নিউজ ডেস্কঃ- অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে নিম্নমুখী করে। ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব-হরতাল-অবরোধ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যে ভয়াবহ আঘাত হেনেছিলো তা কারো অজানা নয়। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে টানা তিন মাস অবরোধে প্রাণ হারায় দুই শতাধিক সাধারণ মানুষ। পোশাক শিল্প, ক্ষুদ্র উদ্যোগ এবং পরিবহন সেক্টরসহ দেশের প্রতিটি খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেসময় ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিলো। তৎকালীন সময়ে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য শক্ত হাতে দমন করে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ সরকার। ধীরে ধীরে মানুষের মনে সাহস সঞ্চারিত হয়। অনেক আত্মত্যাগের পরে ২০১৫ সালে মাঝামাঝি সময়ে হরতাল অবরোধের প্রভাব কমতে শুরু করে।
২০১৫ সালে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান যে চারটি বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছিলো- সেগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা প্রধানতম। তৎকালীন সময়ে ন্যাশনাল বাজেট রিকমেন্ডেশন ফর ফিন্যান্সিয়াল ইয়ার ২০১৫-১৬’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ব্র্যাক সেন্টারে সিপিডি’র এক জরিপে বলা হয়, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ৮১ দিনের অবরোধ ও ৬৭ দিনের হরতালে উৎপাদন খাতে ৬০৬ কোটি টাকা, সেবা খাতে ৪৩১ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৪৪৩ কোটি টাকা, মৎস্য খাতে ১১৭ কোটি টাকা, পর্যটন খাতে ২১০ কোটি টাকা, পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় খাতে ৪৭২ কোটি টাকা, হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে ৩৬ কোটি টাকা, যোগাযোগ খাতে ৩৭৪ কোটি টাকা, রিয়েল এস্টেটে ২৫০ কোটি টাকাসহ বিভিন্ন খাতে প্রতিদিন ২ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়।
টানা অবরোধে অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়ার পাশাপাশি এ সময়ে ১১টি খাতে মোট জাতীয় উৎপাদনে ৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ক্ষতি হয় বলে জানায় সিপিডি। এর মধ্যে যোগাযোগ খাতে ৭৪৪ কোটি টাকা, পোল্ট্রি খাতে ৬০৬ কোটি টাকা, হিমায়িত খাদ্যে ৭৪১ কোটি টাকা, পোশাক খাতে ১ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা, প্লাস্টিক খাতে ২৪৪ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৩৯৮ কোটি টাকা, পর্যটন খাতে ৮২৫ কোটি টাকা, ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স খাতে ১৫৬ কোটি টাকা, খুচরা ও পাইকারি বিক্রিতে ৪৪৮ কোটি এবং রিয়েল এস্টেট খাতে ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতির পাশাপাশি ব্যাহত হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাধারণ শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা।
২০১৫ সালের পর সর্বশেষ ২০১৬ সালে কোন হরতাল কিংবা অবরোধ হয়নি। এর ফলে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। দেশে হরতাল সংস্কৃতি না থাকলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য কতটা বেগবান হয় তার উদাহরণ হতে পারে ২০১৬ সাল। কোন ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা না থাকায় বাংলাদেশ ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ ৭.১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। যা জামায়াত-বিএনপির হরতাল-অবরোধের ফলে ৫ শতাংশে নেমে এসেছিল।
এফবিসিসিআই’য়ের হিসাব অনুযায়ী, এক দিনের হরতালে দেশের জিডিপির দশমিক ১২ শতাংশ ক্ষতি হয়। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের (আইসিসিবি) হিসাবে, এক দিনের হরতালে এক হাজার ৫৪০ কোটি টাকার (২০ কোটি ডলার) ক্ষতি হয়। ঢাকা চেম্বারও হরতালে ক্ষতির একটি হিসাব দেখিয়েছে। তারা বলছে, এক দিনের হরতালে দেশের এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। বছরে যদি গড়ে ৪০ দিন হরতাল হয় এক বছরে ক্ষতি হয় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। সিপিডি’র এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, হরতালে বাংলাদেশের এক শতাংশ পুঁজি নষ্ট হলে তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশের মোট জিডিপির দশমিক ৯ শতাংশ।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী বদলে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। হরতাল-অবরোধের মতো ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। বেড়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। বাজেটের আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ হয়েছিল। এর ফলে পরপর তিন বছর ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।