রবীন্দ্রনাথ বাঙালী জাতীয়তাবোধের অন্যতম রূপকার ॥ প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশের সময় :৯ মে, ২০২২ ৯:৩৬ : অপরাহ্ণ 240 Views

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,বাঙালীর অস্তিত্ব ও চেতনার সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ওতপ্রোতভাবে মিশে আছেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার গান হয়ে উঠেছিল প্রেরণার উৎস। বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তিনি স্বাতন্ত্র্য চিহ্নিত নির্দেশকের ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আমাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীতস্রষ্টা। চিত্রকর, সমাজচিন্তক এবং মানবতাবাদী দার্শনিক হিসেবেও রয়েছে তার বিশ্বখ্যাতি। বাঙালী জাতীয়তাবোধের অন্যতম রূপকারও তিনি।

রবিবার (৮ মে) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। বিশ্বকবির জন্মদিনে তার অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শাশ্বত বাংলার মানুষের দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা অর্থাৎ সব অনুভব আর বিশ্বস্ততার সঙ্গে ওঠে এসেছে রবীন্দ্রসাহিত্যে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছাতেই রবীন্দ্রনাথের অনবদ্য সৃষ্টি ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি আমাদের জাতীয় সংগীত করা হয়। জাতির পিতা যে কোনো সংকট উত্তরণে প্রেরণা নিতেন রবীন্দ্রসাহিত্য থেকে।

শেখ হাসিনা বলেন, রবীন্দ্রনাথ বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসেন ১৯১৩ সালে, গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে। তিনিই প্রথম এশীয় হিসেবে বিশ্বসাহিত্যের এ সর্বোচ্চ স্বীকৃতি অর্জন করেন। ভারতীয় সংস্কৃতির বহুত্ববাদ, বৌদ্ধ ধর্মের অহিংস মতাদর্শ ও ইসলাম ধর্মের সুফিবাদ এবং বাংলার বাউলদের ভাববাদী চেতনার সমন্বয় সাধন করে তিনি বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেন।

সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন অহেতুক যুদ্ধ-সংঘাত, মৌলবাদের উত্থান, জাতীয়তাবোধের সংকীর্ণতা, শ্রেণিবৈষম্য, হানাহানি- এসবের কারণে রবীন্দ্রনাথ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেছেন। রবীন্দ্রসাহিত্য আমাদের পাঠ করতে হবে প্রাত্যহিক জীবনবোধের আলোকে। তিনি তৎকালীন পূর্ববঙ্গে অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশে আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে। তার জমিদারির দরিদ্র প্রজাদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, সমবায়নীতি ও কল্যাণবৃত্তি চালু করে তাদের ভেতর প্রণোদনা জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ প্রবর্তিত সমবায় ব্যাংক, ক্ষুদ্রঋণের প্রচলন পরবর্তীকালে গ্রামীণ উন্নয়নে একটি মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের একান্ত আপনজন। শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরে অবস্থানকালে এসব অঞ্চলের মাটি ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তার অবদান অনস্বীকার্য। শিলাইদহ ও পতিসর অঞ্চলেই তিনি রচনা করেছিলেন ‘ছিন্নপত্র’র সিংহভাগ এবং অসামান্য কিছু গান। বিশ্বকবির স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথের শিল্পীসত্তার সঙ্গে একাত্ম হয়েছে মানবিক সত্তাও। ফলে সাধারণ বাঙালীর দুঃখ-বেদনার কথক হিসেবে যে রবীন্দ্রনাথকে আমরা পেয়েছি তা পূর্ববঙ্গেরই সৃষ্টি। এসবের পাশাপাশি মানুষের প্রত্যক্ষ কল্যাণ কামনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে ভেবেছেন। শিশুসহ নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন শান্তিনিকেতন। একইসঙ্গে তিনি পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। মানবতাবাদী কবি রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার ক্ষেত্রে চিরকাল বিশ্বের জানালাকে খুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। জীবনের প্রতিটি সমস্যা-সংকট, আনন্দ-বেদনা এবং আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্রসৃষ্টি আমাদের চেতনাকে আন্দোলিত করে।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ ও তার সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চণামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে চিরদিন বাঙালীকে অনুপ্রাণিত করবে। জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্রজয়ন্তীর এবারের আয়োজন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক, এটাই আমার প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
September 2024
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!