ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমা হত্যার নেপথ্যে…!!!


প্রকাশের সময় :৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ৫:৪০ : অপরাহ্ণ 740 Views

খাগড়াছড়ি নিউজ ডেস্কঃ-
পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-প্রসীত) এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক মিঠুন চাকমাকে (৪০) দিনে দুপুরে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ভাইয়ের সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয় গত বুধবার (৩ জানুয়ারি)।প্রকাশ্যে এই হত্যাকাণ্ডের দায় সদ্যগঠিত নতুন ইউপিডিএফ-গণতান্তিকের ওপর চাপিয়ে আসছে প্রসীত গ্রুপের নেতারা।তবে ঘটনার তিন দিন পর এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়ে ইউপিডিএফ-গণতান্তিক।পাশাপাশি হত্যার নেপথ্যের কারণও তুলে ধরেছে দলটি।ইউপিডিএফ সংগঠক মিথুন চাকমা হত্যার সাথে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক পার্টি কোনোভাবেই জড়িত নয়।শুক্রবার ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক পার্টির মিডিয়া সমন্বয়ক মিটন চাকমা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবী করেছেন। বিবৃতিতে দাবী করা হয়েছে,মিঠুন চাকমা ইউপিডিএফ প্রসীত দলের অন্ত:কলহে নিহত হয়েছেন।শুক্রবার প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইউপিডিএফ (প্রসীত) দলের নেতা মিঠুন চাকমা নিহত হওয়ার ব্যাপারে ইউপিডিএফ (প্রসীত পন্থীর) নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা সম্পূর্ণ আবেগী ভাষায় বস্তুনিষ্ঠ,তথ্য-উপাত্ত ছাড়ায় তাদের মনগড়া মন্তব্য,বক্তব্য, ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করে নতুন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টির উপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।’’ তাদের এই দায় চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) বলেছে, ‘‘আমরা সবাই ইউপিডিএফ প্রসীত দলে সম্পৃক্ত ছিলাম। মতাদর্শ মিল না হওয়ার কারণে জুম্ম জাতীয় স্বার্থে এবং সচেতন জুম্ম জনগণের পরামর্শে ও অনুপ্রেরণায় নতুন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টি আত্মপ্রকাশ করেছি। তাই মিঠুন চাকমা নিহত হওয়ার ব্যাপারে তাৎক্ষণিক ভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য না করে আমাদের পার্টি ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিল।পর্যবেক্ষণে থেকে যেটা পাওয়া গেছে, সেটা হলো মিঠুন চাকমা ইউপিডিএফ-প্রসীত দলের অন্তঃকলহে নিহত হয়েছেন।এতে নতুন ইউপিডিএফ (গনতান্ত্রিক) পার্টি কোন মতে জড়িত নয়।’’ মিঠুন চাকমাকে হত্যার নেপথ্যের ঘটনা তুলে ধরে বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘‘নিহত মিঠন চাকমা ইউপিডিএফ প্রসীত দলের কোন নেতাকে সমালোচনা থেকে বাদ দিতেন না এবং এমনকি দলের সভাপতি প্রসীত বিকাশ খীসাকেও না।তিনি খুবই স্পষ্টবাদী এবং বাস্তববাদী নেতা হিসেবে কর্মীদের কাছে পরিচিত ছিলেন। আমাদের পার্টি ৩ নভেম্বর-২০১৭ তারিখে পার্বত্যবাসীর উদ্দেশ্যে প্রসীতপন্থীর ইউপিডিএফ এর ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম বিষয়ে যে খোলা চিঠি লিখেছিল,সেই খোলা চিঠির ৯ পৃষ্ঠায় ২ নম্বর লাইনে মিঠুন চাকমার যোগ্যতার কথা কিঞ্চিত উল্লেখ করেছিলাম।’’ নিহত মিঠুন চাকমাসহ প্রসীতপন্থীর অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য মামলা রয়েছে মিঠুন চাকমা, প্রদীপন খীসা ও সচিব চাকমার বিরুদ্ধে।সচিব চাকমারা কয়েকবার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হাতে ধরাও পড়েন। দীর্ঘ কয়েক বছর জেল খাটার পর সচিব চাকমারা জামিনে বেরিয়ে আসলেও মামলায় নিয়মিত হাজিরা না দেওয়ার কারণে সচিব চাকমারা আবার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হয়ে যান।তারা কোন মামলায় হাজিরা দেন না।
কিন্তু ২০১৩ সালে মিঠুন চাকমাকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ থেকে ইউপিডিএফে উন্নীত করে,ডাইরেক্ট বাঘাইছড়ি সাজাই এলাকায় পোস্ট পরিচালকের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়।এতে পঞ্চম শ্রেণির পাশ কাঞ্চন চাকমা (জুয়েল) মানতে না পেরে পরিচালক মিঠুন চাকমার উপর নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেন।যার কারণে মিঠুন চাকমা ইউপিডিএফ-র কাজ করবেন না ঘোষণা দিয়ে তার নিজ বাড়িতে চলে আসেন।তাকে আবার ছলে-বলে, কৌশলে ইউপিডিএফ-এ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সচিব চাকমারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন।‘‘তাতে ব্যর্থ হয়ে খুবই সুকৌশলে মিঠুন চাকমাকে সচিব চাকমারা সেনাবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেন।সেনাবাহিনীরা মিঠুন চাকমাকে ধরে জেল হাজতে দিলেও তিনি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে জেল থেকে সাড়া পেয়ে থাকেন।এতে আবার সচিব চাকমাদের সন্দেহ হয় মিঠুন চাকমা নিশ্চয় অতি গোপনে সরকারের কাছে চুক্তি করে জেল থেকে বেরিয়ে আসলেন কিনা?’’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘আমরা যখন ২০১৭ সালে ১৫ নভেম্বর তারিখে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টির ঘোষণা করলাম প্রসীত পন্থী ইউপিডিএফ তাৎক্ষণিক ভাবে খাগড়াছড়ির স্বর্নিভর এলাকায় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন এবং ১৬ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে সড়ক অবরোধ করলেন। এরপর ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টির বিরুদ্ধে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,যুব ফোরামকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য সচিব চাকমা,মিঠুন চাকমাকে ফোন করে বলেছিলেন ইউপিডিএফ (গনতান্ত্রিক) পার্টির বিরুদ্ধে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,যুব ফোরামকে সংগঠিত করে খাগড়াছড়ি ধর্মপুর এলাকায় এসে বক্তব্য দিয়ে যাওয়ার জন্য।’’ কিন্তু সে দিন সচিব চাকমার কথায় মিঠনু চাকমা অপরাগতা প্রকাশ করেছিলেন এবং নতুন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টির পক্ষে যায় এমন দু-একটি কথাও সচিব চাকমাকে মিঠুন চাকমা বলেছিলেন।এতে সচিব চাকমা মিঠুন চাকমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।এরপর থেকে মিঠুন চাকমাকে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পক্ষে মনে করেই মিঠুন চাকমাকে হত্যার সুযোগ খোঁজেন সচিব চাকমা।
‘‘কারণ, সচিব চাকমা একজন ক্ষমাহীন,আদর্শহীন ও প্রতিশোধপরায়ণ নেতা হিসেবে সকল কর্মীদের কাছে পরিচিত। আমাদের ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টির কার্যক্রমের মেয়াদ এখনো দুই মাসের অধিক হতে চলেছে।এই স্বল্প সময়ের মধ্যে এমন শক্তি অর্জন হয়নি যে,দিন-দুপুরে এভাবে মিঠুন চাকমাকে হত্যা করা যাবে। ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টিকে অংকুরে বিনষ্ট করার জন্য ইউপিডিএফ প্রসীত পন্থীর নেতারা এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাচ্ছে।এমনকি নিজের দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করছেন না’’ বলা হয় বিবৃতিতে।এতে আরও বলা হয়,ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টি মিঠুন চাকমার নিহত হওয়ার ঘটনায় কোনোমতে জড়িত নয় এবং মিঠুন চাকমার হত্যাকারী যেই হোক না কেন,তাকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করে শাস্তি প্রদান করতে ইউপিডিএফ (গনতান্ত্রিক) পার্টি দাবি জানাচ্ছে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!