সাতকানিয়ায় পাহাড়ের বুকে ১২ ইটভাটা,পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা…!!!


প্রকাশের সময় :৯ এপ্রিল, ২০১৮ ৩:১৬ : অপরাহ্ণ 560 Views

চট্রগ্রাম অফিসঃ- বাঁশখালী-সাতকানিয়ার ঠিক মাঝখানে পাহাড়ের বুকে মাত্র দুই কিলোমিটারের ব্যবধানে গড়ে উঠেছে ১২টি ইটভাটা। এসব ভাটায় প্রতিদিন পুড়ছে পাহাড়ি কাঠ, আর ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম সীমানায় ছনখোলা গ্রাম।ওই গ্রামের পাশ ঘেঁষেই বাঁশখালীর লটমনি এলাকা।ছনখোলা ও লটমনি এলাকায় পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচটি ইটভাটা।ওই ইটভাটাগুলোতে সমানে পোড়ানো হচ্ছে ইট।অথচ এসব ইটভাটা ঘেঁষেই রয়েছে টিলা ও পাহাড়।শুধু ছনখোলা ও লটমনি এলাকা নয়। সাতকানিয়ার চূড়ামণিতেও পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে সাতটি ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরে ইট প্রস্তুত করে যাচ্ছে।ওই ইটভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে পাশের বনের কাঠ,কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে টিলা ও পাহাড়ের মাটি।ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী,কোনো পাহাড় বা টিলার উপরিভাগে বা ঢালে বা তৎসংলগ্ন সমতলের অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা নিষিদ্ধ।তা ছাড়া সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যেও ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।অথচ ছনখোলা,চূড়ামণি ও লটমনি এলাকায় টিলা-পাহাড় ঘেঁষে ও বনাঞ্চলের আধা কিলোমিটারের মধ্যে এসব ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে।পরিবেশ আইন অনুযায়ী,সংরক্ষিত বনের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। বনের পাশের প্রতিটি ইটভাটাই আধা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে।চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সাবেক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা.নরেন দাশ বলেন,পাহাড়ি ঢালুতে নির্মিত ইটভাটাগুলো লোকালয়ের বাইরে গড়ে তোলার আইন রয়েছে। কালো ধোঁয়ার ফলে শিশুদের পাশাপাশি সুস্থ ব্যক্তিরাও ব্রংকাইটিস,সর্দি,জ্বর,হাঁপানি,শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ,প্রায় ২০ বছর আগে চূড়ামণি এলাকায় প্রথম ইটভাটা নির্মাণ করা হয়।এরপর বছর পাঁচেকের মধ্যে ইটভাটার সংখ্যা বাড়তে থাকে।গত চার বছরের মধ্যে নির্মাণ করা হয় আরও চারটি ইটভাটা। এখন দাঁড়িয়েছে ১২টিতে।এসব ভাটা গড়ে ওঠায় এলাকায় বনাঞ্চলের ক্ষতির পাশাপাশি ফসলি জমিতে উৎপাদন কমে গেছে।অন্যদিকে ইটভাটাগুলোর কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে আশপাশের গ্রামের মানুষ।সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ছনখোলা-লটমনি এলাকার পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠা পাঁচটি ইটভাটাতেই ইট পোড়ানো হচ্ছে।ভাটাগুলোতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পাশের টিলা ও পাহাড়ের মাটি।লটমনি এলাকার একটি পাহাড়ের প্রায় অর্ধেক মাটি ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে।ছনখোলা এলাকার বেশ কয়েকটি টিলার মাটি উধাও হয়ে গেছে।কেবল মাটি কাটার চিহ্নগুলোই টিলার অস্তিত্ব প্রকাশ করছে। চূড়ামণি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এসএমবি ইটভাটার পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাঠ।ওই ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে।এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন,আমার ইউনিয়নের ছনখোলা ও চূড়ামণি এলাকায় গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোতে অবাধে পাহাড়ের মাটি ও বনের কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে।তা ছাড়া ভাটাগুলোর কারণে পাশের গ্রামের ফসলি জমি ও মানুষেরা বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটার মালিক বলেন,পাহাড়ের পাশে নিজের জমিতেই ইটভাটা নির্মাণ করেছি।পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করেও অনুমতি পাওয়া যায়নি।তারপরও বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সংস্থা এসে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করছে।তিনি পাহাড় কেটে মাটি ইটভাটায় ব্যবহারের কথা অস্বীকার করে বলেন,ওই পাহাড়গুলো তো ব্যক্তিমালিকানাধীন।ইটভাটা মালিকরা উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন,উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করে চালানো হচ্ছে।রিট পিটিশনের নির্দেশনা মেনেই ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।উপজেলা প্রশাসন অন্য ইটভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করবে।এদিকে,জমির উপরিভাগ ‘টপ সয়েল’ কেটে নিয়ে ফসলি জমির বিনষ্ট ঠেকিয়ে ফসলের জমি রক্ষায় বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে পত্র প্রেরণ করেছে সাতকানিয়ার বাসিন্দা ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ আ ম ম মিনহাজুর রহমান।বিভাগীয় কমিশনারকে পত্র প্রেরনের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বর্তমানে সাতকানিয়ায় জনসাধারণ চলাচলের অবস্থ নেই।মহাসড়ক এমনকি গ্রামীন সড়ক দিয়েও মাঠির ট্রাক চলাচল করার কারনে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে।নষ্ট হচ্ছে গ্রামীন অবকাঠামো।আমি বিষয়টি উল্লেখ করে মাননীয় বিভাগীয় কমশিনার ও জেলা প্রশাসক মোহদয়কে পত্র দিয়েছি।এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমি উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইব এবং এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রিট পিটিশন দায়ের করব।ডাঃ আ ম ম মিনহাজুর রহমান আরো বলেন, ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চললেও,মাটি কাটা অব্যাহত আছে।এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ২-১ দিনের মধ্যে রিট পিটিশন দায়ের করব।এ ছাড়া বক্তব্য জানতে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের মুঠোফোনে যোগযোগ করা হলে তাঁরা ফোন ধরেননি।সুত্রঃ-(সিটিজি টাইমস.কম)

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!