বাংলাদেশ এখন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে : শেখ হাসিনা


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৬ নভেম্বর, ২০২১ ৬:৫৯ : অপরাহ্ণ 301 Views

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ এখন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। শত বাধা অতিক্রম করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে আরো এগিয়ে যাবে।গত বুধবার জাতীয় সংসদে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই নতুন নতুন পরিকল্পনা আর তা বাস্তবায়নের ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ সব খাতেই অগগ্রতির শীর্ষে বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমাদের অঙ্গীকার হবে বাংলাদেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা, দমন-পীড়ন ও বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তর করে বিশ্ব মঞ্চে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন অনুযায়ী সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধশালী একটি দেশ।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রস্তাবে বলেন, সংসদের অভিমত এই যে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উদযাপন বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘উন্নয়নের বিস্ময়’। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সাল থেকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় চার নেতা-সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামানসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় আওয়ামী সরকারের কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, গৃহহীন ৯ লাখ মানুষকে ঘর দেওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম, নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধসহ মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা অর্জিত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ প্রতিটি সূচকে সাধিত হয়েছে অগ্রগতি।’

বিশ্ব অর্থনীতিতে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে। করোনা অতিমারির সংকট উত্তরণে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির চালিকাশক্তি সচল রেখেছে। মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্ণফুলী টানেলসহ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ বিশ্বে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।’

ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বাংলাদেশের সফলতার জয়যাত্রা বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়ন ও প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে জাতীয় সংসদ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে তারুণ্যদীপ্ত বাংলাদেশ সব চ্যালেঞ্জ উত্তরণ ঘটিয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণ-বৈষম্যহীন, উন্নত-সমৃদ্ধ ও জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে অধিষ্ঠিত হোক এটাই আমাদের প্রত্যয়।’

তাঁর নিজের আনা কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারার প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিতের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, জনগণের আয়ুস্কাল বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সূচকে দেশকে তাঁর সরকার এগিয়ে রাখতে পেরেছে। কারণ পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং এর সফল বাস্তবায়নেই সরকারের সাফল্য এসেছে। যে কারণে দেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের মাহেন্দ্রক্ষণেই তাঁর সরকার আজ দেশের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে পারছে। একে ধরে রেখেই দেশকে আরো সামনে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে দেশকে ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দেওয়ায় তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য আমাদের দেশের মানুষ যাতে যথাযথভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে সে ধরনের প্রশিক্ষণ এবং সেভাবে ডিভাইসগুলো গড়ে তোলার পদক্ষেপও সরকার নিয়েছে। ‘অর্থাৎ বাংলাদেশকে একটি আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন একটি দেশ হিসেবে এবং বাঙালি জাতিকে এটি আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন উন্নত-সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। যে স্বপ্নটা জাতির পিতা দেখেছিলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। ইনশাল্লাহ সেই সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়তে পারব। আজকের প্রস্তাবে আমি সেই প্রত্যয়টাই ব্যক্ত করেছি’, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনশা আল্লাহ জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ রূপেই বাংলাদেশ সারাবিশ্বে আগামীতে মাথা উঁচু করে চলবে। করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে ৮০ শতাংশ মানুষকে তিনি ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসার প্রত্যয়ের পুনরোল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কোটি মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে। ভ্যাকসিনের কোনো অভাব হবে না। অনেক উন্নত দেশ বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেয় না বা টেস্ট করে না। তাঁর সরকার কিন্তু বিনা পয়সায় টেস্ট করাচ্ছে, ভ্যাকসিন দিচ্ছে। ধনী-দরিদ্র থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা, সবাই এই ভ্যাকসিন পাচ্ছে। সবাই পাবে। ‘দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে আমরা ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসব,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তাঁর সরকার ‘ক্ষমতাকে জনগণের সেবা করার সুযোগ’ হিসেবে দেখে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। করোনা মহামারি না থাকলে এটাকে আমরা ১৭ ভাগে নামিয়ে আনতে পারতাম। করোনার কারণে কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে। তারপরও উন্নয়নের চাকা কিন্তু আমাদের থেমে থাকেনি। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। ৪১টি অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমরা এভাবে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রস্তাবটি তোলার আগে প্রধানমন্ত্রী সংসদে ভাষণ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির বক্তব্য সংসদের এ আলোচনাকে গৌরবান্বিত করেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের এই যে সংসদ, আমাদের স্বাধীনতার সুফল হচ্ছে এই সংসদ। জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন সেই সংবিধানের ভিত্তিতেই আমাদের নির্বাচন এবং আজকের এই সংসদ।

শেখ হাসিনা এ সময় শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যাতে আগামীতে সুন্দর জীবন পেতে পারে সেজন্যই আমাদের এই পরিকল্পনা এবং তাঁর সরকার দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের ঘরে এখন বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে তাঁর সরকারের লক্ষ্য দেশের একটি মানুষও ঠিকানাবিহীন থাকবে না। কাজেই সবার জন্য ঘর দেওয়ার প্রকল্প তাঁর সরকার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার পর বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিন সরকার এবং বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা প্রস্তাবটির ওপর আলোচনা করবেন। পরে প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে পাসের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!