সিএইচটি নিউজ ডেস্কঃ-ইয়াবা কারবারে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে বান্দরবানের আশরাফ আলী। গত ৪ মে ভোরে নগরীর হালিশহর এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে ৪৫ কোটি টাকা মূল্যের ১৩ লাখ পিস ইয়াবাসহ আশরাফ ও তার ভাই হাসানকে গ্রেফতারের পর ইয়াবা পাচার ও ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ।আশরাফ ও হাসান বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার গিলাতলী এলাকার মৃত তৈয়বের ছেলে।
৯ বছর সৌদি আরবে থেকে ভাগ্য ফেরাতে না পেরে দেশে ফিরে আসে আশরাফ।এসে মাত্র এক বছরে ইয়াবা ব্যবসার বদৌলতে পাল্টে ফেলে জীবন। আর বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম শহরে এসে কিনে ফেলে প্লট,ফ্ল্যাট ও বিলাসবহুল প্রাইভেট কার।আশরাফের রাতারাতি এমন বদলে যাওয়ার চিত্র দেখে হতবাক স্থানীয়রাও।পুলিশ জানায়,গ্রেফতারের পর আশরাফ নৌপথে ইয়াবা খালাস ও পাচারের ধরন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।তথ্য দিয়েছে ইয়াবা খালাসের নতুন ঘাট ও পাচারের ধরন সম্পর্কে।
ইয়াবা পাচারের নতুন ধরন ও খালাসের ঘাটঃ-আশরাফ পুলিশকে জানিয়েছে,সড়কপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ির ফলে ইয়াবার সব বড় চালান খালাস হয় এখন নৌপথে। নৌপথেও কোস্টগার্ড ও র্যাবের অভিযান জোরদার করার পর পাল্টে গেছে পাচারের ধরন।ফিশিং বোটের নিচে বেঁধে বিশেষ কায়দায় এসব ইয়াবা মিয়ানমার থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসা হয় দেশে।সাগর পথে আনা এসব ইয়াবার চালান খালাস করা হয় সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারির জেলেপাড়া ঘাটে।সর্বশেষ পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হওয়া ১৩ লাখ পিস ইয়াবাও একই কায়দায় দেশে এনেছে আশরাফ। হালিশহর এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে আশরাফ আলী ও তার ভাই হাসানকে ইয়াবাসহ গ্রেফতারের পর তারা পুলিশকে এসব তথ্য দেয়।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (পশ্চিম) মইনুল ইসলাম জানান,অভিযানে উদ্ধারকৃত ইয়াবা মিয়ানমার থেকে আশরাফ সাগরপথে অভিনব কৌশলে চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছিল।কোস্টগার্ড ও র্যাবের চোখ ফাঁকি দিতে ফিশিং ট্রলারের নিচে বেঁধে পানিতে ছেড়ে দিয়ে বিশেষ কায়দায় চট্টগ্রামে আনা হয় এসব ইয়াবা। ট্রলারের নিচে পানির সঙ্গে বাঁধার আগে ইয়াবাগুলো পাস্টিকের ছোট ছোট প্যাকেট ভর্তি করা হয়।এরপর ইয়াবার প্যাকেটগুলো কার্টন ভর্তি করা হয়।পরে ৭-৮ স্তরের বায়ুনিরোধক র্যাপিং দিয়ে মোড়ানো হয়। প্রতিটি কার্টন প্রায় ৪০টি পলিথিনে মুড়িয়ে সেগুলো রশিতে বেঁধে ট্রলার থেকে ফেলা হয় পানিতে।
পানির নিচ দিয়েই সেগুলো নিয়ে আসা হয়। আগে ট্রলারের ভেতর বিভিন্ন গোপন কুঠুরি বানিয়ে ইয়াবা আনত পাচারকারীরা। এ ধরনের বেশ কয়েকটি বড় চালান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর কৌশল পাল্টেছে তারা।পুলিশ জানায়, সাগরপথে ভাটিয়ারির জেলেঘাটে ইয়াবার চালান খালাস হওয়ার বিষয়টি এতদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জানা ছিল না।গ্রেফতার আশরাফ আলীই ইয়াবার নতুন ঘাট সম্পর্কে এ তথ্য দিয়েছে। এখন থেকে বিষয়টি নজরদারিতে আনা হবে।তবে কোস্টগার্ড পূর্ব জোন কর্মকর্তাদের দাবি- ফিশিং ট্রলারের নিচে পানির ভেতরে করে ইয়াবা আনার বিষয়টি সম্পূর্ণ নতুন।এমন কায়দায় ইয়াবা আনার বিষয়টি আগে কখনও কোস্টগার্ডের অভিযানে ধরা পড়েনি। যেহেতু পুলিশের হাতে গ্রেফতার দু’জনের বক্তব্যে এমন তথ্য উঠে এসেছে তাই এখন থেকে নজরদারিও বাড়ানো হবে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান জানান,এক সময় নৌপথে মিয়ানমার থেকে আনা ইয়াবা ফিশারি ঘাট,চাকতাই কিংবা পতেঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে খালাস হওয়ার তথ্য থাকলেও সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি জেলেপাড়া ঘাট দিয়ে ইয়াবা খালাসের ঘটনা এটাই প্রথম।
ইয়াবা ব্যবসায় কোটিপতি আশরাফঃ-নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো.কামরুজ্জামান আরও জানান,আশরাফ আলী ইয়াবা ব্যবসার টাকা দিয়ে নগরীর বাকলিয়া এলাকায় ৫ কাঠা জমি এবং সদরঘাট আইস ফ্যাক্টরি রোডে একটি বহুতল ভবনে ফ্ল্যাট বাসা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।এ ছাড়া তার চট্টমেট্রো-গ-১১-৫৯২৪ নম্বরের প্রাইভেট কার রয়েছে।যেটি থেকে ৯ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।এ ছাড়া ইয়াবার টাকায় কেনা তার নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তি থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আশরাফ আলী ও তার ভাই হাসানকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।তিনি বলেন, আশরাফ আলী ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবে ছিল। চাকরির সন্ধানে পরিবারে সচ্ছলতা ফেরানোর আশা নিয়ে সৌদি আরবে গেলেও সেখানে তেমন উন্নতি করতে পারেনি।সৌদি আরবে থাকাকালীন মিয়ানমারের নাগরিক আবদুর রহিমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আবদুর রহিম পরে স্বদেশি শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী লা-মিমের সঙ্গে আশরাফকে পরিচয় করিয়ে দেয়।গত বছরের ৭ অক্টোবর আশরাফ আলী সৌদি আরব থেকে দেশে আসে।এরপর মিয়ানমারের নাগরিক আবদুর রহিম ও লা-মিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে নৌপথে কৌশলে দফায় দফায় ইয়াবা নিয়ে আসে।(((যুগান্তর)))।