

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বান্দরবানের বিহারগুলোতে চলছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের শ্রেষ্ঠ দানোত্তম উৎসব ‘কঠিন চীবর দান’।এই দানের মধ্য দিয়ে সুখ-শান্তি লাভের আশায় বিহারে বিহারে জড়ো হয়েছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। তারা চীবর তৈরি করে ভিক্ষুদের দান করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীবর (কাপড়) তৈরি করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দানের মাধ্যমে কায়িক,বাচনিক ও মানসিক অতিরিক্ত পুণ্য সঞ্চয় হয়।সে কারণেই বৌদ্ধ শাস্ত্রে এই দানকে ‘শ্রেষ্ঠ দান’ কিংবা কঠিন চীবর দান বলা হয়।বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্রকে বলা হয় চীবর।এই চীবর দান উৎসবে একদিন সকাল থেকে পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তুলা থেকে সুতা তৈরি,রঙ করা,সুতা দিয়ে কাপড় বুনন করে তা রোদে শুকিয়ে পরে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যমে ভিক্ষুদের দান করা হয়।
প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে কার্তিকি পূর্ণিমার আগ মূহূর্ত পর্যন্ত একমাসের মধ্যেই বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা এই ‘কঠিন চীবর দান’ অনুষ্ঠানটি পালন করে থাকেন।বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দায়িকা নুমেপ্রু মার্মা বলেন, ‘যেসব বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিভিন্ন ধর্মীয় আচার পালনের মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট বৌদ্ধ বিহারে ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস সম্পন্ন করেন,তাদেরকে এ কঠিন চীবর দান করে থাকেন বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা।’ দায়িকা উমেনু মার্মা বলেন, ‘গৌতম বুদ্ধের জন্য বিশাখা একদিনের মধ্যে চীবর তৈরি করেছিলেন।তার সেই স্মৃতিকে স্মরণ করেই বৌদ্ধরা একদিনের মধ্যে ভিক্ষুদের জন্য চীবর তৈরি করে থাকেন।’ বান্দরবানের উজানীপাড়া বৌদ্ধবিহার,রাজগুরু বৌদ্ধবিহারসহ বিভিন্ন বিহারে বছরের পর বছর ধরে এই কঠিন চীবর দান উৎসব পালিত হয়ে আসছে বলে জানান তিনি।বান্দরবান রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু মহাপঞঞা বলেন, ‘‘কঠিন চীবর দানের অসীম পূণ্য ও এর বহুবিধ গুণের কথা মাথায় রেখেই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দানোত্তম এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে।বৌদ্ধ শাস্ত্রে এই দান ‘শ্রেষ্ঠ দান’ হিসেবে স্বীকৃত।কঠিন চীবর দানের ফল অসংখ্য ও প্রেমময়।
’’বান্দরবান উজানীপাড়া বৌদ্ধ বিহারের বিহার অধ্যক্ষ উ.চাইন্দা ওয়ারা মহাথের বলেন, ‘শত বছর মহাপূণ্যপ্রদ অষ্ট পরিষ্কার দান করলেও কঠিন চীবর দানের ষোল ভাগের এক ভাগের সমান পূণ্য লাভ হয় না।তাই এ কঠিন চীবর দানই শ্রেষ্ঠ দান বলে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা বিশ্বাস করেন।’
আজ শনিবার (৪ নভেম্বর) কঠিন চীবর দানের পর বৌদ্ধ ভিক্ষুরা শহর প্রদক্ষিণ করবেন। এসময় তারা পিণ্ড গ্রহণ করার পর দায়ক,দায়িকা ও ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছ থেকে বিকালে পঞ্চশীল গ্রহণ করবেন।এর মাধ্যমেই সমাপ্তি ঘটবে কঠিন চীবর দান উৎসবের।এদিকে সিএইচটি টাইমস ডটকম সম্পাদক লুৎফুর রহমান উজ্জ্বল বৌদ্ধধর্মালম্বী সকল নারী পুরুষ কে কঠিন চিবর দান উপলক্ষ্যে সিএইচটি টাইমস ডটকম এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।শুভেচ্ছায় তিনি ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা কঠিন চিবর দানের মধ্যে দিয়ে পরম শান্তি ও সুখ লাভ এবং তাদের জীবন আরও পুন্যময়ী হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন।