চট্টগ্রাম মহানগরীতে মোস্তফা মোরশেদ আকাশ নামে এক চিকিৎসকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার দুই নম্বর সড়কের ২০ নম্বর নিজ বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আকাশ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরকল এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে। তিনি এমবিবিএস শেষ করে এফসিপিএস পড়ছিলেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক হামিদুল্লাহ খান জানান, ভোর ৬টার দিকে ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশকে হাসপাতালে আনা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ডা. আকাশ শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যা করেছেন। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ আরও স্পষ্ট হওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
নিহতের স্বজনেরা জানান, পারিবারিক কলহে স্ত্রী তানজিলা হক মিতুর সঙ্গে ঝগড়ার করে বুধবার রাতে আকাশ অভিমানে শরীরে ইনজেকশন পুশ করেন। বৃহস্পতিবার ভোরে তার দেহ পুলিশ উদ্ধার করে।
আত্মহত্যার এক ঘণ্টা আগে আকাশ নিজের ফেসবুকে স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে একটি স্ট্যাটাস দেন, যাতে স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার পাশাপাশি অভিমান এবং ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।
আত্মহত্যার আগে স্ত্রীর সঙ্গে নিজের ছবি দিয়ে স্ট্যাটাসে ডা. আকাশ লেখেন, ‘ভাল থেকো আমার ভালোবাসা তোমার প্রেমিকাদের (হবে প্রেমিকদের) নিয়ে।’
ডা. আকাশের ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে বেশকিছু স্ট্যাটাসে দেখা যায়, দাম্পত্য জীবনে তিনি অসুখী ছিলেন। এসব লেখায় তিনি স্ত্রীর বহুগামিতার অভিযোগ এনেছেন। তা প্রমাণে একাধিক ছেলের সঙ্গে স্ত্রীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবিও দিয়েছেন।
ডা. আকাশ তার স্ত্রীর বখে যাওয়ার পেছনে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির ভূমিকাকেও প্রকাশ্যে এনেছেন, ‘আমার শাশুড়ি দায়ী এসবের জন্য, মেয়েকে আধুনিক বানাচ্ছে। একটু বেশি বানিয়ে ফেলেছে। উনি চাইলে এখনো সমাধান হতো।’
আত্মহত্যার আগে তিনি স্ট্যাটাসে নিজের মায়ের কাছেও ক্ষমা চান, ‘মা তুমি মাফ করে দিও। তোমার স্বপ্নপূরণ করতে পারলাম না। মায়ের ভালোবাসার কখনো তুলনা চলে না।’
ডা. আকাশ লেখেন, ‘আমাদের দেশেতো ভালোবাসায় চিটিংয়ের শাস্তি নেই। তাই আমিই বিচার করলাম। আমি চির শান্তির পথ বেছে নিলাম।’
ফেসবুকে এই দম্পতির বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়ানোর অসংখ্য ছবি দেয়া আছে। কাভার ফটোও বানানো যুগলের সুখময় স্মৃতিগুলো জোড়া দিয়ে, যার একটিতে ‘লাভ’ আকৃতির মধ্যে আঙুলে মিতু ভি এঁকেছেন স্বামীকে পাশে নিয়ে।
তরুণ এই চিকিৎসকের ফেসবুক পোস্টগুলো দেখলে স্পষ্ট, তিনি প্রচণ্ড অভিমান থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে স্ত্রীর চরিত্রও খোলামেলাভাবে সামনে এনেছেন। পবিত্র শবে কদরে একবার স্ত্রী ক্ষমা চাইলে, আপসের পর দু’জনে এক বছর সুখে ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন ডা. আকাশ।
তরুণ এই চিকিৎসকের এমনি একটি স্ট্যাটাস এখানে হুবহু দেয়া হলো, যাতে স্ত্রী মিতুর সঙ্গে তার পরিচয়, বিয়ে থেকে দাম্পত্য কলহ ফুটে উঠেছে—
আমার সাথে তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর ২০০৯ সাল থেকে পরিচয়। প্রচণ্ড ভালোবাসি ওকে। ও নিজেও আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমরা ঘুরে বেড়াই, প্রেম করে বেড়াই, আমাদের ভালোবাসা কমবেশি সবাই জানে। আমাকে অনেকে বউ পাগলাও ডাকত।
২০১৬-তে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক দিন আগে জানতে পারি- কিছুদিন আগে শোভন নামে চুয়েটের ৮ম ব্যাচের এক ছেলের সাথে ও হোটেলে রাত কাটায়; আর কত কি, লজ্জা লাগছে সব লিখতে।
ততদিনে সবাইকে বিয়ের দাওয়াত দেয়া শেষ। আমাকে যেহেতু চট্টগ্রামের সবাই চিনে, তাই বিয়ে কেনসেল (বাতিল) করতে পারিনি লজ্জাতে।
ওর মোবাইলে দেখি, ভাইবারে দেখতে পাই মাহবুব নামে কুমিল্লা মেডিকেলের ব্যাচম্যাটের সাথে হোটেলে… শত শত ছবি। আমিতো বেঁচে থেকেও মৃত হয়ে গেলাম। তারপর ক্ষমা চাইল (স্ত্রী) শবে কদরের রাতে কান্না করে পা ধরে আর কখনো এমন হবে না। আমিও ক্ষমা করে দিয়ে এক বছর ভালভাবেই সংসার করলাম।
তারপর ও দেশের বাইরে আমেরিকা গেল, মাঝখানে একবার ঈদ পালন করতে আসল সেপ্টেম্বরে, ২০১৮। আবার চলে গেল ইউএসএমএলই এর প্রিপারেশন নিচ্ছিল। সাথে ফেব্রুয়ারিতে ২০১৯ এ আমার ইউএসএ যাওয়ার কথা।
জানুয়ারি, ২০১৯-তে জানতে পারি ও রেগুলার ক্লাবে যাচ্ছে, মদ খাচ্ছে প্যাটেল নামে এক ছেলের সাথে…। আমি বারবার বলছি- আমাকে ভাল না লাগলে ছেড়ে দাও। কিন্তু চিট কর না মিথ্যা বলো না। আমার ভালোবাসা সব সময় ওর জন্য ১০০% ছিল। আমি আর সহ্য করতে পারিনি। আমাদের দেশেতো ভালোবাসায় চিটিংয়ের শাস্তি নেই। তাই আমিই বিচার করলাম। আর আমি চির শান্তির পথ বেছে নিলাম।
তোমাদেরও বলছি— কাউকে আর ভালো না লাগলে সুন্দরভাবে আলাদা হয়ে যাও, চিট কর না। মিথ্যা বলো না। আমি জানি, অনেকে বিশ্বাস করবে না। এত অমায়িক মেয়ে আমিও এসব দেখে ভালোবেসে ছিলাম। ভিতর-বাহির যদি এক হতো। সবাই আমার দোষ দেবে, সবকিছুর জন্য, তাই ব্যাখ্যা করলাম।
আমার শাশুড়ি এজন্য দায়ী এসবের জন্য, মেয়েকে আধুনিক বানাচ্ছে। একটু বেশি বানিয়ে ফেলেছে। উনি চাইলে এখনো সমাধান হতো। মা তুমি মাফ করে দিও তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না। মায়ের ভালোবাসার কখনো তুলনা চলে না।
বারবার বলছি— ভালো না লাগলে আলাদা হয়ে যাও, চিট কর না, মিথ্যা বলো না, বিশ্বাস ভাঙ্গিও না। হাজার হাজার ছবি আছে, আরো খারাপ খারাপ দিলাম না, যারা বিলিভ করবে, এতেই করবে। না করলে নাই। এই ৯ বছরে বয়ফ্রেন্ড স্বামী-স্ত্রীর মতো আবার সবই করে গেল।
ও আমাকে আর কি ভালোবাসল? কিসের বিয়ে করল? আমি শেষ পর্যন্ত চাইছি সব চুপ রেখে সমাধান করে ওকে নিয়ে থাকতে। আমার শ্বশুর আর শাশুড়িকে বারবার বলছি— উনারা সমাধান করতে পারত! আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী আমার বউ। ৯টা বছর যাকে ১০০% ভালবাসছি। ওকে প্ররোচনা দিছে মইন ও মিথি নামে দুই ফ্রেন্ড। ওর মা-বাবা আমাকে মানসিক কষ্ট দিয়ে মারছে। আমিই এই বেঈমানি মেনে নিতে পারি নাই। তারপরও ভুলে আমি সুন্দর সংসার করতে চাইছি।
আমার শাশুড়ি-শ্বশুর আর বউ নামের কলঙ্ক করতে দিল না আমাকে প্রতিনিয়ত প্রেসার দিয়ে গেছে। আমার বউ আমার মার নামে যা-তা তা বলে গেছে। আমাকে ভালো না লাগলে ছেড়ে চলে যাইতে বলছি ১০০ বার। আমি বোকা ছিলাম, তুমি সুখে থেক। অনেকে ওর ফ্যান বিলিভ করবে না আমি জানি। তবে এটাই সঠিক। মরার আগে কেউ মিথ্যা বলে না আর বাইরে থেকে মানুষের ভিতরের চেহারা বুঝা যায় না।
ডা. আকাশ আরেকটি স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘ও সুন্দরী, পড়াই ভালো, গান পারে সত্য; কিন্তু ও ভালো অভিনেত্রী, ভালো চিটার। যাদের ইচ্ছা বিলিভ করবে, যাদের ইচ্ছা নাই, করবে না। তবে কাউকে ভালোবেসে চিটারগিরি কর না।’