পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব নিয়োগ করা হয়েছে।রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে রোববার (১১ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।কবির বিন আনোয়ার বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদটি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ।
কবির বিন আনোয়ার বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ৭ম ব্যাচের কর্মকর্তা।তিনি ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন।তার বাবা আনোয়ার হোসেন রতু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।তার মা সৈয়দা ইসাবেলা ছিলেন ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের একজন অন্যতম সংগঠক। কবিরের মাতামহ সৈয়দা ইসহাক হোসাইন সিরাজী ছিলেন একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি বিখ্যাত বাঙালি লেখক ও কবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ভাই। তার পিতামহ আব্দুস সামাদ মিয়া ছিলেন একজন আইনজীবী, তিনি তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। কবির বিন আনোয়ারের সহধর্মিণী তৌফিকা আহমেদ। তারা ব্যক্তিগত জীবনে এক ছেলে ও দুই কন্যার অভিভাবক।
কবির বিন আনোয়ার তার স্কুল ও কলেজ জীবন সম্পন্ন করেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ, ঢাকা থেকে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৮ সাল হতে অদ্যাবধি তিনি বাংলাদেশ স্কাউটের উন্নয়ন বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
কবির বিন আনোয়ার ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি একাধারে মাঠ প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদে থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী সচিব হিসেবে পররাষ্ট্রে, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে, উপসচিব হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি সিনিয়র সচিব হিসেবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে অধিষ্ঠিত আছেন।
কবির বিন আনোয়ার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা, সেমিনার, কর্মশালা ও নোগোসিয়েশন এ অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ সম্মেলন, ওআইসি সম্মেলন, কমনওয়েলথ্ সম্মেলন এ অংশগ্রহণ করেন এবং হজ পালনে সৌদিআরব গমন করেন। এছাড়াও তিনি ১৭টি দেশে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফরে সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন। তিনি সর্বমোট ৪২টি দেশ ভ্রমণ করেন।
তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদীগুলোর ব্যবস্থাপনা এবং অভিন্ন নদ-নদী বিষয়ক দ্বি-পক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। তারই উদ্যোগে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর পর নেপালের সঙ্গে এবং ১২ বছর পরে ভারতের সঙ্গে যৌথ নদী বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ভারত দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি ‘কুশিয়ারা নদীতে ১৫৩ কিউসেক পানি বন্টন সমঝোতা স্মারক’ সই হয়।
তিনি দেশে ও বিদেশে তার জনমুখী কল্যাণধর্মী কাজের জন্য বহু পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন। তিনি আইটিইউ থেকে ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৮ সালে উইসিস পুরস্কার গ্রহণ করেন। এছাড়া ২০১৬ ও ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন পদক লাভ করেন।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ পদক এবং ২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও তাকে সমাজকল্যাণমূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অতীশ দীপঙ্কর শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতিসহ পেশাগত কর্মক্ষেত্রের বাইরেও তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত।
কবির বিন আনোয়ারের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে অন্যতম বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-১), বিশ্ব ধারা মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম (সংকলন-২), বিস্মৃত মুসলিম মানস, রুপসী বাংলা (১ম খণ্ড), প্রযুক্তি বদলে দিল যারা, অপরুপ বাংলাদেশ (১ম খণ্ড) উল্লেখযোগ্য।