টানা নয়দিনের প্রবল বর্ষনের কারনে বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বান্দরবান জেলা সদরের আর্মি পাড়া,ইসলামপুর,বাসস্টেশন,বনানী সমিল, শেরেবাংলা নগর,উজানিপাড়া একাংশ,হাফেজ ঘোনা,বালাঘাটা,কালাঘাটা সহ বিস্তীর্ণ পৌর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।গতকাল শুক্রবার (১২ জুলাই) বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় বন্যার পানি কমে গেলেও আজ শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টির কারনে ফের পানি বাড়তে শুরু করে।নিমিষেই বন্যার পানিতে ডুবে গেছে বান্দরবান জেলার পুলিশ সুপারের বাসভবন,সদর উপজেলা কার্যালয়, উপজেলা ডরমেটরি,সরকারী কলেজের নিচ তলা,জেলা পশু সম্পদ কার্যালয়,বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ,ফায়ার সার্ভিস,বান্দরবান বন বিভাগ,বান্দরবান ব্রিগেড,জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারী স্থাপনা।বেসামরিক জনসাধারণের শতশত ঘরবাড়ি এখন বন্যার পানির নিচে।আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে তীল ধারনের ঠাঁই নেই।প্রবল বর্ষনে হিলটন,হিলভিউ'র মতো আবাসিক হোটেলও পানির নিচে তলিয়ে গেছে।জেলা শহরের প্রানকেন্দ্র বাসস্টেশন এলাকায় অবস্থিত দুটি প্রেট্রোল পাম্প এখন দশ থেকে পনেরো ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।প্রবল বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন নিচু এলাকায় পানি জমে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে শতশত পরিবার,আর বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে এদের অনেকেই।এবারের এই বন্যা ১৯৯৭ সালের ভয়াবহ বন্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে এমন আশংকায় মানসিকভাবে ভেঙে পরেছে বান্দরবান পৌর শহরের বাসিন্দারা।বিপর্যস্ত জনসাধারণের দুচোখে ভাসছে শুধু পানি আর পানি।এতে তাঁরা একপ্রকার হতবিহবল হয়ে পড়েছে।এদিকে বান্দরবান কেরাণীহাট সড়কের বাজালিয়ার বড়দুয়ারা এলাকায় সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারনে গত ৬ জুলাই শনিবার থেকে টানা বৃষ্টি তে ৫ থেকে ৬ দিন যাবৎ বান্দরবানের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ আছে।জেলা সদরের সাথে সাত উপজেলার যোগাযোগ ব্যাবস্থাও কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জরুরী প্রয়োজনে এই সড়কে চলাফেরা করার বাহন হিসেবে পথচারীরা ব্যবহার করছে নৌকা,রিক্সা, কলার ভ্যালা আর ভ্যান গাড়ি।শৈলশোভা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন এর কার্যকরী সভাপতি অমল কান্তি দাশ জানিয়েছেন,বান্দরবান কেরানিহাট সড়কের বাজালিয়ায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।সড়ক থেকে পানি নামলেই সরাসরি বাস চলাচল পুনরায় চালু হবে।সমগ্র বান্দরবান জেলায় বন্যাদুর্গতদের জন্য ১৩৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।আশ্রয় কেন্দ্রলোতে জেলা প্রশাসন,পৌরসভা ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।বন্যার কারনে বহু ঘরবাড়ি বিধস্ত হওয়ার পাশাপাশি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় দফায় দফায় বৃদ্ধি পাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের দাম।শহরের বেশিরভাগ ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্য সংকট দেখা দিতে পারে যেকোনও সময়।এককথায় বলতে গেলে বান্দরবান জেলায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নারী ও শিশুদের।অবিরাম বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুহীন হয়ে পড়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান আর সাথে সাথে মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগ দুর্বল হওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যাবস্থা।বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মোঃদাউদুল ইসলাম জানিয়েছেন,জেলার বন্যাদূর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে ৪৫০ মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য ও নগদ সাত লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।পর্যাপ্ত পরিমাণ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।এছাড়াও জরুরী নিয়ন্ত্রন কক্ষের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক দুর্যোগ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।জেলা শহর এবং উপজেলাগুলো তে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনসাধারনকে উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসার জন্য।উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা যাতে সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি নজরে রাখে সেবিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মোঃইসলাম বেবী জানিয়েছেন,শহরের বন্যা কবলিত এলাকার ৩ হাজার মানুষকে প্রতি বেলা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।মানবিক সংকট মোকাবেলায় বান্দরবান পৌরসভা সবরকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।এসময় তিনি আরও বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী মাননীয় সাংসদ বীর বাহাদুর উশৈসিং এম,পি বান্দরবান জেলার সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতি মুহুর্তে খোঁজ খবর নিচ্ছেন।আশ্রয় কেন্দ্রে আগত লোকজনের থাকা,খাওয়া ও স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে বলেছেন।এসময় পার্বত্য মন্ত্রী বন্যা দুর্গতদের জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্য নিয়ে সার্বক্ষণিক দুর্গতদের পাশে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.