করোনা পরিস্থিত কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় দেশে আমদানি কার্যক্রম বেড়েছে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমেছে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে হু হু করে বাড়ছে ডলারের দাম। এমন পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিত কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় দেশে আমদানি চাপ বেড়েছে। ফলে এর দায় পরিশোধে বাড়তি ডলার লাগছে। এ কারণে ডলারের দরও বাড়ছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ রয়েছে। এখন বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেই দেশে উৎপাদন কর্মকাণ্ড চলছে। শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির চাপ বেড়েছে। এছাড়া আগের বিভিন্ন আমদানি বিলও পরিশোধ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ডলারের চাহিদা বাড়ায় বাজারে দামও বেড়েছে। এটা স্বাভাবিক নিয়ম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজই হলো মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখা- এমনটা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যখন বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবারহ বেশি ছিল তখন ডলার কিনেছে। এখন সরবরাহ কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত আগস্ট মাসে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে।
এর আগে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ডলার কেনায় রেকর্ড গড়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সবমিলিয়ে প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনে। এর আগে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনে আর্থিক খাতে এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।এদিকে দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পর গত মাসের শুরু থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। আগস্টে আন্তঃব্যাংক ডলারের দামে বাড়ে ৪০ পয়সা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করা আন্তঃব্যাংক ডলারের দাম এখন ৮৫ টাকা ২০ পয়সা। এর আগে গত বছরের জুলাই থেকে গেল মাস আগস্ট পর্যন্ত ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল।
ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক ৮৫ টাকা ২৫ পয়সা। তবে নগদ ডলারের মূল্য বেশিরভাগ ব্যাংকে ৮৭ টাকার ওপরে রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক নগদ ডলার সাড়ে ৮৮ টাকায় বিক্রি করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে সবশেষ ২ সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলোর ঘোষিত মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী, নগদ ডলারের দর সবচেয়ে বেশি উঠেছে ব্র্যাক ব্যাংক, এনআরবিসি ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকগুলোর নগদ ডলারের দর ছিল ৮৮ টাকা ৫০ পয়সা। এ ছাড়া বেশির ভাগ ব্যাংকই ৮৭ টাকা থেকে ৮৮ টাকায় ডলার বিক্রি করছে। সর্বনিম্ন দরে নগদ ডলার বিক্রি করছে ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তান ৮৫ টাকায় এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ডলারের দর ছিল ৮৫ টাকা ৬০ পয়সা।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো চাইলেও বাড়তি ডলার নিজেদের কাছে রাখতে পারে না। বৈদেশিক মুদ্রা রাখার বিষয়ে প্রতিটি ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা আছে; যাকে এনওপি বা নেট ওপেন পজিশন বলে। যদি কোনো ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ডলার মজুত হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার বিক্রি করতে হয়। আর না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হবে। কেউ নির্ধারিত সীমার বাইরে ডলার নিজেদের কাছে ধরে রাখলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানা গুণতে হয়। জরিমানার হাত থেকে বাঁচার জন্য ব্যাংকগুলো বাজারে ডলার বিক্রি করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দ্বারস্থ হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক তার মূলধনের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারে। এর অতিরিক্ত হলেই তাকে বাজারে ডলার বিক্রি করতে হবে।
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.