বান্দরবানের পাহাড়ে-পাহাড়ে রসালো কমলার বাম্পার ফলন


প্রকাশের সময় :৪ নভেম্বর, ২০১৭ ৫:৪৫ : পূর্বাহ্ণ 784 Views

সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-সবুজ নীল লাল-এ তিন রংয়ের মিষ্টি কমলা উৎপাদন ও বেচাকেনায় খ্যাতি অর্জন করেছে বান্দরবানের উপজেলাগুলোতে।বিশেষ করে দুর্গম থানছি উপজেলায় এবারও বেশি উৎপাদিত হয়েছে স্থানীয়জাতের কমলা।থানছির পাহাড়ে পাহাড়ে কমলা বাগানে চলতি মৌসুমেও উৎপাদিত হয়েছে বিপুল রসালো কমলা।প্রতিদিনই এসব কমলা থানছি থেকে জেলা সদর এবং জেলার বাইরে সরবরাহ করা হচ্ছে।চাষীরাও পাচ্ছেন ন্যায্যমুল্য।তাই তারা মহাখুশি। মূলত থানছির চাষীরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কমলা বেচা-বিক্রিতে।কেবল থানছি নয়,জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি,লামা এবং আলীকদম উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় কমলার বাম্পার ফলনে এখন ভরপুর।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো.আলতাফ হোসেন বলেন,প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে স্থানীয় চাষীরা তাদের বাগানে উৎপাদিত রকমারী কমলা বিক্রি করে থাকেন। চলতি মৌসুমে প্রতিটি কমলার মুল্য চাষীরা পেয়েছেন ১০ থেকে ১২ টাকা হারে।তবে পাইকারী বাজারে বিক্রি একটু কম হলেও খুচরা মূল্য বেশি হওয়ায় চাষীরা খুশি।জেলা সদর তথা সমতল এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা থানছি উপজেলার নানাস্থানে গিয়ে পাইকারী দামে কমলা কিনে নিয়ে যায়।যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন স্থানীয় কমলা চাষীদের সাথে।কমলাচাষীদের কাছে আগাম দাদন দিয়েও কমলা কিনে নেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা।থানছি বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী,বিমল কর্মকার,পিন্টু মহাজন ও ফরিদুল আলম জানান,চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে পাইকারী কমলা কিনতে শুরু করেন।কমলাচাষীদের কাছ থেকে চট্টগ্রামের পাইকারী ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের কাছে বিক্রির জন্যে প্রতিদিন ৫-৬ ট্রাক কমলা থানছি,রুমা উপজেলা সদর, গালেংগ্যা,বান্দরবান সদরের অদুরে কিৎসিমানি পাড়া,ফারুকমুন পাড়া এবং রোয়াংছড়ির তারাছাসহ বেতছড়ি পাড়া ও বাজার থেকে সরবরাহ করে আসছেন। পাইকারী কমলা ব্যবসায়ীরা নীট লাভ গুনছেন প্রতি ট্রাকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা হারে।থানছির টুকতং পাড়ার কমলা চাষী মাংচং ম্রো,তিন্দুর মাংলুং হেডম্যান পাড়ার চাষী প্রেমথাম খুমী এবং কমলা বাগান পাড়ার চাষী চামথুই ত্রিপুরা (কারবারী) জানান,তারা গত ২৫ বছর ধরেই নিজেদের বাগানে কমলার আবাদ করে আসছেন। তাদের প্রত্যেকের বাগানে চলতি বছর গড়ে ২০ হাজার কমলা ধরেছে।যা বিক্রি করে ছেলেমেয়ের পড়া-লেখার খরচ যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে।কমলা চাষী চামথুই ত্রিপুরার ৫ জন ছেলেমেয়েই কলেজে অধ্যয়রত।তার পাড়ার বহু পরিবারের ছেলেমেয়ে স্কুলে অধ্যয়নরত।জানা গেছে,১৯৯৭ সাল থেকে বিপুল চাষীকে কমলা বাগান পরিচর্চা,উৎপাদান কৌশল,প্রশিক্ষণ,বাজারজাতকরণসহ বিভিন্ন কলা-কৌশল নিয়ে হাতে-কলমে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।রসায়নিক সার প্রয়োগ ছাড়াই কেবল জৈব সার ব্যবহার করে কমলার উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে বলেও তিনি জানান।কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব মারমা জানান,চলতি বছরে ১২শ’ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩ হাজার ৬১৮জন চাষী কমলার পাশাপাশি ফলজ,আম, কলা,লিচু,কাজু বাদামসহ রকমারী কৃষিপণ্য উৎপাদন করেছেন।চাষীরা বলেন,অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত,কৃষি বিভাগের জনবল বৃদ্ধি,কমলা চাষীদের চাহিদা মোতাবেক সরকারি ভাবে বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ, উপজেলা ভিত্তিক একটি করে হিমাগার বা গুদামজাতকরণের ব্যবস্থা করা গেলে কমলাসহ অর্থকরি কৃষি পণ্যের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।থানছি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা এবং রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান অংথোয়াইচিং মারাম বলেন,কমলার ব্যাপক উৎপাদনের ক্ষেত্রে শিগগিরই থানছি ও রুমা উপজেলা শিগগিরই মডেল উপজেলায় পরিণত হতে যাচ্ছে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সুত্র জানায়,চলতি মৌসুমে জেলার ৭টি উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির কমলার ফলন বা উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদিত কমলার পরিমাণ প্রায় সোয়া লাখ মেট্টিক টন হতে পারে।উৎসঃ-(এনামুল হক কাশেমী,আওয়াজ বিডি.কম)

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
December 2024
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!