোড়াপাড়া এলাকায় বাগানে কাজ করতে গেলে মেন পং ম্রু (২৫) এর উপর পাহাড়ের মাটি ধ্বসে পরে যার ফলে ঘটনাস্থলেই মেন পং ম্রু নিহত হয়েছেন।এদিকে গত শনিবার (১৩ জুলাই) বান্দরবান সদরের মনজয় পাড়া এলাকার পাহাড়ী ঝিরি পার হতে গিয়ে প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়া অং সিং নু মারমা (৩৫) এর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।শনিবার সকালে পাড়ার কাছের পাহাড়ী ঝিরি পার হতে গিয়ে তিনি এই দুর্ঘটনায় পতিত হন।এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত গত সাত দিনে বান্দরবান জেলায় পাহাড় ধ্বসে দুই জন এবং ঝিরির পানির স্রোতে ভেসে যাওয়া একজন সহ সর্বমোট তিনজন নিহত হলো।বান্দরবান জেলা প্রশাসনের কঠোর নির্দেশনা এবং উপজেলা প্রশাসনগুলোর ব্যপক তৎপরতার কারণে সমগ্র বান্দরবান জেলায় বড় ধরনের আর কোনও দুর্ঘটনার ঘটেনি।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.