বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম চত্বরে ঢুকলে মনে হবে না এটা দেশের প্রধান ক্রীড়া ভেন্যু। জাতির পিতার নামের এই স্টেডিয়ামের পরিবেশ ক্রীড়াবান্ধব করে তোলা যায়নি দীর্ঘদিনেও। ভেতরে দেশের শীর্ষ ক্লাবগুলোর কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যাচ চলাকালীনও বাইরে থাকে গাড়ি আর রিকশার জট। খোলা থাকে দোকানপাট। বারান্দায়ও থাকে মালামালের স্তূপ, পুরো স্টেডিয়াম এলাকাই যেন গাড়ি পার্কিং এলাকা।
গাড়ি পার্কিং করার কারণে স্টেডিয়াম চত্বরের পরিবেশ এমন হয় যে, মানুষের হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হয়। হকার, অস্থায়ী দোকান, ভাসমান মানুষ, মাদকসেবী, ছিনতাইকারীর অভয়ারণ্য এই স্টেডিয়াম চত্বর।
বছর ছয়েক আগে পল্টন ময়দান ও হকি স্টেডিয়ামের মাঝের জায়গায় করা হয়েছিল গাড়ি পার্কিয়ের ব্যবস্থা। পরে সেখানে তৈরি করা হয়েছে শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স। ফলে এখন যার যেভাবে খুশি গাড়ি পার্কিং করেন।
অচিরেই এই পার্কিং জঞ্জালমুক্ত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম চত্বরে। চাইলেই এখানে-সেখানে বাস, প্রাইভেটকার কিংবা অন্য কোনো গাড়ি পার্কিং করে রাখা যাবে না। গাড়ি রাখতে হবে নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের স্থানে। এজন্য ৮৫টি গাড়ি রাখা যায় এমন একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং তৈরি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম চত্বরে।
আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংটা হবে শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সের নিচে। এই পার্কিংটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনই।
২০২০ সালের আগস্টে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আসিফুল হাসান সেখানে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং, ডরমিটরি এবং কমপ্লেক্সে আরও কিছু কাজ করতে চিঠি দিয়েছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপিকে। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২ জানুয়ারি আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং তৈরি ছাড়াও রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে তৈরি করা হবে একটি ডরমিটরি। যেখানে অন্তত ২০০ শিশু-কিশোরকে রেখে স্কেটিং শেখানোর পাশাপাশি তাদের লেখাপড়া করাবে ফেডারেশন।
বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আসিফুল হাসান বলেন, ‘সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেসব এতিমখানা আছে সেখান থেকে বাচ্চাদের এনে এখানে রাখা হবে। তাদের থাকা-খাওয়ার খরচ দেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আমরা স্কেটিং প্রশিক্ষণ দেবো।’
রোলার স্কেটিং ফেডারেশন ১০০ গাড়ি রাখা যায় তেমন একটি পার্কিং তৈরি করে দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। তবে সেখানে যে জায়গা আছে তাতে সর্বোচ্চ ৮৫টি গাড়ি রাখার পার্কিং করা যাবে বলে জানান ফেডারেশনের ওই কর্মকর্তা।
নতুন এই সংস্কারকাজের মধ্যে সেখানে একটি শেখ রাসেল জাদুঘর নির্মাণের পরিকল্পনাও আছে। শেখ রাসেলের স্মৃতিময় জিনিসপত্র সংরক্ষণ করা হবে ওই জাদুঘরে। কমপ্লেক্সের সামনে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজও আছে নতুন এ সংস্কার পরিকল্পনায়।