আজিজ পাশা: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে অন্যতম শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ বাংলাদেশ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ১৯৮৮ সাল থেকে অংশ নিয়ে অদ্যবধি বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী সদস্যরা সর্বোচ্চ পেশাদারী মনোভাব, আনুগত্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। তাদের অনন্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর আজ গৌরবের ৩০ বছর। সততা, আত্মত্যাগ, নিষ্ঠার এক সংমিশ্রণ শান্তিরক্ষী বাহিনী।
আজ ২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সকল দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে স্মরণ করা হয় এই দিনে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত শান্তিরক্ষীদের স্মরণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও এই দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), পুলিশের মহাপরিদর্শক, জাতিসংঘের মহাসচিব এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
১৯৮৮ সালে জাতিসংঘ ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ১৫ সামরিক পর্যবেক্ষক পাঠানো হয়। সেই থেকে শান্তিরক্ষা মিশন শুরু। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে যৌথবাহিনীতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন। তখন শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণ বিশ্বব্যাপী প্রশংসার দাবি রাখে। এরপর ধীরে ধীরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ব্যাপকহারে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার এবং সৈন্য নেয়া শুরু হয়। শান্তিরক্ষী হিসেবে গত ২৪ থেকে ২৫ বছরে বাংলাদেশের প্রায় দেড় লাখ সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর সদস্য পর্যায়ক্রমে অংশ নিয়েছেন। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম। বেড়েছে মিশন সংখ্যা। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ১৩টি শান্তিরক্ষা মিশন কাজ করেছে। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে মিশন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১টি। বর্তমানে শান্তিরক্ষা মিশনের সংখ্যা ৬০টিতে দাঁড়িয়েছে।শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শান্তি সেনা প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশবাহিনী আন্তর্জাতিক মান অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। যে কারণে বাংলাদেশ বীরের জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নারীরাও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন।
সেনাবাহিনী থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৭টি মিশনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। মিশনগুলো জাতিসংঘ ইরাক-কুয়েত পর্যবেক্ষক মিশন, জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক মিশন তাজিকিস্তান, জাতিসংঘ ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক, জাতিসংঘ গার্ড কন্টিনজেন্ট ইরাক, জাতিসংঘ সমর্থন মিশন, আফগানিস্তান, জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক মিশন জর্জিয়া, জাতিসংঘ ট্রানজিশন কর্তৃপক্ষ, কম্বোডিয়া, জাতিসংঘ অগ্রগামী মিশন কম্বোডিয়া, জাতিসংঘ অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ কম্বোডিয়া, জাতিসংঘ প্রোটেকশন ফোর্স, সাবেক যুগোশ্লাভিয়া, জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক মিশন প্রেভলাকা, জাতিসংঘ অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন পূর্ব স্লোভেনিয়া, জাতিসংঘ প্রোটেকশন ফোর্স, জাতিসংঘ সহায়তা মিশন রুয়ান্ডা, জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক মিশন লাইবেরিয়া, জাতিসংঘ ভেরিফিকেশন মিশন এঙ্গোলা, জাতিসংঘ অন্তর্বর্তীকালীন সহযোগিতা কম্বোডিয়া, জাতিসংঘ অপারেশন সোমালিয়া, জাতিসংঘ অপারেশন মোজাম্বিক, জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক মিশন উগান্ডা/রুয়ান্ডা, জাতিসংঘ মিশন হাইতি, জাতিসংঘ রেফারেন্ডাম মিশন পশ্চিম সাহারা, জাতিসংঘ অর্গানাইজেশন মিশন কঙ্গো, জাতিসংঘ মিশন সিয়েরালিওন, জাতিসংঘ অগ্রগামী মিশন পূর্ব তিমুর, জাতিসংঘ অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন পূর্ব তিমুর, জাতিসংঘ মিশন পূর্ব তিমুর, জাতিসংঘ মিশন কসোভো, জাতিসংঘ মিশন ইথিওপিয়া/ইরিত্রিয়া, জাতিসংঘ মিশন লাইবেরিয়া।শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সততা ও আত্মত্যাগের কারণে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি পুরস্কার অর্জন করেছে। সততা, যোগ্যতা, সহমর্মিতা ও আত্মত্যাগের কারণে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি শান্তি সেনা পঠিয়ে মর্যাদা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাতও এটি। বর্তমানে বিশ্বের ১২২টি দেশের শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের ৯৫৯৩ জন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের অহংকার। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আজ তারা বহির্বিশ্বে উজ্জ্বল করছে বাংলাদেশের নাম। লাল সবুজের পতাকার অতন্দ্র এই প্রহরীদের প্রতি তাই দেশবাসীর বিনম্র শ্রদ্ধা।