রাজধানীর হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) রাতে গুলশান নিকেতন হাতিরঝিল ব্যবস্থাপনা ভবন প্রাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৬টি পরিবারকে এ ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে ফ্ল্যাটের কাগজপত্র তুলে দেন।
এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আজ বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাট দেওয়া হলো। ক্ষতিগ্রস্ত আজকের এ দিনটির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছিলেন। এটা অনেকদিনের প্রত্যাশা ছিল, আজ তা পূরণ হলো।
তিনি বলেন, আজকে যারা ফ্ল্যাট পেয়েছেন তাদের কান্নাটাও আমি দেখেছি। জমি অধিগ্রহণের পর তারা রাত ২-৩টা পর্যন্ত আমার বাসায় হুলস্থুল পর্যন্ত করেছে। এখনের দিনে তো জমি অধিগ্রহণ হলে তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। হাতিরঝিলের আশপাশ এলাকার এক কাঠা জায়গার দাম এখন ১০ কোটি টাকা হয়েছে। অধিগ্রহণের সময় নিচু জমিগুলোর ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল দেড় লাখ টাকা আর উঁচু জমিগুলোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা। সেজন্যই তাদের কান্নার রোল ছিল। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে একাধিকবার আবেদন করেছেন এবং অনেক সময় রাস্তা অবরোধ করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, তখন আমি এই এলাকার সংসদ সদস্য। প্রধানমন্ত্রী তখন জিজ্ঞাসা করলেন যে, এই এলাকার লোকজন কেন মন্ত্রীপাড়ায় এলো। তখন প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্তদের দুঃখের কথা জানলেন। হাতিরঝিল প্রকল্প যেদিন উদ্বোধন হয় সেদিনও আমি সংসদ সদস্য হিসেবে আমার বক্তব্যে এই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের দুঃখের কথা তুলে ধরি। তখন প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘নো’ বলে কোনো শব্দ নেই। জনগণের কষ্ট লাঘব করার জন্য প্রধানমন্ত্রী সবসময় পদক্ষেপ নিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তবে যেসব ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো কোনো প্লট বা ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাননি তারা গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর কাছে যাবেন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে। তিনি আমাকে বলেছেন, তাদেরও একটা ব্যবস্থা করে দেবেন।
এসময় মন্ত্রী হাতিরঝিল প্রকল্পের সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, হাতিরঝিল ছিল একসময় নোংরা পানির একটি ভাগাড়। আরও আগে আমরা দেখেছি হাতিরঝিলের স্বচ্ছ পানিতে নৌকা করে বিভিন্ন পণ্য আসতো। কিন্তু সেটি হারিয়ে গিয়ে হাতিরঝিল পরিণত হয়েছিল নোংরা ভাগাড়ে। আর এই নোংরা ভাগাড় থেকে হাতিরঝিল এখন একটি উল্লেখযোগ্য স্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে এসে আমরা ভুলে যাই যে অস্ট্রেলিয়া নাকি সিঙ্গাপুর নাকি বাংলাদেশে এসেছি।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.শহিদুল্লাহ খন্দকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাতিরঝিল থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণের কথা উল্লেখ করে বলেন, হাতিরঝিল ও এর আশপাশ এলাকাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা একটি থানা করেছি, যার নাম হাতিরঝিল থানা। কিন্তু হাতিরঝিল থানার কোনো স্থায়ী ভবন নেই। একটি ভাড়া বাসায় থানার কার্যক্রম চলছে। থানা ভবন নির্মাণের জন্য একটি জায়গা বরাদ্দ হয়েছে। সে জায়গাটি আমাদের দিয়ে দিলে আমরা হাতিরঝিল থানার জন্য একটি স্থায়ী ভবন নির্মাণ করবো। এছাড়া ওই থানা ভবনের পাশেই এই এলাকার জন্য একটি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন নির্মাণ করবো।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি নগরীর অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এর অংশ হিসেবে রাজউকের হাতিরঝিল এলাকার বেগুনবাড়ি ধাপ সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন জন্য ৩১০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। এর ফলে এখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও আবাসন সমস্যা লাঘবের উদ্দেশ্যে বেগুনবাড়ি মৌজায় ১৫ তলা বিশিষ্ট দুটি অ্যাপার্টমেন্টে ১১২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। বেগুনবাড়ির এই ফ্ল্যাটগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যই নির্মাণ করা হয়।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বারবার আমাকে তাগিদ দিয়েছেন। তিনি অত্যন্ত ভদ্র ও ভালো মনের মানুষ। তিনি এই (তেজগাঁও) এলাকার সংসদ সদস্য। তার নেতৃত্ব এবং আচার-ব্যবহারের প্রসংশা অতুলনীয়।