ঈদের ছুটিতে ঈদ উৎসবের ভিড় জমেছে রাজধানীসহ সারা দেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। সোমবার ঈদের দিন থেকে এ ভিড় জমলেও গতকাল পর্যন্ত স্থানগুলোতে আরও উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেছে। বিশেষ করে রাজধানীতে কচিকাঁচার হৈ হুলোড়ে মুখর ছিল জাতীয় চিড়িয়াখানা, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, থিমপার্ক টগি ওয়ার্ল্ড ও হাতিরঝিলসহ সব বিনোদন কেন্দ্রে। এসবের পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ ভিড় জমান নিকটবর্তী গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ, আশুলিয়া এলাকার ফেন্টাসি কিংডম, নন্দনপার্ক এবং নরসিংদী এলাকায় স্থাপিত ড্রিম হলিডে পার্কে। এ ছাড়া আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লাসহ ঐতিহাসিক স্থানসহ অন্যসব বিনোদন কেন্দ্রগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য।
ঈদের দিনও বিনোদনপ্রেমী মানুষের ব্যাপক সমাগম ছিল এসব বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। এ ছাড়াও বিনোদন পেতে রাজধানীর আফতাবনগরের পূর্বাংশের খোলা জায়গায়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পেছনে ৩০০ ফিট সড়কের পাশে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন। ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় হাতিরঝিলের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিভিন্ন পয়েন্টে মোটরসাইকেল ও সন্দেহভাজন গাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
জাতীয় চিড়িয়াখানা : ঈদের দিন থেকেই ভিড় জমতে থাকে রাজধানীর উপকণ্ঠের মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায়। সেখানে তিল ধারণের ঠাঁই থাকেনি। সকাল থেকেই পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছুটে আসেন বিনোদনপ্রেমীরা। মেতে ওঠেন আনন্দ আড্ডা আর খুনসুটিতে। ঈদের তিন দিনে চিড়িয়াখানায় প্রায় সাড়ে চার লাখ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। অতিরিক্ত মানুষের চাপে চিড়িয়াখানার প্রধান সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। মানুষের ভিড়ে ফুটপাথ দিয়েও হাঁটাচলার সুযোগ ছিল না।
সাফারি পার্ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের রেঞ্জার মো. মোতালেব হোসেন জানান, ঈদের দিন সকাল থেকেই দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন। দুপুর নাগাদ এ সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যায়। তিনি বলেন, পাঁচটি ভাগে বিভক্ত সাফারি পার্কের একটি অংশ কোর সাফারি পার্ক- যাতে বাঘ, সিংহ, ভালুক, হরিণ, জেব্রা, জিরাফ, হাতি ইত্যাদি আলাদা আলাদা সীমানা প্রাচীরের ভিতর উন্মুক্তভাবে বিচরণ করে। এসব প্রাণী দেখতে নির্ধারিত ফি দিয়ে দর্শনার্থীরা পার্কের নির্ধারিত মিনিবাস ও গাড়িতে চড়ে বেড়ান।
জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে বিনোদনপ্রেমী মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। পরিবার- পরিজন নিয়ে অনেকেই আসছেন এ পার্কে। নানা প্রজাতির পাখি, বাঘ, সিংহ, ভালুক, হরিণ, বানর, সাপ, কুমির, প্রজাপতিসহ বিভিন্ন প্রাণী দেখে সবাই আনন্দ উপভোগ করছেন। গতকাল দর্শনার্থীর বেশি ভিড় ছিল কোর সাফারি পার্কে। এখানে বাঘ, সিংহ, হরিণ, জেব্রা, জিরাফ ইত্যাদি আলাদা আলাদা সীমানা প্রাচীরের ভেতর উন্মুক্তভাবে বিচরণ করেছে। এ ছাড়া নানা ধরনের পাখি শিশুদের মুগ্ধ করেছে। পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান জানান, দর্শনার্থীদের কোর সাফারি পার্ক দেখার জন্য এখন আটটি মিনিবাস রয়েছে। প্রতিটি মিনিবাসে গড়ে ৩০ জন যাত্রী যেতে পারেন। আর বাসে কোর সাফারি পার্ক দেখতে প্রায় ২৫-৩০ মিনিট সময় লাগে।
হাতিরঝিল : রাজধানীর সাধারণ আর মধ্যবিত্তের বিনোদন কেন্দ্র বলতে এখন হাতিরঝিলই প্রধান হয়ে উঠেছে। সব মানুষের স্রোত তাই সেখানেই। ঈদের দিন সকাল থেকেই সেখানে ভিড় জমান হাজারও মানুষ। বিনোদনপ্রেমীদের জন্য নতুন সাজে প্রস্তুত করা হয়েছে হাতিরঝিল চক্রাকার বাস, ওয়াটার বাস। নামানো হয়েছে নতুন বোটও।
এবারও ঈদ উপলক্ষে হাতিরঝিলে চলছে ঈদ প্যাকেজ। ৬০ টাকাতেই ওয়াটার বাসে ঘোরা যাচ্ছে গোটা ঝিল। সন্ধ্যা হতে হাতিরঝিল সাজে রঙিন রূপে। চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোয় ঝলমলে হয়ে ওঠে পুরো হাতিরঝিল। রঙবেরংয়ের দৃষ্টিনন্দন বাতি হাতিরঝিলকে এনে দেয় নজরকাড়া সৌন্দর্য। সরেজমিন দেখা যায়, ঈদ আনন্দ যেন উপচে পড়েছে রাজধানীর হাতিরঝিলে। বিনোদনপ্রেমী মানুষ উপভোগ করছেন হাতিরঝিলের সৌন্দর্য। গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতিরঝিলে বাড়তে থাকে মানুষের সংখ্যা।
জাতীয় জাদুঘর : ঈদুল আজহার পরের দিন রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে প্রবেশের জন্য বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর ভিড় ছিল। তবে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারির কারণে জাদুঘরে প্রবেশের ক্ষেত্রে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। জাদুঘর খুলে দেওয়ার আগে থেকেই সেখানে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। এক পর্যায়ে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। রাজধানী যাদের স্থায়ী ঠিকানা কিংবা কোনো কারণে গ্রামে যেতে পারেননি তাদের জন্য জাতীয় জাদুঘর ছিল অন্যতম লক্ষ্য। সুবিধাবঞ্চিত শিশু, প্রতিবন্ধী ও শিক্ষার্থীদের বিনা টিকিটে জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন করার সুযোগ রেখেছে সরকার।
পূর্বাচলের বালু নদী : রাজধানীর পূর্বাচলের বালু নদী এখন মহানগরীর তরুণ-তরুণীদের বিনোদনের অন্যতম আকর্ষণ। ঈদের পরদিন তরুণ-তরুণীদের নাচের ঝঙ্কারে উত্তাল হয়ে উঠে নদী। এ দৃশ্য উপভোগ করেন নদীর পাড়ে বসে থাকা হাজারও উৎসুক মানুষ। রঙিন কাগজে সাজানো ইঞ্জিনচালিত ছোট-বড় নৌকা সুরের তালে তালে দুলেছে। আর উচ্চ শব্দে বেজেছে দেশি-বিদেশি গান। গানের তালে তালে নেচে গেয়ে উল্লাস করেন তরুণ-তরুণীরা। ঈদের দিন থেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে নৌকা ভ্রমণে বের হন অনেকেই। কেউ নদীর তীরে বসে বন্ধুবান্ধব নিয়ে চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছেন। তবে বেলা যতই গড়িয়ে গেছে ততই বাড়তে দেখা গেছে মানুষের ঢল।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.