ফিলিস্তিনি শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করে হত্যা করতো ইসরায়েলি সেনারা।প্রকাশ্যে এমন স্বীকারোক্তি দেয়া ইসরায়েলি সেনাদের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সয়লাব হয়ে পড়েছে।বিশ্বব্যাপী ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এই ঘটনা।
ন্যক্কারজনক এমন একটি ভিডিওতে দেখা গেছে,একজন ইসরায়েলি সেনা ক্যামেরার সামনে একটি শিশুকে হত্যার ইচ্ছা প্রকাশ করে।ভিডিওতে তিনি শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেন ১২ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি এক কন্যাশিশু তিনি হত্যা করেছেন। তবে মেয়েটির সঙ্গে থাকা অন্য শিশুটি লুকিয়ে যাওয়ায় সে প্রাণে বেঁচে যায়।সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত অন্য ভিডিওতে এক সেনাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা শিশুদের খুঁজছি (হত্যার জন্যে), কিন্তু কোনো শিশুই যেন আর গাজাতে বেঁচে নেই।’
তাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘হয়তো আমি ১২ বছর বয়সী একটি মেয়েকে হত্যা করেছি, কিন্তু আমরা আরও শিশুদের খুঁজছি।’ অন্য একটি ন্যক্কারজনক ভিডিওতে দেখা যায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ফুটবল খেলতে থাকা দুই শিশুকে গুলি করার কথা অকপটে এবং গর্বিতভাবে স্বীকার করেন এক ইসরায়েলি সেনা।
তিনি বলেন, ‘আমি এইমাত্র গাজায় গিয়েছিলাম, এবং সেখানে দুটি ছোট মেয়েকে ফুটবল খেলতে দেখলাম। তো, আমি যা করলাম, আমি আমার অস্ত্র বের করে তাদের দুজনের মাথায় গুলি করেছি।’ ব্যাপক নিন্দার জন্ম দিয়েছে এই ঘটনা। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকেই ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এবং তাদের শিগগিরই জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি।
গাজায় বর্বরোচিত হামলার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের উপহাস করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সেনাদের এমন অনেক ভিডিও সামনে এসেছে।গত বছর ডিসেম্বরের শুরুতে, গাজা উপত্যকার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ধ্বংসস্তুপের মাঝে টিকে থাকা সবশেষ একটি খেলনার দোকান বোমা মেরে গুড়িয়ে দেয় এক সেনা।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক ইসরায়েলি সেনা তার মেয়ের দ্বিতীয় জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষ্যে গাজায় একটি বাড়ি বিস্ফোরণ দিয়ে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। কি বর্বর সেই দৃশ্যগত ৭ অক্টোবর সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত গত ৮২ দিনে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮ হাজার ৮০০ শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষ।
এক বিবৃতিতে গাজার গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৭ অক্টোবর বর্বরোচিত হামলা শুরুর পর থেকে হাসপাতালে আনা হয়েছে এমন নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২১ হাজার ১১০ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৩০০ নারী ও ৮ হাজার ৮০০ শিশু রয়েছে। আহত হয়েছেন ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি।এতে আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধের ৮২ দিনের মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রায় ১ হাজার ৭৭৯টি গণহত্যা করেছে। যার ফলে ২১ হাজার ১১০ জন নিহত এবং প্রায় ৭ হাজার ফিলিস্তিনি এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
প্রসঙ্গত,গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তারপর থেকেই গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় গাজার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে, যা গত ৭৫ বছরে ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক এবং ভয়াবহ সংঘাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে।