প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করেছিল তাদের ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। আন্তর্জাতিকভাবে তাদের চক্রান্ত অব্যাহত আছে। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগেরর ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচানা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঞ্চলনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে রাজনীতি করছে তারাই রাজনীতিতে টিকে আছে। আর যারা অর্থের লোভে রাজনীতিতে এসেছিল রাজনীতি থেকে তাদের নাম মুছে গেছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে রাজনীতি করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ৭৫-এর আগেও আওয়ামী লীগের নাম নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। তারা সব চেষ্টা করেছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে তারা আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলতে পারেনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে থাকে। প্রথমে তারা আমাদের মায়ের ভাষার ওপর আঘাত করে। সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বাংলা ভাষার আন্দোলন শুরু করেন। এই ভাষা আন্দোলনের জন্য তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। আন্দোলন না চালোনোর মুচলেকা নেওয়ার পরও বঙ্গবন্ধু তা চালিয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি আমাদের স্বাধীনতা উপহার দিয়ে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একটি সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন—সবার কাজ থাকবে, ঘর থাকবে, সবাই খাবার পাবে, সবাই শিক্ষিত হবে। ভালো চিকিৎসা পাবে। বঙ্গবন্ধু এ দেশের নিপীড়িত, অসহায়, বঞ্চিত, দারিদ্র্য-ক্ষুধাপীড়িত মানুষদের ভাগ্য পরিবর্তনে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। সেই সংগ্রামের ফসল স্বাধীন বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ শেষে জাতির পিতা দেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাকে হত্যা করা হলো। যারা ক্ষমতা দখল করলো, তারা এটাকে ভোগ-বিলাসের বস্তুতে রূপান্তরিত করলো। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন না করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে মনোযোগী ছিল তারা।’
জাতির জনক যেভাবে চেয়েছিলেন, তেমনই একটি শিক্ষা-সংস্কৃতি-অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ ও মর্যাদাশীল জাতি গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার- এ কথা উল্লেখ করে তিনি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার জন্য গৃহীত নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারুণ্যই শক্তি। তরুণ সমাজের ব্যবসায় ও বিনিয়োগের ব্যবস্থা রেখেছি। সহজে তারা ঋণ নিতে পারে। তরুণদের ট্রেনিং দিলেই ভালো করবে। যুবকদের কর্মসংস্থান এবং যথাযোগ্যভাবে গড়ে তোলার জন্য যুবলীগকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অনেক সংগ্রামের পর এ দেশে গণতন্ত্র ফিরেছে। সেই সংগ্রামে যুবলীগেরও অবদান ছিল। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেন যুবলীগেরই ছিল। যুবলীগকে আগামীতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বিএনপি ভেবেছিল দুই হাজার কোটি টাকা থাকলে তাদের কেউ সরাতে পারবে না। কিন্তু তাদের সরতে হয়েছে। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, আমি নাকি বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবো না। আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’ কিন্তু শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এখনও আমরা ক্ষমতায় আছি বলে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারছি। এজন্য আমরা মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ।
করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, অপপ্রচারে মনোযোগ দেওয়া যাবে না। এত কিছু শুনলে সামনে এগুনো যায় না। যখন করোনার ভ্যাকসিন আসছে, নানাজন নানা কথা বলেছে। আমরা কিন্তু কোনও দিকে তাকাইনি। অ্যাডভান্স (ভ্যাকসিনের মূল্য) করে দিয়েছি। যাতে অনুমোদন হলে আমরাই প্রথমে টিকা পাই। পেয়েছিও। আগে মানুষের মাঝে কিছুটা দ্বিধা থাকলেও এখন সেটা কেটে গেছে বলে উল্লেখ করে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘ভ্যাকসিন গ্রহণে ভয়ের কিছু নেই। তবে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে।