প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিবেশ-সংরক্ষণে তার সরকারের সফলতার কারণে ‘পরিবেশ কূটনীতি’তে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের নেতৃত্ব প্রশংসিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা পরিবেশ বিপর্যয়ে সংকটাপন্ন দেশগুলোর স্বার্থ-সুরক্ষায় ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)’ এবং ‘ভালনারেবল-২০ এর অর্থমন্ত্রীদের জোটের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। আমরা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি করছি। জলবায়ুর পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে টেকসই উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ বাস্তবায়ন করছি। আমরা জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসাবে ইতোমধ্যেই ১ কোটি গাছের চারা রোপণ করেছি।”
প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে গতকাল এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য অনুযায়ী আমাদের জাতীয় প্রতিপাদ্য ‘প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গীকার’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত দেশগুলোর লাগামহীন উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা ও শিল্পায়নের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রার ক্রমাগত বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহিষ্ণুজাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণায় প্রথমবারের মতো বরাদ্দ দিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের উদ্যোগে গত ১২ বছরে বৈরী পরিবেশে সহনশীল বিভিন্ন ফসলের মোট ১০৯টি উন্নত/উচ্চ উৎপাদনীল জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। ২০০৯ সালে নিজস্ব সম্পদ থেকে আমরা ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। আমরা ২০১২ সালের ২১ এপ্রিল ইন্টারগোভারমেন্টাল সায়েন্স পলিসি প্ল্যাটফরম অন বাইওডাইভারসিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সারভিসেস (আইপিবিইএস) (Intergovernmental Seience Policy Platform on Biodiversity and Ecosystem Services (IPBES)-এর সদস্যপদ লাভ করেছি এবং সংস্থাটির প্রাধিকার অনুযায়ী বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ আমি জাতিসংঘ কর্তৃক ২০১৫ সালে ‘চ্যাম্পিয়ন্স অভ্ দ্য আর্থ’ সম্মাননা পেয়েছি, যা আমি দেশবাসীকে উৎসর্গ করেছি। আমরা ‘জাতীয় পরিবেশ নীতি, ২০১৮’ এবং ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনা (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৯’ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ‘গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন’-এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস ঢাকায় স্থাপন করেছি। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ঘোষিত বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ দশকে (২০২১-২০৩০) আমরা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ওপর মনোনিবেশ করেছি। আমরা জাতীয় সৌরশক্তি কর্মপরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) বাস্তবায়ন শুরু করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের কারণে মানবজাতি ও অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রকৃতি যেন কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সারাবিশ্ব একসঙ্গে ‘লকডাউন’ হওয়ার ফলে পরিবেশ দূষণ কমেছে, পৃথিবী একটি গাঢ় সবুজ গ্রহে পরিণত হয়েছে। এই মহামারি থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ একটি সবুজ-পৃথিবী সৃষ্টিতেই মনোনিবেশ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে, দলীয়ভাবে এবং সরকারি উদ্যোগে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল রক্ষাকারী ঝাউবেষ্টনী সৃষ্টি করেছিলেন। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে জানমালের সুরক্ষা দিতে বেড়িবাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও মুজিবকিল্লা নির্মাণ করেছিলেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগ ১৯৮৫ সাল থেকে প্রতিবছর আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র এই তিন মাস সমগ্র দেশে ফলজ, বনজ ও ভেষজ এ তিন প্রজাতির গাছ লাগানোর কর্মসূচি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করছে।’
বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে এ দেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলবেন। প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব ‘পরিবেশ দিবস ২০২১’ উদযাপন উপলক্ষ্যে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.