বান্দরবান অফিসঃ-তাসপিয়াকে গণধর্ষণের পর হত্যা করেছে পাষণ্ডরা।ধর্ষণ শেষে হত্যা করে লাশটি ফেলে দেয়া হয় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের উপকূলে। এমনটাই দাবি করেছেন তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন।বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মর্গের সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।মোহাম্মদ আমিন বলেন,আদনান ও তার সহযোগীরা এসব করেছে।জড়িতদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন সন্তানহারা হতভাগ্য এই বাবা।বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে আদনান মির্জাসহ ছয়জনকে আসামি করে সিএমপির পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তাসপিয়ার বাবা।
বুধবার তাসপিয়ার লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই কিশোরীর ওপর চালানো ভয়াবহ চিত্র। নিহত তাসপিয়ার পিঠজুড়ে পাওয়া গেছে নির্যাতনের ছাপ।কিশোরীটির পিঠ, বুক ও স্পর্শকাতর অঙ্গসহ সব স্থানেই দেখা গেছে ভয়াবহ নির্যাতনের ছাপ। গোলাকার মুখমণ্ডল থেঁতলানো। চোখ দুটোও যেন নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আর বুকের ওপর একাধিক আঁচড়ের দাগও দেখা গেছে। নিহতের হাতের নখগুলো ছিল নীলবর্ণ।লাশটি পাওয়ার পর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছেন সিএমপি পতেঙ্গা থানার উপপরিদর্শক আনোয়ার।
এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাসপিয়ার ময়নাতদন্ত হয়। এই ময়নাতদন্তে অংশ নেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুমন মুর্শিদীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম।এই টিমের অপর সদস্যরা হলেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুজন, ডা. জাহানআরা রোজি ও ডা. স্মৃতি। দীর্ঘ এক ঘণ্টা সময় নিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর দেড়টায় তারা লাশকাটা ঘর থেকে বের হন।এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. সুমন মুর্শিদী বলেন, ভিসেরা ও সিআইডি রিপোর্ট পাওয়ার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। এই দুই রিপোর্ট পাওয়ার পরই বিস্তারিত জানানো যাবে।
তাসপিয়ার চাচা নুরুল আমিনের দাবি, আদনান, কথিত বড় ভাই ও তার তৈরী করা ‘রিচকিডস’ গ্যাংয়ের সদস্যরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঠাণ্ডা মাথায় তারা হত্যা করে লাশটি সমুদ্র উপকূলে ফেলেছে, যাতে তাদেরকে কেউ ধরতে না পারে।নুরুল আমিন আরো জানান, আগের দিন সন্ধ্যায় আদনানের সাথে দেখা করতে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় তাসপিয়া। এর কিছুক্ষণ পর তাসপিয়াকে কল করেন মা নাঈমা সিদ্দিকা। আর মায়ের কল পেয়ে চটজলদি বেরিয়ে যান নগরীর গোলপাহাড় মোড়ের চায়না গ্রিল নামক চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে।সেখানে পূর্ব থেকে ঠিক করে রাখা সিএনজি-চালিত অটোরিকশাতে তুলে দেয়া হয় তাসপিয়াকে। এরপর আরেকটি অটোরিকশা নিয়ে অনুসরণ করে আদনান।এদিকে, তাসপিয়াকে যে অটোরিকশায় তুলে দেয়া হয়েছে, তার পেছনে ওঁৎপেতে থাকা আদনানের কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্য দুটি মোটরসাইকেলে চড়ে তাসপিয়াকে অনুসরণ করে।নুরুল আমিনের দাবি, এরা শুধু একজন বা দুজনই নয়। এই গ্যাংস্টার গ্রুপের অনেক সদস্যই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। আদনানকে তিনি ঠাণ্ডা মাথার খুনি হিসেবেও মন্তব্য করেন।
পতেঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কাশেম ভূইয়া মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আদনান মির্জাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে আদালতে।ওসি আরো জানান, বুধবার দিনগত মধ্যরাতে নগরীর দক্ষিণ খুলশীর জালালাবাদ আবাসিক এলাকা থেকে আদনান মির্জাকে আটক করা হয়। জব্দ করা হয়েছে মোবাইল ফোন সেট। তার মোবাইলের কললিস্ট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য অ্যাপসের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।নগর পুলিশের কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলা সম্ভব নয়। আমরা বেশ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে সামনের দিকে এগুচ্ছি।
এদিকে,গ্যাংস্টার ‘রিচ কিডস’-এর চার যুবক, দুই বড় ভাই ও অটোরিকশার চালককে নিয়ে চলছে নানান গুঞ্জন। তাসপিয়া হত্যাকাণ্ডের দিন এরাই মূলত আদনানের সহযোগী হিসেবে এগিয়ে আসে।মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর গোল পাহাড় মোড়ের চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে তাসপিয়াকে যে অটোরিকশাতে তুলে দেয় আদনান,সেই অটোরিকশার পেছনেই ছিল দুটি মোটরসাইকেল আরোহী চার যুবক।ওরা কারা,আর হত্যাকাণ্ডের পর এদের অবস্থানইবা কোথায়,তা এখনো বের করতে পারেনি পুলিশ।আর ওই রাত ১০টায় আদনানকে আটকের পর পরই তাসপিয়াদের বাসায় হাজির হন পুলিশের তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসী দুই বড়ভাই ফিরোজ ও আকরাম।আদনানকে ছেড়ে দিতে সময় বেঁধে দেন তারা।এর মধ্যে বাসায় সন্ত্রাসীদের দেখে কন্যাকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের জীবন বাঁচাতেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তাসপিয়ার বাবা।তবে তাসপিয়াকে বাসায় ফেরত পাঠাবে বলে রাত ১১টায় আদনানকে ছাড়িয়ে নেন সেই দুই বড় ভাই।বুধবার সন্ধ্যায় আদনান গ্রেফতার হওয়ার পর পরই সেই দুই বড়ভাইও এখন নিরুদ্দেশ।ধোঁয়াশায় রয়ে গেছে ‘চায়না গ্রিল’ রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে তাসপিয়াকে নিয়ে যাওয়া সেই অটোরিকশা এবং এর চালকের বিষয়টি।বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে অজ্ঞাত হিসেবে তাসপিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।স্থানীয় পথচারীরা মৃতদেহটি দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকার ১৮ নম্বর ব্রিজের উত্তর পাশে পাথরের উপর উপুড় হয়ে পড়ে থাকা লাশটি উদ্ধার করে।(((সিটিজি টাইমস)))
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.