প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তীর্থস্থান,ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বান্দরবানকে দেশ ও বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরার লক্ষ্যে এ জেলার ব্রান্ডিং নির্ধারণ করা হয়েছে "অপরূপা বান্দরবান"।আর অপরূপা এই বান্দরবানের স্বার্থকতা খুজেঁ পাওয়া যায় তখনই যখন দেখা যায় পাহাড়ের কোল ঘেষে বয়ে চলছে নদী সাঙ্গু,মাতামুহুরী আর বাঁকখালী।পাহাড়ে সবুজের মেলা আর বয়ে চলা পাহাড়ি ঝর্না উৎফুল্ল করে প্রতিটি প্রান শক্তি কে।সাথে নৃতাত্তিক ১১টি জাতিগোষ্ঠীর জুমিয়ারা পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট মাচাং ঘরে করছে বসবাস।রূপকথার কল্পকাহিনী মনে হলেও অপরূপা বান্দরবানে রয়েছে জুম চাষ,দিন শেষে ঘরে ফেরা আর মাহা সাংগ্রাই এর রঙিন জল উৎসব।সবুজের সমারোহ আর পাহাড়ের নিস্তব্ধতায় প্রিয়জনদের নিয়ে একান্ত সান্নিধ্যে কয়েকটা দিন স্মরণীয় করে রাখতে বান্দরবানে অনেক পর্যটকরা অতিথি হন।কিন্তু আগত এই পর্যটকদের কিছু অসতর্কতায় ছোটবড় নানা দুর্ঘটনা এবং প্রান হানির মতো ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় প্রশাসন,সাংবাদিক মহলসহ বান্দরবানের সর্বস্তরের মানুষকে।ঠিক তেমন একটি সময়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি খ্যাত অপরূপা বান্দরবানে আগত দর্শনার্থী এবং পর্যটকদের ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসন হাতে নিয়েছে প্রযুক্তিগত ব্যাবস্থা সহ নানা উদ্যোগ।এবিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার মো.কায়েসুর রহমান বলেন,বান্দরবানে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন।গত সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা বইমেলার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে বান্দরবান জেলার সাংবাদিকবৃন্দ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সতর্কতামূলক নির্দেশনা চিহ্ন সম্বলিত সাইনবোর্ড স্থাপন জরুরী হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।বৈঠক চলাকালেই জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক সাত উপজেলার ঝুকিপূর্ণ ও বিপদজনক স্থান গুলো চিহ্নিত করে স্ব-স্ব উপজেলা প্রশাসন কে সতর্কতামূলক নিরাপত্তা নির্দেশিকা স্থাপনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।জেলা প্রশাসকের তড়িৎ নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা শহরের থানাকুম, উজানীপাড়া,মধ্যম পাড়া,শৈল প্রপাতসহ বেশকিছু ঝুকিপূর্ণ এবং বিপদজনক স্থানে সতর্কতামূলক নিরাপত্তা নির্দেশিকা চিহ্ন সম্বলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করেছেন।একইভাবে জেলার অন্য ছয়টি উপজেলাতেও এই ধরনের সতর্কতামূলক নিরাপত্তা নির্দেশিকা চিহ্ন সম্বলিত সাইনবোর্ড স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।সাইনবোর্ড স্থাপন নিয়ে বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা আফরিন মুস্তাফা বলেন,বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক গত বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় বেশকয়েকটি ঝুকিপূর্ণ এবং বিপদজনক স্থানে সতর্কীকরণ চিহ্ন সম্বলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।পর্যায়ক্রমে চিম্বুক সড়কসহ সদর উপজেলার আওতাভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতেও এই ধরনের সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড স্থাপন করা হবে।এদিকে জেলা প্রশাসন পরিচালিত বান্দরবানের অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং ব্যাস্ত দুই দর্শনীয় স্পট নীলাচল এবং মেঘলায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এই দুটি দর্শনীয় স্থানের প্রবেশমুখ এবং অভ্যন্তরে দায়িত্বপালনকারী কর্মীদের সুনির্দিষ্ট পোশাক প্রদান করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসন কতৃক এই দুই প্রতিষ্ঠানের তদারকি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.কায়েসুর রহমান।এবিষয়ে তিনি বলেন,পর্যটকরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে বিশেষ পোশাক পরিহিত এসব দায়িত্বশীল কর্মীদের কাছ থেকে যাতে সহজেই সাহায্য কামনা করতে পারে সেইজন্যই এই ধরনের ব্যাবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।তিনি আরও বলেন,বিশেষ পোশাক পরিহিত কর্মীদের পাশাপাশি নীলাচল ও মেঘলাকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।এতে পর্যটকদের সাথে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে ভিডিও ফুটেজ দেখে তা সনাক্ত করতে পারবে প্রশাসন।জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন,বান্দরবানের অন্যান্য দর্শনীয় স্পট গুলোকেও সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক।এছাড়াও জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন,মেঘলা ও প্রান্তিক লেকের সোলার বোট,প্যাডেল বোট এবং কায়াকিং বোটে চড়ার সময় পর্যটকরা যাতে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে সেই প্রেক্ষিতে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে সতর্কতা নির্দেশনাবলী যুক্ত ব্যানার স্থাপন করা হয়েছে।প্রসঙ্গত,অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরপুর বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান গুলো উপভোগ করার জন্য হাজারো পর্যটকের আগমন ঘটে।কিন্তু এসব পর্যটকরা বাধ ভাঙ্গা উল্লাস করতে গিয়ে অবচেতন মনে এবং অসতর্ক হয়ে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে।মাঝেই মাঝেই এমনসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটছে।মাত্র কয়েক দিন আগেও সাঙ্গু নদীর বাধরা ঝর্নায় গোসলে নেমে তলিয়ে যায় আপন দুই ভাইবোন সহ তাদের আরেক খালাতো বোন।তিনজনই বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়।আর এসব দুর্ঘটনা কঠোরভাবে রোধ করতেই বান্দরবান জেলা প্রশাসন সুরক্ষিত পর্যটন ব্যাবস্থা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.