উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে:-যেকোনো গাড়ি-হোক সেটা পাজেরো,মাইক্রোবাস,প্রাইভেটকার কিংবা অটোরিকশা।দেখলেই ছুটে আসত শত,শত অসহায় রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু।দুই হাত পেতে আকুতি জানাতো টাকার জন্য।কিংবা এতটুকু খাবারের জন্য।ট্রাক-কাভার্ডভ্যান নিয়ে অনেকেই এসেছিল অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে। সড়কে চলতে চলতে ছুঁড়ে দিত বিস্কুটের প্যাকেট কিংবা পুরনো কাপড়।সেটা কুড়াতে গিয়ে হুড়োহুড়ি-মারামারি।এই দৃশ্য গত সপ্তাহেও ছিল।লাখো রোহিঙ্গার ঢল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল প্রশাসন। চরম এক বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনী।ফলে গত দুইদিনে সেই বিশৃঙ্খল দৃশ্যপটও পাল্টে গেছে।ত্রাণ বিতরণের নামে সড়কে খাবার ছুঁড়ে দেওয়ার মতো কোন দৃশ্য রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) সারাদিন উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে চোখে পড়েনি। আবার নিয়ম না মেনে বড় বড় ত্রাণবাহী গাড়ি নিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসতিতে ঢুকে পড়ার মতো কোন দৃশ্যও চোখে পড়েনি।রোহিঙ্গাদের বসতির আশপাশে উৎসুক জনতার ভিড়ও নেই।এক সপ্তাহ আগে উখিয়ার কুতপালং,থাইংখালী,বালুখালী এলাকায় এসে দেখা গিয়েছিল,সড়কের আশপাশে অবস্থান নিয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা।সড়কের পাশে পাহাড়ের গাছ কেটে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে অস্থায়ী বসতি তৈরি করা হয়েছে।মূল সড়কের আশপাশ মলমূত্রে ভরা।দুর্গন্ধে সড়ক দিয়ে চলাচল,এলাকায় বসবাস করাও হয়ে পড়েছিল কষ্টের।এছাড়া ত্রাণবাহী গাড়ি,রোহিঙ্গাদের আনাগোনা আর উৎসুক মানুষের ভিড়ে সড়কে যানবাহন চলাচলেও বেগ পেতে দেখা গিয়েছিল।যানজটে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল উখিয়া এবং টেকনাফের।তবে সম্প্রতি জেলা প্রশাসন কুতপালং, থাইংখালীসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করে বসবাসকারী ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে তুলে বালুখালীতে নির্ধারিত স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে যাতে আবারও কেউ বসতি স্থাপন করতে না পারে সেই বিষয়টি তদারকি করছে সেনাবাহিনী। এর ফলে সড়কে বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গাদের হাঁটাচলা থাকলেও জটলা চোখে পড়ছে না।সড়কে গাড়ি থামিয়ে কোন ধরনের ত্রাণ বিতরণ না করার নির্শনা দিয়ে ব্যানার টাঙানো হয়েছে।জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে গঠিত টিম এবং সেনাবাহিনী বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করছে।এছাড়া অহেতুক রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ক্যাম্পে যাতে গাড়ি নিয়ে কিংবা জটলা নিয়ে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেই বিষয়টিও মনিটরিং করছে সেনাবাহিনী। উখিয়া কলেজ গেটের সামনে দিয়ে গাড়ি প্রবেশের সময় বিজিবি,সেনাবাহিনী এবং পুলিশের জিজ্ঞাসা ও তল্লাশির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।সড়কে যানবাহন চলাচল যাতে সুশৃঙ্খল থাকে সেই ব্যবস্থাপনায়ও পুলিশের সঙ্গে সেনা সদস্যদের দেখা গেছে।এই অবস্থায় বড় ধরনের শৃঙ্খলা ফিরেছে ত্রাণদাতাদের কার্ক্রমে।গতকাল রোববার ভোর থেকে উখিয়া কলেজ মাঠে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প এবং কুতপালং এলাকায় জেলা প্রশাসনের ত্রাণ সংগ্রহ কেন্দ্রে গিয়ে শৃঙ্খলার বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেছে।সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে সেনা সদস্যরা ত্রাণ সংগ্রহের বুথে সরাসরি ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। কলেজ মাঠে ত্রাণবাহী গাড়ি এলে সেটি রাখা হচ্ছে।তারপর বুথে এসে কে ত্রাণ পাঠিয়েছেন অথবা নিয়ে এসেছেন তার নাম এন্ট্রি করতে হচ্ছে। সংগঠন হলে সেটাও এন্ট্রি করতে হচ্ছে।তিনটি তাবু খাঁটিয়ে তৈরি অস্থায়ী গুদামে ত্রাণগুলো মজুদ করা হচ্ছে।আর যারা নিজেরাই রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণে ইচ্ছুক তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসনের ত্রাণ কেন্দ্রে।জেলা প্রশাসনের ত্রাণ সংগ্রহ কেন্দ্রেও সরাসরি ত্রাণ নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে।সেখানেও একইভাবে নাম,কি কি পণ্য এনেছে সেটা,কোথায় বিতরণ করতে ইচ্ছুক সেটা এন্ট্রি করতে হচ্ছে।একজন উপ-সচিবের নেতৃত্বে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী সেই কাজ করছেন।সেখানে যাতে কোন বিশৃঙ্খলা না হয় সেটা দেখছেন সেনা সদস্যরা।জেলা প্রশাসনের ত্রাণ সংগ্রহ কেন্দ্রে নাম এন্ট্রি হওয়ার পর তারাই নির্ষ্ট ক্যাম্পে নিয়ে যাবার জন্য টোকেন দিচ্ছে।সেই টোকেন অনুযায়ী পুলিশ ও আনসারের সঙ্গে ত্রাণদাতারা যাচ্ছেন নির্দিষ্ট ক্যাম্পে। সেখানে ত্রাণ বিতরণের পর পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ত্রাণদাতাদের উখিয়া পার করে দিচ্ছেন।উখিয়ায় জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সাতটি এবং টেকনাফে পাঁচটি ক্যাম্প করা হয়েছে ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কার্ক্রমের জন্য। প্রত্যেক ক্যাম্পে একইভাবে কাজ চলছে।গতকাল রোববার দুপুরে উখিয়া জেলা প্রশাসনের কেন্দ্রের সামনে আসেন নওগাঁর আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম।তিনি রোহিঙ্গাদের ২০০ পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ সামগ্রী নিয়ে এসেছেন।সেক্টর কমান্ডার্ ফোরাম,গুলশান থানা আওয়ামী লীগ,মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আনা ত্রাণও একই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধনের পর রোহিঙ্গা শিবিরে পৌঁছতে দেখা গেছে।শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোন কথা বলেননি।তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো.আলী হোসেন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন,পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত সেনাবাহিনী জেলা প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাবে।এদিকে শৃঙ্খলা ফিরে আসায় খুশি রোহিঙ্গারাও।ত্রাণদাতারাও এই প্রক্রিয়া মেনেই ত্রাণ দিচ্ছেন।মিয়ানমারের মংডু জেলার রাচিদং থেকে আসা মো.শফির (৬৫) সঙ্গে উখিয়ার কুতপালং এলাকায় কথা হয়।তিনি ২৫ কেজি চাল ত্রাণ হিসেবে পেয়েছেন।শফি এসেছেন ১৫ দিন আগে।এই প্রথম সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ানোর ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই তিনি ত্রাণ পেয়েছেন বলে জানালেন।আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা কারিতাসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জেমস গোমেজ ১৫ দিন আগে ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখে গিয়েছিলেন।রোববার কুতপালংয়ে পরিস্থিতি দেখার পর তিনি বাংলানিউজকে বলেন,গাড়ি থেকে ত্রাণ ছুঁড়ে দেওয়ার বিষয়টি ছিল চরম অমানবিক।এটা মানুষকে পশুর সঙ্গে তুলনা করার মতো আমার মনে হয়েছিল।তবে এখন সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসন যেভাবে একসাথে সুশৃঙ্লভাবে পুরো কাজটি করছে,সেটা অভূতপূর্ব।এটা আমার কাছে একটা দৃষ্টান্ত বলে মনে হচ্ছে।গত ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা একযোগে হামলা চালায়। এর জের ধরে মিয়ানমারে ব্যাপক সহিংসতার মুখে পড়ে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। নির্যাতনের মুখে টিকতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে তারা দলে দলে ছুটে আসতে শুরু করেন বাংলাদেশে।জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটে।(((রমেন দাশগুপ্ত,স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট;বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর.কম)))
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.