শতাধিক নারী ইমোতে জিম্মি…!!!


প্রকাশের সময় :১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১২:২৮ : পূর্বাহ্ণ 1411 Views

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-‘দ্রুত একটা বিকাশ নম্বর দাও,তোমার হাতখরচের জন্য পাঁচ হাজার টাকা পাঠাব’ ইন্টারনেটভিত্তিক অ্যাপস ইমোতে স্ত্রীকে এ কথা বলেন গোপালগঞ্জের সৌদি আরবপ্রবাসী এক যুবক।সঙ্গে সঙ্গে ইমোতে দেওয়া হয় একটি বিকাশ নম্বর।ওই প্রবাসীও টাকা পাঠিয়ে দেন।৩০ মিনিট পর—‘কই,এখনো টাকা পাঠাইলা না তো?চাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাসার পাশের দোকানের বিকাশ নম্বরটা দিয়েছি’—ইমোর এসএমএসে বলছিলেন প্রবাসীর স্ত্রী। কিছুক্ষণ স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের পর প্রবাসী বুঝতে পারেন,টাকা অন্য কেউ মেরে দিয়েছে।ইমোতেই প্রবাসীর কাছে ধরা দেয় প্রতারকদের একজন।এবার ইমো অ্যাপসে স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট থেকে ওই প্রতারক প্রবাসীকে বলছে, ‘টাকা যা দিছ ভালো করছ।আরও ১০ হাজার টাকা পাঠাও।তোমার বউ তোমাকে যে উলঙ্গ ছবি পাঠাইছে,সেটা আমার কাছে আছে।টাকা না দিলে তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেব।’ প্রবাসীর স্ত্রীর ইমো অ্যাকাউন্ট মিরর কপি করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা।অর্থাৎ প্রতারকরা নিজের মোবাইলের ইমো অ্যাপসে বিভিন্ন নারীর মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলে।পরবর্তীতে নারীর মোবাইলে এসএমএস যাওয়া ভেরিফিকেশন কোডটিও কৌশলে নিয়ে নেয়।ফলে ওই নারীর সঙ্গে যতজনই ইমোতে এসএমএস আদান-প্রদান করেন,এর সবই হুবহু নিজের মোবাইলে দেখতে পায় প্রতারকরা।এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৩ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফটক থেকে আল-আমিন শেখ সবুজ (২৬) নামে একজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩।তারই দেওয়া তথ্যে আরেক হোতা শাহাদাত হোসেন মধু পরদিন গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হয়।তারা ইমোর মিরর কপির মাধ্যমে নারীদের প্রায় ১৫ হাজার খোলামেলা ছবি সংগ্রহ করে।ওই ছবি দেখিয়ে ছয় শতাধিক নারীকে জিম্মি করে হাতিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মধু র‌্যাবকে জানিয়েছে,গোপালগঞ্জের মুকছুদপুর উপজেলায় দিগনগর বাজারে মধু কম্পিউটার্স নামে তার একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকান আছে।সেখানে মাস ছয়েক আগে এক নারী সার্ভিসিং করতে দেন তার মোবাইল সেট।সেটটি এক দিন রেখে ঠিক করে মধু।এর মধ্যে সে ওই নারীর মোবাইল নম্বর দিয়ে নিজের মোবাইলের ইমোতে একটি অ্যাকাউন্ট খোলে।যার মোবাইল নম্বর ও ভেরিফিকেশন কোড নম্বর মধু চুরি করেছিল তার স্বামী তিন বছর ধরে সৌদি আরব থাকেন। প্রতি রাতের একান্তে ইমোতে পাঠানো এসএমএস ও ছবি সংগ্রহ করতে থাকে সে।কিছুদিন পর আরও কিছু নারীর তথ্য রাজধানীতে থাকা তার বন্ধু সবুজকে দেয় মধু। এখানে বসে সবুজ সারা দেশে তাদের প্রতারণার জাল ছড়িয়ে দেয়।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনুসন্ধানে এসব প্রতারকের প্রতারণাজালের তিনটি পদ্ধতি বের করেছে।প্রতারকরা কোনো মেয়ের পরিচিতজনের মোবাইল নম্বর দিয়ে ইমো অ্যাকাউন্ট খোলার পর তার স্বজনদের সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু করে।কৌশলে তাদেরও মোবাইল নম্বর ও ভেরিফিকেশন কোড নিয়ে নেয় তারা।এভাবে একাধিক ইমোর মিরর কপি করে তারা বিভিন্নজনের সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু করে।মূলত তাদের টার্গেট থাকে উঠতি বয়সী তরুণী,প্রবাসী ও তাদের নিকটাত্মীয়।প্রতারকরা তাদের ইমোর সব কার্যকলাপ ফলো করে এবং স্বামী কিংবা প্রেমিকের কাছে পাঠানো একান্ত কিছু ছবি ডাউনলোড করে।পরে এসব ছবির বিনিময়ে টাকা আদায় করে তারা।টাকা না দিলে তা ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ারও হুমকি দেয়।এভাবে অন্তত ৬০ জন মেয়ের কাছ থেকে নিয়মিত ১০,২০ হাজার টাকা করে আদায় করত এই প্রতারকরা।যে দিতে অস্বীকৃতি জানাত তার অশ্লীল ছবি স্বজনদের কাছে পাঠানো হতো।এমন ঘটনার শিকার হয়ে একটি মেয়ের বিয়েও ভেঙে গেছে বলে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করেন এক ভুক্তভোগী।র‌্যাব-৩-এর উপ-অধিনায়ক মেজর আবদুল্লাহ আল মারুফ এ প্রতিবেদককে জানান,এটি অত্যন্ত ভয়াবহ প্রতারণা। ইন্টারনেট অ্যাপসে এ ধরনের প্রতারণা প্রতিহত করতে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!