গভীর নলকূপ বসানোর জন্য মাটি খুঁড়ে পাইপ ঢোকানোর পর সেখান থেকে বের হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। খুলনা মহানগরীর লবণচরা থানার মাথাভাঙ্গা রেল সেতু সংলগ্ন কাজীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর রাজের বাড়ির নলকূপের পাইপ থেকে এ গ্যাস বের হচ্ছে। গত ১৯ দিন ধরে এই গ্যাস থেকে জ্বলছে আগুনও। তাতে আবার রান্না এবং পানি গরমের কাজও সারছেন প্রতিবেশীরা।
এদিকে, পাইপ লাইন থেকে বের হওয়া প্রাকৃতিক গ্যাস দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎসুক মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন রাজের বাড়িতে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বাড়ির মালিক মো. জাহাঙ্গীর রাজ জানান, তিনি ৩ বছর আগে মাথাভাঙ্গার কাজীপাড়ায় ২ কাঠা জমি কিনেন। গত এক মাস আগে সেখানে দ্বিতল বাড়ির কাজ শুরু করেন। এ জন্য বাড়ির প্রবেশ মুখে গেটের কাছেই একটি ৮৭০ ফুটের গভীর নলকূপ স্থাপন করেন। নলকূপ স্থাপনের সময় সেখান থেকে বুদবুদ উঠতে দেখা যায়। কিন্তু নলকূপ স্থাপনের কাজে নিয়োজিতরা তাকে জানান গোবর দেওয়ার কারণে সেখান থেকে বায়োগ্যাস উঠতে পারে। এ কারণে তিনি গুরুত্ব দেননি। ১৮-১৯ দিন আগে নলকূপ বসানোর পর প্রথম দিকে শো শো শব্দ এবং পানি বুদবুদ করতে থাকে। এ সময় তিনি দেশলাইয়ের কাঠি দিয়ে জ্বালিয়ে দেখেন সেখানে আগুন জ্বলছে। এরপর থেকে সেখানে অনরবত গ্যাস বের হচ্ছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এসে দেখে গেছেন।
রাজের প্রতিবেশী মো. ইমাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, খবর শুনে সেখানে গিয়ে দেখি টিউবওয়েলের পাইপের পাশ দিয়ে গ্যাস উঠছে। বালু সরিয়েও দেখেছি। গ্যাস লাইট জ্বালালে আগুন জ্বলছে।
মাথাভাঙ্গা কাজীপাড়া সিদ্দিকীয়া জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী মো. কামরুল ইসলাম বলেন, গ্যাস দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় জমাচ্ছেন রাজের বাড়িতে। তবে কী কারণে গ্যাস বের হচ্ছে, তা এখনও জানা যায়নি।
অপর প্রতিবেশী মীর মোক্তার বলেন, মাটির নীচ থেকে গ্যাস উঠার বিষয়টি শুনে তিনিসহ অনেকেই দেখতে এসেছেন। এখানে গ্যাস উঠছে, তাতে আগুনও জ্বলছে। তবে এভাবে আগুন জ্বলতে থাকলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন তিনি।
দেখতে আসা তানজিলা বেগমসহ কয়েকজন গৃহবধূ বলেন, তারা রান্নার কাজে যে এলপি গ্যাস ব্যবহার করেন, এ পাইপ লাইন থেকে বের হওয়া গ্যাসের গন্ধও একই। ফলে এটি প্রাকৃতিক গ্যাস বলেই ধারণা তাদের।
খুলনার টুটপাড়া ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, পাইপ থেকে গ্যাস উঠছে এমন খবর পেয়ে সরেজমিন গত সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। সেখানে পাইপের পাশ দিয়ে গ্যাস বের হচ্ছে। মাটি সরালে গ্যাসের চাপ বেশি হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল টিউবওয়েলের পাইপ বসাতে কাঁচা গোবর দেওয়ার কারণে বায়োগ্যাস বের হচ্ছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এটা থেকে এলপি গ্যাসের গন্ধ আসছে। তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটা প্রাকৃতিক গ্যাস। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এখন পর্যবেক্ষণ টিম ও খনিজ বিষয়ে অভিজ্ঞরা পরীক্ষা করে বিস্তারিত জানাতে পারবেন। তারপরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।