বান্দরবান অফিসঃ-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্জনের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরো একটি সাফল্য। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সুফল পেয়েছে বাংলাদেশ।
তৈরি পোশাকে খাতে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ভারতের বাজারে দেশের রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪২ শতাংশ। একইসঙ্গে বড় দুই বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতেও বড় অঙ্কের প্রবৃদ্ধি এসেছে।
সম্প্রতি রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ভারত থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় ছিল ১৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। শুধু তৈরি পোশাক খাত থেকে আয় হয়েছে ১৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এ আয় ১৬৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের এ সময় আয় হয়েছিল পাঁচ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
ভারতকে বাংলাদেশের বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ১০ শতাংশ ভারতের সাথে হয়ে থাকে।
বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক চরম বৈরী অবস্থায় পৌঁছে, অবধারিতভাবেই যার প্রভাব পড়ে বাণিজ্য সম্পর্কেও। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নেয়।
উভয় দেশের বাণিজ্য সম্পর্কিত ইস্যুগুলো নিয়ে চলতে থাকে আলাপ-আলোচনা। নেয়া হয় কার্যকর বেশকিছু পদক্ষেপ, যার সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।
ইপিবির হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, ভোজ্য তেলের রফতানি আয় বেশ লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ভোজ্য তেল থেকে আয় হয়েছে ৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটা বেশ আশার কথা; প্রধান রফতানি বাজারগুলোর পাশাপাশি আঞ্চলিক বাজার হিসেবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আয় লক্ষণীয়ভাবে বাড়ছে, এটি ভবিষ্যৎ রফতানির জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। তিনি বলেন, টাকার দরপতন এবং তুলার দাম কম হওয়ার ফলে মার্কিন বাজারেও দেশের রফতানি আয় বাড়ছে। তবে তিনি খাতসংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যেন বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের সম্ভাবনাকে বিশ্ববাজারে কাজে লাগান। কেননা চামড়ার বিশ্ববাজার তৈরি পোশাকের চেয়েও বড়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে যথাক্রমে রফতানি আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৩ এবং ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে প্রায় ১০ শতাংশ হারে রফতানি আয় বেড়েছে। ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাজ্যের বাজারে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত তিন মাসে আয় হয়েছে ১০২ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ১০৩ কোটি ডলার।
সংশ্লিষ্টদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া ইউরোপের বাজারে রপ্তানি আয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ভারতের বাজারে বিশ্বের বড় ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো তাদের বিক্রয় কেন্দ্র করার ফলে দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাকের কদর বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা , চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশের পোশাকের রফতানি আয় আরো বাড়বে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা চীনের বিকল্প বাজার হিসেবে বাংলাদেশে তাঁদের পোশাক ক্রয়ের আদেশ কিছুটা বাড়িয়েছেন।
একক বৃহত্তম রফতানি বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১৬৬ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়। আর গত অর্থবছরের এ সময়ের আয় ছিল ১৪৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর মধ্যে পোশাক খাত থেকে আয় হয়েছে ১৪৮ কোটি ডলার।