খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে বিএনপির দাবির প্রেক্ষাপটে বুধবার যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এনিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া বক্তৃতায় খালেদা জিয়ার আমলে আওয়ামী লীগের অসুস্থ নেতাদের উপর নির্যাতনের কথাও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে কারাগারে যাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে দেড় বছর ধরে বাইরে রয়েছেন।
এরমধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর এখন লিভার সিরোসিস নিয়ে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি।
উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ পাঠানোর দাবি বিএনপি জানিয়ে এলেও আইনগতভাবে তা সম্ভবপর নয় বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এ কারণে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকিও দিচ্ছে বিএনপি।
বুধবারের সভায় বক্তৃতায় শেখ হাসিনা ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হাসপাতালে’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কথা তুলে ধরেন।
বিএনপির আন্দোলনের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন পর আন্দোলন করার একটা সুযোগ পেয়েছে। খুব ভালো, তারা আন্দোলন করুক। কিন্তু আমার যতটুকু করার ছিল, সেটা কিন্তু করেছি।”
খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে তাকে কারামুক্ত করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“তারা আমাদের (তিনি ও বোন শেখ রেহানা) কাছে আসল যখন, খুব স্বাভাবিকভাবে মানবিক দিকে থেকে আমি তাকে তার বাড়িতে থাকার আমার এক্সিকিউটিভ পাওয়ার, অর্থাৎ নির্বাহী যে ক্ষমতা আমার আছে, সেটার মাধ্যমে আমি তার সাজাটা স্থগিত করে তাকে তার বাসায় থাকার অনুমতি এবং চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছি।”
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার মধ্যেও তাকে দেখতে ছেলে তারেক রহমান ও চিকিৎসক স্ত্রী জোবাইদা রহমানের দেশে না আসার সমালোচনাও করেন শেখ হাসিনা।
খালেদার ক্ষেত্রে উদারতা দেখানোর কথা যারা বলছেন, নিজের উপর জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার আমলে নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দিন ১৫ অগাস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপনের কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “চার-পাঁচটা তারিখ হয় কীভাবে? কোথাও ৫ সেপ্টেম্বর, কোথাও ১৯ অগাস্ট আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হয়ে গেল ১৫ অগাস্ট।
“ওই দিন আমরা যারা বাবা,মা,ভাই,সন্তান হারিয়েছি..আমাদের মনে আঘাত করা। আমাদেরকে কষ্ট দেওয়া। এটাই তো? এই কষ্ট দেওয়ার জন্যই তো খালেদা জিয়া ১৫ অগাস্ট তার জন্মদিবস পালন করে।”
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিচারের পথ বন্ধ করা, খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য জিয়া ও খালেদা জিয়াকে দায়ী করার পাশাপাশি জিয়ার আমলে তার দেশে ফেরায় নানাভাবে বাধা দেওয়ার কথাও বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
“কতটা জঘন্য মনোবৃত্তি, সেটাই মানুষকে জানতে হবে। কত হীনমন্যতায় ভোগে। খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ই শুধু না,পুরস্কৃতই শুধু না, তাদের এই কাজ করার উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে আমাদেরকে আরও আঘাত দেওয়া।”
এরপরও খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।
“আমরা যতটুকু দিয়েছি,তাকে যে বাসায় থাকতে দিয়েছি,তাকে যে ইচ্ছামতো হাসপাতালে নিচ্ছে,চিকিৎসা করছে, এটাই কি যথেষ্ট না? এটাই কি অনেক বড় উদারতা আমরা দেখাইনি? সেটাও তো দেখিয়েছি। আর কত? আমার কাছ থেকে আর কত আশা করে তারা? কীভাবে আশা করে?”
যারা খালেদার মুক্তির সুপারিশ করছেন, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবে, আবার দুর্নীতিবাজের জন্য কান্নাকাটিও করবে। এই ধরনের দ্বৈত মানসিকতা কেন?”
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কার নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “আজকে তার (খালেদা) চিকিৎসার জন্য এত চেঁচামেচি করে বেড়াচ্ছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে আমাদের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানকে সিএমএইচে পর্যন্ত চিকিৎসা করতে দেয় নাই। এমনকি সে যখন আইসিইউতে ভর্তি তাকে স্ট্রেচারে করে কোর্টে নিয়ে হাজির করেছে। এরশাদকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল, তাকে চিকিৎসার জন্য কোনোদিন সুযোগ দেয়নি। রওশন এরশাদকে দেয়নি।
“আমাদের পার্টির অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করে যে অকথ্য অত্যাচার করেছে। বাহাউদ্দিন নাছিম থেকে শুরু করে মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাবের হোসেন, শেখ সেলিমসহ বহু নেতাদের গ্রেপ্তার করে তাদের উপরে অকথ্য অত্যাচার করেছে। নাছিমকে তো এমন অত্যাচার করেছিল যে তাকে মৃত মনে করে তাড়াতাড়ি কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। যা হোক সে বেঁচে গেছে। সেই অত্যাচারের ভিডিও নিয়ে খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া দেখে উৎফুল্ল হয়েছে। এই ধরনের হিংস্র একটা চরিত্র আমরা দেখেছি।”
জিয়ার আমলে নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সাজেদা চৌধুরীর অপারেশন হয়েছিল, ঘা শুকায়নি, সেই ব্যান্ডেজ অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে জিয়াউর রহমান ভরেছিল। ঠিক একই অবস্থা মতিয়া চৌধুরীর, তার তখন টিবি হয়েছিল, অসুস্থ ছিল, তাকেও জেলে দিয়েছিল।”
খালেদা জিয়ার মামলায় দণ্ডের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল, সেই টাকা এতিমদের হাত পর্যন্ত কোনোদিন পৌঁছায়নি। সে টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে রেখে দিয়েছে। নিজেই খেয়েছে সে টাকা। সেই টাকা রেখে সেই ভোগ করেছে।
“অথচ এতিমের সম্পদ আত্মসাত কর না- এটা কোরআন শরীফের নির্দেশ। নবী করিম (সা.) বলে গেছেন। আর এতিমের অর্থই আত্মসাত করেছে। কাজেই সে সাজা পেয়েছে এবং সেই সাজা সে ভোগ করছে।”
আরাফাত রহমান কোকো মারা গেলে তাকে দেখতে গিয়ে খালেদা জিয়ার বাড়ির ফটক থেকে ফিরে আসার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি গেছি একটা মা সন্তানহারা, তাকে সহানুভূতি দেখাতে, আর সেখানে এইভাবে অপমান করে ফেরত দিয়েছে আমাকে।”
“তারা যে সহানুভূতি দেখাতে বলে তারা যে সহযোগিতা চায়, খালেদা জিয়া কি আচরণ করেছে?” বিএনপি নেতাদের কাছে সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।
২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার আগে খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, কোনোদিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না- এই বক্তৃতাই তো খালেদা জিয়া দিয়েছিল এবং আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না।
“তো আল্লাহর খেলা এটাতো বোঝা ভার। খালেদা জিয়াই প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেনি, বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারেনি। এটা তার উপরই ফলে গেছে।”
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.