রাতে ঘুমানোর আগে সুরা আল–মুলক পড়ুন


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ১:৪৫ : অপরাহ্ণ 318 Views

তবে এর মানে এই নয় যে সুরাটি দিনে পড়া যাবে না। এটি যেকোনো সময় পড়া যাবে, তবে রাতের বিশেষ জিকির হিসেবে এ সুরা পড়া উত্তম। সুরাটি নামাজের সঙ্গে পড়াও উত্তম। মুখস্থ না থাকলে দেখে দেখে অর্থ বুঝে পড়লে বিশেষ সওয়াব পাওয়া যায়।

সুরাটির নামকরণের মধ্যেই এর বিষয়বস্তু ও মর্মার্থ সুস্পষ্ট হয়েছে। আরবি ‘মুলক’ মানে ‘সার্বভৌমত্ব’। আসমান ও জমিনে সার্বভৌমত্বের একমাত্র মালিক যে আল্লাহ, তা এ সুরায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ সুরার শুরুতেই আল্লাহ সব ক্ষেত্রে তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বের কথা ঘোষণা করেছেন।

দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে আমল করার দিক থেকে কে উত্তম, তা পরীক্ষা করার জন্য যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন। তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল।’

খেয়াল করা দরকার, আল্লাহ বলছেন, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন’। এতে বোঝা যায়, জীবনের মতো মৃত্যুও আলাদা একটি সৃষ্টি; অর্থাৎ শুধু জীবনের অবসান বা অনুপস্থিতিই মৃত্যু নয়। মৃত্যু স্বতন্ত্র একটি সৃষ্টি।

এ আয়াত থেকে স্পষ্ট হয়, যিনি মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, তিনি অবশ্যই মৃত্যু থেকে মুক্ত। অর্থাৎ মৃত্যু তাঁর ওপর কার্যকর হতে পারে না।

৩ ও ৪ নম্বর আয়াতে সাতটি আসমানে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আল্লাহর সৃষ্টির নৈপুণ্যের কথা বলা হয়েছে। এখানে আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টিতে কোনো খুঁত বা অসংগতি আছে কি না, তা খুঁজে দেখতে বলেছেন। একবার নয়, বরং আরও একবার (বারবার) খুঁজে দেখতে বলা হয়েছে। কারণ, প্রথমবার মানুষ অবাক হয়ে কোনো কিছু দেখে। তখন কোনো ভুলত্রুটি–অসংগতি চোখে পড়ে না। দ্বিতীয়বার বা বারবার ভালো করে দেখলে ভুল ধরা পড়ে। তাই প্রথম অবাক দৃষ্টির পর দ্বিতীয় অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়েও খুঁত বা অসংগতি খুঁজতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আল্লাহ সবার কাছে চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছেন, যতবারই দেখা হোক না কেন, কোনো অসংগতি ধরা পড়বে না। কোনো অসংগতি না পেয়ে মানুষের দৃষ্টি ক্লান্ত হয়ে লজ্জাবনতভাবে ফিরে আসবে।

এরপর পঞ্চম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি তোমাদের কাছের আসমানকে প্রদীপমালায় সজ্জিত করেছি। আর সেগুলোকে (প্রদীপ) শয়তানদের মেরে তাড়ানোর উপকরণ বানিয়ে দিয়েছি। এসব শয়তানের জন্য আমি প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।’

এই আসমানকে প্রদীপ দ্বারা (অর্থাৎ নক্ষত্ররাজি) যেমন সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়েছে, তেমনি এগুলোকে আক্রমণের মাধ্যমও করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর এই সৃষ্টির মধ্যে একই সঙ্গে সৌন্দর্যের কোমলতা যেমন রয়েছে, তেমনি আক্রমণের কঠোরতাও রয়েছে।

১৫ নম্বর আয়াতের প্রথম অংশে আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনি তো সেই, যিনি ভূপৃষ্ঠকে তোমাদের জন্য সুগম বা অনুগত করে দিয়েছেন।’

এর পরের অংশে আল্লাহ বলছেন, ‘তোমরা এর (ভূপৃষ্ঠ) ওপর চলাফেরা করো এবং আল্লাহর দেওয়া রিজিক খাও। তোমাদের তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।’

সুরা আল–মুলককে ৬টি অংশে ভাগ করা যায়:

প্রথম অংশে (আয়াত ১-৪) আল্লাহর ক্ষমতা বর্ণনা করা হয়েছে এবং শেষ অংশে (আয়াত ২৮-৩০) আল্লাহর ক্ষমতার তুলনায় আমাদের দুর্বলতার কথা প্রকাশ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় অংশে (আয়াত ৫-১৫) জাহান্নাম ও জান্নাতের কথা এসেছে। তৃতীয় অংশে (আয়াত ১৬-২২) বলা হয়েছে, বিপদ শিগগির আসন্ন। তার প্রস্তুতির জন্য কতটুকু সময় প্রয়োজন, সেটা বলা হয়েছে পরের অংশে, অর্থাৎ চতুর্থ অংশে (আয়াত ২৩-২৪)।

পঞ্চম অংশে (আয়াত ২৫-২৭) প্রকাশ করা হয়েছে যে মানুষ অবাধ্যবশত জানতে চায়, সে বিপদ কবে ঘটবে?

আল্লাহ আমাদের প্রতি জুমাবারে অসাধারণ এ সুরা পড়ার ও বোঝার তৌফিক দিন।

ফেরদৌস ফয়সাল প্রথম আলোর হজ প্রতিবেদক। afef78@gmail.com

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
April 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!