বান্দরবানের রুমা,রোয়াংছড়ি ও থানচিসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে গাড়িতে ও নৌযোগে আসছে সারি সারি ফুলঝাড়ু।গাড়ি থেকে এসব ফুলঝাড়ুগুলো সারি সারি করে নামিয়ে রাখা হচ্ছে বান্দরবান বাজারে।পাহাড়ের উৎপাদিত এসব ফুলের ঝাড়ুর চাহিদা রয়েছে সারাদেশ জুড়ে।এসব ফুলের ঝাড়ু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।ফুলের ঝাড়ু পরিবহনে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন বান্দরবানের স্থানীয় শ্রমিক হাশেম।তিনি জানান, প্রতিবছরই তিনি এই মৌসুমে ফুলের ঝাড়ু পরিবহনে কাজ করেন।দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে পাইকার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ফুলের ঝাড়ু ট্রাক থেকে নামান,পরে বেপারিরা কিনলে তা অন্য ট্রাকে উঠানোর কাজে সহযোগিতা করেন তিনি।
এভাবে প্রায় প্রতিদিনই কাজ করছেন হাশেম।তবে রবিবার ও বুধবার বান্দরবানের সপ্তাহিক বাজারের হাটে তার ব্যস্ততা থাকে একটু বেশি। ওই সময় তিনি ভোর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত ঝাড়ু সরবরাহ কাজে সময় দিয়ে থাকেন। এতে বাড়তি আয় হয় তার। এরকম স্থানীয় বেশ কয়েকজন শ্রমিক প্রায় কয়েক বছর ধরে ঝাড়ু সরবরাহ করার কাজ করে সংসার চালান বলে জানান হাশেম।
এদিকে ফুলের ঝাড়ু বিক্রি করতে মারমা বাজারে আসা রোয়াংছড়ির বাসিন্দা সুইসাপ্রু মারমাসহ বেশ কয়েকজন বিক্রেতা জানান,পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে ফোটা এই ফুলের ১০ থেকে ১৫টি দিয়ে আঁটি বেঁধে ঝাড়ু বানানো হয়।সেই ঝাড়ু স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় ১০ থেকে ১৫ টাকায়।বেশ কয়েকবছর ধরে তারা এই ফুলের ঝাড়ু বিক্রি করে ভালো লাভ পাচ্ছেন।চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট থেকে আসা ফারুকুল ইসলাম নামে এক পাইকারি ঝাড়ু বিক্রেতা জানান,পাহাড়ের ফুল ঝাড়ুর কদরের কথা শুনে তিনিও বেশ কয়েক বছর ধরে বান্দরবানের এই বাজার থেকে ঝাড়ু কিনে আসছেন।ফারুকুল ইসলাম জানান, প্রতি ট্রাকে প্রায় দুই হাজার বান্ডেল ফুল ঝাড়ু পরিবহন করা যায়। এছাড়া প্রতি বান্ডেল ১ থেকে ২ হাজার টাকায় কিনে থাকেন তিনি। সেগুলো চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন তিনি। এতে মাসে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা আয় হয় তার।
বান্দরবান সদরের বাজার হতে ঢাকা,চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ফুলের ঝাড়ু পৌঁছে দিচ্ছেন ট্রাকচালক ইলিয়াছ ও রহমান আলীসহ বেশ কয়েকজন।
তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বান্দরবানের সাথে সরাসরি শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে অনেক কম পরিশ্রম ও স্বল্পমূল্যে এসব ফুল ঝাড়ু গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়।পাশাপাশি বান্দরবানের সড়কে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির ফলে অনেক ঝামেলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
তবে বেশ কয়েকজন চালক জানান,জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বর্তমানে পরিবহন ব্যয় অনেকটা বেড়ে গেছে।যার ফলে বর্তমানে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।প্রতিবছরের এই মৌসুমে দুর্গম রোয়াংছড়ি,রুমা এবং থানচির বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে এসব ফুলের ঝাড়ু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।