মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান প্রতিনিধিঃ-সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। গত ১৩ দিনে সোয়া লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে এর সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা।অপরদিকে নৌ-পথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে বুধবার সকালে রোহিঙ্গা শরণার্থী বহনকারী ১১টি নৌকা ডুবে গেছে।বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীর মোহনায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।উদ্ধার অভিযান শুরু হলে বেলা দেড়টা পর্যন্ত শিশুসহ আট রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়।এই ঘটনায় আরও অন্তত শতাধিক রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে বলে জানান তাদের স্বজনরা।নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফরিদুল আলম জানান,মিয়ানমারে নির্বিচারে হত্যা ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ায় প্রাণ বাঁচাতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা এখনো সীমান্ত দিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকছে।প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের স্রোত এখন সীমান্ত এলাকা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বান্দরবান এবং চট্টগ্রাম জেলার গ্রামগঞ্জে।তবে অধিকাংশ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের চাকঢালা এলাকায় ৭টি ও লেমুছড়ি ইউনিয়নের ২টি শরণার্থী শিবিরে,উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীর ১২-১৫টি পাহাড়ে তাবু ও বাঁশ-পলিথিনের কুঁড়ঘর নির্মাণ করে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।বুধবার দিনভর এসব পাহাড়ে ছোট ছোট ঘর তৈরি করে রোহিঙ্গাদের নতুন ঠিকানা গড়ে নিতে দেখা গেছে।এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে,তা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও সংখ্যাটি ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার বলছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সূত্র।আর জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) গতকাল এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে,গত মাস থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১ লাখ ২৩ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে;অন্যদিকে,গত মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা,টেকনাফ ও উখিয়ায় অন্তত ৪০টি সীমান্তপথ দিয়ে আরও অন্তত ২০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে।সরজমিনে দেখা যায়,সীমান্ত পার হওয়ার সময় গত কয়েকদিন তাদের তেমন কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি।নাইক্ষ্যংছড়ি বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে বসে থাকতে দেখা গেছে।কেউ কেউ গাড়িতে উঠে কক্সবাজারের দিকে চলে যাচ্ছে।অপরদিকে,সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বালুখালী পাহাড়ের ৫০ একর জায়গা ছেড়ে দেওয়া হলে অনেকেই সেখানে তাদের আশ্রয়স্থল তৈরি শুরু করে দিয়েছে।একইসঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে কেউ বসবাস শুরু করলে তাদেরও আটক করা হবে বলে জানানো হয়েছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
রাখাইন রাজ্যে এখনও গুলির শব্দ ও আগুনের শিখা:-মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে গতকাল সকাল থেকে দফায় দফায় গুলির শব্দ ভেসে আসছিল।এছাড়া রোহিঙ্গা পাড়া জ্বালিয়ে দেওয়ায় বেশ কয়েকটি স্থানে আগুনের শিখা ও ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখা গেছে।আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসা শুরু হলেও থামছে রোহিঙ্গা নির্যাতন।মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের উপর তাদেরও অত্যাচার নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে।
অনুপ্রবেশকালে আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক:-গতকাল পাহাড় পথে,সাগরপথ ও স্থল সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকালে প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করেছে বিজিবি।টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম জানান,গতকাল অনুপ্রবেশের সময় দুই হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে প্রতিরোধ করা হয়েছে এবং তাদের পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে।কিন্তু রাতের আঁধারে তারা ঢুকে পড়ছে বলেও জানান তিনি।
চমেক হাসপাতালে ভর্তি ৪৯ রোহিঙ্গা:-চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ণ ইউনিট, ক্যাজুয়ালিটি ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৪৯ জন নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থী।এ পর্যন্ত মোট ৫৪ জন রোহিঙ্গা চিকিৎসা নিতে ভর্তি হলেও ইতিমধ্যে গুলিবিদ্ধ দুই জন মারা যান এবং আরও তিনজন চিকিৎসা নিয়ে চলে যান বলে জানিয়েছে চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম।