উড়তে থাকা অহংকারী আফগানদের মাটিতে নামিয়ে আনলো বাংলাদেশ। ৬২ রানের বড় ব্যবধানে অনেকটা সহজেই হারিয়েছে রশিদ-নবীদের। বাংলাদেশের দেয়া ২৬৩ রানে টার্গেটে খেলতে নেমে আফগানরা ২০০ রান সংগ্রহ করতেই উইকেট হারিয়েছে সবটি। সাকিব একাই অর্ধেক আফগানদের শিকার করেছেন।
এর আগে সোমবার (২৪ জুন) সাউথাম্পটনের রোজ বোলে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান আফগান অধিনায়ক গুলবাদীন নাঈব। ম্যাচটি শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে। সরাসরি সম্প্রচার করেছে বিটিভি, গাজী টিভি ও মাছরাঙা চ্যানেল।
ম্যাচের শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটায় হানা দেয় বৃষ্টি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ে টস করা যায়নি। ১০ মিনিট দেরি করে হয়েছে টস।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মুজিব উর রহমানের বলে শর্ট কাভারে পাকিস্তানী আম্পায়ার আলিম দারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন লিটন দাস।আলিম দার ম্যাচের তৃতীয় আম্পায়ার হিসেবে এই সিদ্ধান্ত দেন যদিও টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা গেছে বল তালুবন্দী হবার আগেই ঘাস ছুয়েছে অথচ লিটনের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত।মূলত ওপেনিং জুটিতে তিনিই ভালো খেলছিলেন। ১৭ বলে ২ বাউন্ডারিতে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান করেন ১৬ রান।
শুরুতেই লিটন দাসকে হারানোর পরে দেখেশুনে খেলছিলেন দুই বন্ধু সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। তবে ব্যক্তিগত ৩৬ রানে বলে মোহাম্মাদ নবীর বলে বোল্ড আউট হয়ে ফিরে যান তামিম।
পরের ওভারে রশিদ খানের প্রথম বল সাকিবের প্যাডে লাগলে আম্পায়ার আউট দেন। তবে রিভিউ নেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। রিভিউয়ে বল স্টাম্প মিস করায় আউটের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। ২৬ রানে জীবন পান সাকিব।
তৃতীয় উইকেটে ৬১ রানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন সাকিব-মুশফিক। সাকিব একবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেও ৩০তম ওভারে এসে বাঁচতে পারেননি। মুজিব উর রহমানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন তিনি। ৬৯ বলে গড়া সাকিবের ৫১ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসটিতে ছিল মাত্র একটি বাউন্ডারির মার।
মুজিবের পরের ওভারে আবারও ঝলক। এবার তিনি ফিরিয়ে দেন ওপেনিং থেকে মিডল অর্ডারে আসা সৌম্য সরকারকে। এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে সৌম্য করেন মাত্র ৩ রান। ১৫১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ফের বিপদে বাংলাদেশ।
এরই মধ্যে পায়ের কাফে টান পড়ে নতুন ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহর। তিনি তখন মাত্র ৩ রানে। টাইগার সমর্থকরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। তবে মাহমুদউল্লাহ ওই ব্যথা নিয়েই ব্যাটিং চালিয়ে গেছেন।
পঞ্চম উইকেটে মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ যোগ করেন ৫৬ রান। ৩৮ বলে ২ বাউন্ডারিতে ২৭ রান করে মাহমুদউল্লাহ গুলবাদিন নাইবের শিকার হন।
এমন উত্থান পতনের মধ্যে একটা প্রান্ত ধরে দলকে টেনে নিয়ে গেছেন মুশফিক। ষষ্ঠ উইকেটে মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে ৩৩ বলে ৪৪ রানের জুটি তার। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ইনিংসের ৪৯তম ওভারে এসে দৌলত জাদরানের বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ হয়ে যান মুশফিক। ৮৭ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় তখন তিনি ৮৩ রানে।
এরপর মোসাদ্দেক শেষের কাজটা করে দিয়েছেন। ২৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে একদম শেষ বলে আউট হয়েছেন ডান হাতি এই ব্যাটসম্যান। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৬২ রান।
আফগানিস্তানের পক্ষে মুজিব উর রহমান ৩টি আর গুলবাদিন নাইব নিয়েছেন ২টি উইকেট।
২৬৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ভালো ব্যাট করছিল আফগানিস্তান। দলীয় ১১তম ওভারে ছন্দপতন হয়। যেখানে নিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে রহমত শাহকে তামিম ইকবালের ক্যাচে ফেরান সাকিব আল হাসান। ৩৫ বলে তিনটি চারে ২৪ রান করেন রহমত।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৩০ রান করে বাংলাদেশ বোলারদের হতাশা বাড়াচ্ছিলেন গুলবাদিন নাঈব ও হাশমতউল্লাহ শহিদী। কিন্তু ২১তম ওভারের পঞ্চম বলে ও দলীয় ৭৯ রানে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন শহিদী। মুশফিকুর রহিমের দুর্দন্ত স্টাম্পিংয়ে আউট হওয়ার আগে ৩১ বলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়া ১১ রান করেন তিনি।
নিজের পঞ্চম ও দলীয় ২৯তম ওভারে এসে জোড়া উইকেট তুলে নিলেন সাকিব আল হাসান। প্রথম বলে গুলবাদিন নাঈবকে ও তৃতীয় বলে নতুন ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নবীকে (০) সরাসরি বোল্ড করেন সাকিব। নাঈব ৭৫ বলে তিনটি চারে ৪৭ করেছেন। এরই সঙ্গে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে এক হাজার রান ও ৩০ উইকেট নেওয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়লেন সাকিব। এর ম্যাচেই সাকিব ফিফটি করার পর এক হাজার রান পূর্ণ করেন। আর ২৮ উইকেট নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন।
পরে আসগর আফগানকেও ব্যক্তিগত ২০ রানে বিদায় করে নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন এই তারকা। দলীয় ১৩৬ রানে রান আউটের ফাঁদে ইকরাম আলী খিল প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। আউট হবার আগে তিনি করেন ১২ বলে ১১ রান।