আসন্ন রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য মূল্য সহনীয় রাখতে বড় ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বলা হয়েছে, কোনো প্রকার অর্থ বিনিয়োগ না করেই শতভাগ ব্যাংক ঋণে পণ্য আমদানি করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। তবে তা করতে হবে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে। একই সাথে আমদানি ঋণপত্রের কমিশনও যথাসম্ভব ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে হবে। ব্যবসায়ীদের জন্য এ ছাড় দেয়া হয়েছে আগামী ১০ মে পর্যন্ত। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় দেয়া ক্ষমতা বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নির্দেশনা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের এ বড় ছাড়ের সুফল গ্রাহকের ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কোনো ব্যবসায়ী পণ্য আমদানি করার জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি ঋণপত্র স্থাপন (এলসি খোলা) করে থাকে। এ জন্য গ্রাহক আমদানি মূল্যের একটি অংশ পরিশোধ করতে হয়। বাকি অর্থ ব্যাংক ঋণ দিত। কখনো আবার রাষ্ট্রের বিশেষ প্রয়োজনে শতভাগ ঋণে পণ্য আমদানি থাকে। চুক্তি অনুযায়ী পণ্য দেশে এলে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পণ্য বাজারে বিক্রি করে থাকে। ব্যাংকের সাথে সম্পর্ক অনুযায়ী কখনো পণ্য ব্যাংকের গোডাউনে রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক ব্যাংকের অর্থ পরিশোধের ভিত্তিতে পণ্য ছাড় করে থাকেন। কখনো বা বিশ্বাসের ঋণের (এলটিআর) ভিত্তিতে পণ্য দেশে আসার পর সরাসরি বাজারে বিক্রি করে ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করে থাকেন।
পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংক এলসি খোলার বিপরীতে গ্রাহকের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে কমিশন নিয়ে থাকে। এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, সাধারণত কোনো গ্রাহক শতভাগ অর্থ পরিশোধ করে ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুললে তার জন্য ১০০ টাকায় ন্যূনতম ২৫ পয়সা কমিশন আদায় করে থাকে। আর কোনো গ্রাহক মার্জিনে অর্থাৎ আমদানি মূল্যের আংশিক পরিশোধ করলে তার বিপরীতে প্রতি ১০০ টাকায় সর্বোচ্চ ৪০ পয়সা পর্যন্ত কমিশন আদায় করা হয়ে থাকে। ব্যাংকের প্রতি বছর আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য আসে এই এলসি কমিশন থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রমজানকে সামনে রেখে দেশে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর বিপরীতে যৌক্তিক বা অযৌক্তিক কারণ উভয়ই রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। সেই সাথে বেড়েছে বিভিন্ন পণ্যের দাম।
এ কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। পণ্য আমদানি ব্যয় তাই কমাতে এলসি মার্জিন শূন্য করা হয়েছে। সেই সাথে কমানো হয়েছে এলসি কমিশনও।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর জন্য এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পবিত্র রমরজান মাস ও ঈদুল ফিতর আসন্ন। অপর দিকে কোভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী পরিস্থিতিসহ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত বিভিন্ন কারণে বাজারে আমদানিনির্ভর নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে কিছু পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হবে। পণ্যগুলো হলো ভোজ্যতেল, ছোলা, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, খেজুর, ফলমূল ও চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আলোচ্য ভোগ্যপণ্য আমদানিতে আমদানি ঋণপত্র ব্যাংকগ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে শূন্য মার্জিনে আমদানির ঋণপত্র স্থাপন বা এলসি খোলা যাবে।
একই সাথে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের কমিশন ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে যথাসম্ভব ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে হবে। এ নির্দেশনা আগামী ১০ মে পর্যন্ত কার্যকর রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের জন্য এ বড় ছাড় গ্রাহকদের ঘরে পৌঁছবে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে। অন্যথায় ব্যবসায়ীদের বড় ছাড়ের সুফল ব্যবসায়ীদের পকেটেই যাবে, গ্রাহকের ঘরে পৌঁছবে না।