অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারকে গুরুতর অপরাধ (সিরিয়াস অফেন্স) এবং একে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন দেশের উচ্চ আদালত। আদালত বলেছেন, বর্তমান সময়ে দুর্নীতি ও অর্থপাচার খুনের চেয়ে ভয়াবহ অপরাধ। হত্যা একটি পরিবারকে ধ্বংস করে মাত্র, কিন্তু অর্থপাচার বা দুর্নীতি দেশ ও সমাজকে ধ্বংস করে। সম্প্রতি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর অগ্রগতির তথ্য জানতে চেয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মন্তব্য করেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে গিয়েও অর্থ পাচারকারীরা শান্তি পাবে না। অর্থ পাচারকারীর বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।’ এ ছাড়া সম্প্রতি অর্থ আত্মসাতের মামলায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ট্রাস্টি জামিন নিতে এলে আদালত তাদের জামিন না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। আদালত এসব মন্তব্য এবং আদেশের মাধ্যমে দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বার্তা দিচ্ছেন বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। তিনি বলেন, আদালত এখন দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাত ও অর্থপাচারের বিষয়ে কঠোর।
পি কে হালদার : দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানির জন্য আগামী ১২ জুন দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। গত ১৭ মে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সাথে আদালত পি কে হালদারের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর অগ্রগতির তথ্য জানাতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিন আদালত বলেন, আমরা আদেশ দিলে পৃথিবীর কোনো দেশে গিয়েও অর্থপাচারকারীরা শান্তি পাবে না। আদালত বলেন, আমাদের আদেশের কারণেই আজ পি কে হালদার সারা বিশ্বের মানুষের কাছে অর্থপাচারের অভিযোগে ভিন্নভাবে আলোচিত। এটা ভাবার সুযোগ নেই যে, অন্য দেশে গেলে আমরা তার বিরুদ্ধে আদেশ দিতে পারব না। আমাদের শুধু অর্থপাচারকারীর অবস্থানটা চিহ্নিত করে দিলেই আমরা তার বিরুদ্ধে আদেশ দিতে পারি। দেশের অর্থপাচারকারীর বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।
নর্থসাউথের ৪ ট্রাস্টি : বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় নর্থসাউথ বিশ^বিদ্যালয়ের চার ট্রাস্টির আগাম জামিন আবেদন খারিজ করে তাদের শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন হাইকোর্ট। গত ২২ মে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ওই দিন ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের জামিন আবেদনের শুনানিকালে আদালত বলেছিলেন, বর্তমান সময়ে দুর্নীতি ও অর্থপাচার খুনের চেয়ে ভয়াবহ অপরাধ। হত্যা একটি পরিবারকে ধ্বংস করে মাত্র কিন্তু অর্থপাচার বা দুর্নীতি দেশ ও সমাজকে ধ্বংস করে।
সম্রাটের জামিন বাতিল : অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন বাতিল করেন হাইকোর্ট। একই সাথে তাকে সাত দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আদালত। গত ১৮ মে হাইকোর্টের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত এ সময় সম্রাটকে জামিন দেয়া ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারককে সতর্ক করেন।
হাজী সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল : জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় গত বছরের ৯ মার্চ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেয়া ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী আত্মসমর্পণের পর জামিনের আবেদন জানান হাজী সেলিম। আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক।
অর্থপাচার গুরুতর অপরাধ : অর্থপাচার গুরুতর অপরাধ (সিরিয়াস অফেন্স), অর্থপাচারকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ। ক্যাসিনোকাণ্ডের ঘটনায় ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয় গোপাল সরকারের জামিন বিষয়ে শুনানিকালে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এমন মন্তব্য করেন। একই সাথে ‘এ ধরনের অপরাধ বেড়েই চলেছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত। চার মামলায় গ্রেফতার ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের তৎকালীন সেক্রেটারি জয় গোপাল সরকারকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বাতিলের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। একই সাথে মামলাগুলো এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন আদালত। এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান বলেছিলেন, অর্থপাচার মামলা নিয়ে আপিল বিভাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। আদালত বলেছেন, বর্তমান অবস্থায় অর্থপাচার একটি বিশেষ ধরনের অপরাধ। এ অপরাধে দায়ের করা মামলা হালকাভাবে নেয়ার স্কোপ নেই।
ডেসটিনির ৪৬ জনের কারাদণ্ড : অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকে ১২ বছর এবং কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটির প্রায় এক হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের এ মামলায় ৪৬ আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাশাপাশি সব আসামিকে দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা অর্থদণ্ড দেন আদালত। গত ১২ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে রফিকুল আমীনকে ১২ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও এক কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট হারুন-অর-রশীদকে চার বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি আসামিদের পাঁচ থেকে ৯ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.