ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি এবং চার কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে বুধবার কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১ এ এই মামলা করেন।
এস কে সিনহা ছাড়া মামলার বাকি আসামিরা হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান, একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন; তিনি এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ব্যবসায়ী পরিচয়ে দুই ব্যক্তির নেওয়া ঋণের চার কোটি টাকা বিচারপতি সিনহার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢোকার অভিযোগ পাওয়ার পর ওই বছরই তদন্তে নামে দুদক।
এরপর গতবছর অক্টোবরে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতির ‘প্রমাণ’ তাদের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে।
তারও আট মাস পর বুধবার যে মামলা দুদকের পক্ষ থেকে করা হল, তাতে দণ্ডবিধি-১৮৬০ এর ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) এবং মানিল্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২), (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।
যা আছে মামলায়
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুইটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরদিন তারা ওই ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন।
তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
ঋণের জামানত হিসেবে আসামি রনজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয় ঋণের আবেদনে। ওই দম্পতি এস কে সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।
দুদক বলছে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি এ কে এম শামীম কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই, ব্যাংকের নিয়ম-নীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দুটি অনুমোদন করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর 'অস্বাভাবিক দ্রুততার' সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন মোট চার কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় এস কে সিনহার নামে। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর।
এজাহারে বলা হয়, “আসামি রনজিৎ চন্দ্র ঋণ দ্রুত অনুমোদনের জন্য প্রধান বিচারপতির প্রভাব ব্যবহার করেন। রনজিৎ চন্দ্রের ভাতিজা হলেন ঋণ গ্রহীতা নিরঞ্জন এবং অপর ঋণ গ্রহীতা শাহজাহান ও রনজিৎ ছোটবেলার বন্ধু। ঋণ গ্রহীতা দুইজনই অত্যন্ত গরীব ও দুঃস্থ। তারা কখনও ব্যবসা-বাণিজ্য করেননি।”
ওই ঋণের চার কোটি টাকা আজও পরিশোধ করা হয়নি জানয়ে এজাহারে দুদক বলেছে, “আসামি রনজিতের মাধ্যমে অন্যান্য আসামিদের ভুল বুঝিয়ে কাগজপত্র স্বাক্ষর করার ব্যবস্থা করেছিলেন এস কে সিনহা।”
দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসা বিচারপতি সিনহা গতবছর যুক্তরাষ্ট্রে বসেই একটি বই প্রকাশ করেন। তাতে তিনি দাবি করেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।
ওই সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে সিনহার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার নামে একটি বাড়ি কেনার খবর গণমাধ্যমে আসে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি করে দুদক।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য সে সময় বলেছিলেন,অনন্ত সিনহা নিউ জার্সিতে দুই লাখ ৮০ হাজার ডলারে (দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা) চার হাজার বর্গফুটের তিন তলা বাড়ি কিনেছেন, বিদেশে ‘অর্থ পাচার ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন’ বলে অভিযোগ পেয়েছেন তারা।
বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তবে সরকারের তরফ থেকে তখন বলা হয়েছিল, দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তা দুদক দেখবে।
দুদকের তদন্তের মধ্যেই গতবছর ২৭ সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন সাবেক বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, যিনি এখন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
ওই মামলায় প্রধান বিচারপতির পদে থেকে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ করা হয় সিনহার বিরুদ্ধে।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.