ছেলেমেয়েরা যেন ঘরের খেয়ে বাবা-মায়ের চোখের সামনে থেকে পড়ালেখা করতে পারে সেজন্য সরকার জেলাপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতি জেলায় একটি করে সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘বহুমাত্রিক’ করে দিচ্ছে। প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি, ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে আধুনিক যুগে কী কী ধরনের বিষয় লাগে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছি।
রোববার দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি, টিউশন ফি, ভর্তি সহায়তা ও চিকিৎসা অনুদান বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে এ দিন এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮২ জন শিক্ষার্থীকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উপবৃত্তি, টিউশন ফি, ভর্তি সহায়তা ও চিকিৎসা অনুদান বিতরণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী জানান, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৪৫ কোটি ৮৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বাবদ বিতরণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ সময় পটুয়াখালীর গলাচিপা, সুনামগঞ্জের বিশ্বম্বরপুর উপজেলা এবং বান্দরবান সদর উপজেলা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, কারিগরি শিক্ষার প্রসারে প্রতিটি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন করা হচ্ছে এবং প্রতিটি বিভাগীয় সদরে ১টি করে মহিলা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপন করা হচ্ছে। প্রাথমিকসহ মাধ্যমিকপর্যায়ের শিক্ষায় সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের জন্য বর্ধিত হারে উপবৃত্তি প্রদান করে যাচ্ছে। ফলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লিঙ্গ সমতা অর্জন করায় বাংলাদেশ বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে আমি একটু বলতে চাই। দেখা যাচ্ছে যে, মেয়েদের সংখ্যাই বেশি এবং ছেলেদের সংখ্যাটা কমে যাচ্ছে। সেটা যেন না হয় সেদিকে একটু নজর দেবেন। কারণ আমাদের লিঙ্গ সমতাটা একটু অন্য ধরনের হয়ে যাচ্ছে। ছেলেরা কেন কমে যাচ্ছে সেই বিষয়টা একটু দেখা দরকার। আমি মনে করি অভিভাবক, শিক্ষক সবাইকেই এটা দেখতে হবে।
বর্তমান সরকার দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষাকে বহুমাত্রিক করতে কাজ করছে উলেস্নখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করেছি অর্থাৎ বিষয় নির্বাচন করে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় যে ধরনের শিক্ষার গুরুত্ব বেশি আমরা সেভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করে দিচ্ছি। যাতে সবাই শিক্ষাটা যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারে। বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষাটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কেননা, এটা দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এ বছরের প্রথম দিন ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৩৯৪টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৬৬ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
আগামী ৩০ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারী যারা রয়েছেন সবাইকেই টিকা নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার নিরক্ষরতামুক্ত দেশ গড়ে তুলতে ‘নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ শীর্ষক’ একটি প্রকল্প হাতে নেয়। সেখানে আনুষ্ঠানিক, উপানুষ্ঠানিক, মসজিদ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানভিত্তিক এবং বয়স্ক শিক্ষার ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছিল। এক্ষেত্রে বিভিন্ন এনজিওসহ বিভিন্ন সংগঠনকে কাজে লাগানো হয় বয়স্ক শিক্ষার জন্য।
তিনি আরও বলেন, এখানে আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিটি জেলাকে নিরক্ষরতামুক্ত ঘোষণা করা এবং এর ফলও পেতে শুরু করে। সবার উদ্যোগে সবার সহযোগিতায় খুব অল্প সময়েই কয়েকটি জেলাকে নিরক্ষরতামুক্ত ঘোষণা করা সম্ভব হয়।