বান্দরবান এর জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেছেন অনাবাদি জমি আবাদ করতে হবে,আবাদ যোগ্য জমি এক ইঞ্চিও খালি রাখা যাবেনা।সারা বছর খাদ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে।কৃষক খাদ্য উৎপাদনে কৃষিবিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে যত অবস্থান করবেন কৃষক খাদ্য উৎপাদনে ততো সফল হবেন বলে উল্লেখ করেন।২৭ নভেম্বর (রবিবার) বান্দরবান সদর ইউনিয়নের ধুমকি পাড়ায় কৃষক মংহাই নু মারমা’র জমিতে ধান কর্তন যন্ত্রের উপর কৃষক মাঠ দিবস এবং এলাকাবাসীর মধ্যে কম্বল ও সার বীজ বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত কৃষক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি চিম্বুক পাহাড়ের তোয়ো ম্রো এবছর বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পেয়েছেন উল্লেখ করে আরও বলেন,এই এলাকার কৃষকেরা খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহ পেয়েছেন।তোয়ো ম্রো এর মতো অন্যান্য কৃষকদেরও ফসল-খাদ্য উৎপাদনে অগ্রনী ভূমিকা রাখার আহবান জানান তিনি।কৃষকদের নানা সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয় তুলে ধরে জেলা প্রশাসক আরও বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষকদের নানাভাবে প্রনোদনা দিয়ে কৃষকদের পাশে আছেন।সরকার কৃষি ক্ষেত্র সফল ব্যক্তিদের উৎসাহিত করার জন্যই “এগ্রিকালচার ইম্পর্টেন্ট পারসন” নামক একটি বিশেষ মর্যাদা চালু করতে যাচ্ছে।এসময় জেলা প্রশাসক নমুনা শস্য কর্তনের অংশ হিসেবে নিজেও শস্য (ধান) কর্তন করেন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর কর্মকর্তারা শস্য কর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জেলা প্রশাসক কে অবহিত করেন।কৃষক মংহাই নু মারমা জানান,৮০ শতক পাকা ধান শ্রমিক দিয়ে কাটলে আড়াই হাজার টাকা লাগে কিন্তু এই ধানকাটার মেশিন দিয়ে ধান কাটলে খরচ পড়ে মাত্র পাঁচ শত টাকা।সিমিট বাংলাদেশ কোম্পানীর ম্যানেজার হিরা লাল নাথ জানান,সময় ও অর্থ বাচাঁনোর জন্য ধান কাটার মেশিনটি কৃষকের জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী।এই ধান কাটা মেশিনের মূল্যে এক লক্ষ পচানব্বই হাজার টাকা। কোনও কৃষক কিনতে চাইলে জেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে আবেদন করলে অর্ধেক মূল্যে কিনতে পারবে।এই মেশিন দিয়ে প্রতি ঘন্টায় আশি শতক জমির ধান কাটা যাবে।উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লিটন কান্তি দাশ জানান,ব্রিধান ৪৯ খুব ভালো ফলন হয়েছে।অন্যান্য ধান যেখানে কানি প্রতি সর্বোচ্চ ষাট আড়ি ধান উৎপাদন হয় সেখানে ব্রি-৪৯ ধান কানি হিসেবে একশ আড়ি ধান উৎপাদন হয়েছে।২০ বর্গমিটার এর জমিতে উৎপাদন ফলন ১৫.৩ এক কেজি।আদ্রতা ২৯.৭ পার্সেন্ট,হেক্টর প্রতি ফলন ৬.২৩ মেট্রিকটন ধান (ছয় দশমিক দুইতিন মেট্রিকটন)।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুত্রে জানা যায়,চলতি বছর বান্দরবান জেলায় সাত উপজেলায় এগার হাজার দুইশত আটান্ন হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়।
খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্য এবং অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনতে বান্দরবান জেলার সদর উপজেলার গোয়ালিয়াখোলা এলাকার কৃষকদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে আয়োজিত কৃষক মাঠ দিবস এর আয়োজন টি যেনো ধান কাটার উৎসবে পরিণত হয়।
একই অনুষ্ঠানে ধান কাটার পরপরই যাতে কৃষক তাদের জমিতে সরিষা/ভুট্টা/সূর্যমুখী/সবজি চাষ করতে পারে সে লক্ষ্যে নিয়ে উন্নত প্রজাতির বীজ বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়।এছাড়াও জৈব সার তৈরির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়।উল্লেখ্য যে,কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার বিনামূল্যে প্রনোদনা হিসেবে সার এবং ভুট্টা,সরিষা ও সূর্যমুখীর বীজ কৃষককে উপহার দিচ্ছেন।বান্দরবান কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.রফিকুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্টানে জেলা পরিষদ সদস্য ক্য সা প্রু মারমা,নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার বিশ্বাস,সিমিট বাংলাদেশের ম্যানেজার হিরা লাল নাথ,বান্দরবান সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অংচাহ্লা মারমা উপস্থিত ছিলেন।এছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর কর্মকর্তা,সাংবাদিকবৃন্দ, স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসী এসময় উপস্থিত ছিলেন।এদিকে অনুষ্ঠান শেষে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি রোয়াজা পাড়া ও জিনিয়ং পাড়া পরিদর্শন করেন।এসময় ৭০ টি কম্বল পাড়াবাসীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বিতরণ করেন।এসময় তিনি পাড়া বাসীর সাথে কথা বলেন।