কুল চাষে ভাগ্য বদল হয়েছে বান্দরবানের চিম্বুক এলাকার সুয়ালক ইউনিয়ন,দেওয়াই হেডম্যান পাড়ার বাসীন্দা তংচং ম্রো’র।৫ একর পাহাড়ি জমি’র ১২’শ কুল গাছের ফলন বিক্রয় করে বছরে প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা আয় করে থাকেন।যা দিয়ে ঢাকায় পড়ুয়া দু’জনসহ ৪ ছেলের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ বহন পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্চলতা ফিরেছে সংসারে।
সরজমিনে চিম্বুক এলাকা ঘুরে দেখা যায়,বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের ১২ মাইল ওয়াই জংশন,সুয়ালক ইউনিয়নের দেওয়াই হেডম্যান পাড়ায় গাছে ঝুলছে সবুজ-হলুদ ও লালচে বলসুন্দরি-আপেল কুল।নয়নাভিরাম এই দৃশ্য যে কারো মন প্রফুল্ল করবে নিমিষেই।
কুলচাষি তংচং ম্রো (৪১) জানান,সদর উপজেলার সুয়ালক এলাকায় পুর্বে বসবাসরত এলাকা গুলো সরকার ভূমি অধিগ্রহণ করার পর পরিবার পরিজন নিয়ে পুনর্বাসিত হন চিম্বুক এলাকায়। একই বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিট হতে ১০ টি কুলের চারা দেওয়া হয় বিনামূল্যে। সেই চারা গুলো এনে রোপন করেন।তেমন পরিচর্যা না করায় ১০ টি হতে ৭ টি চারা মারা যায়।দীর্ঘ দিন ওই গাছের দিকে আর যাওয়া হয়নি।একদিন জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখেন পাকা পাকা কুল ঝুলছে গাছে যা খুবই সুমিষ্ট।পরে এই কুলের প্রজাতি সম্পর্কে জানতে স্থানীয় কৃষি অফিসে যায়।সেখান থেকে ধারণা নিয়ে প্রথম পর্যায়ে ৭০০ চারা নিয়ে আবাদ শুরু করেন। আবাদের ২ বছর পর হতে গাছে কুল ধরা শুরু হয়। সেইবছর কেজি ১৫০-২০০ টাকা দরে প্রায় ৩ লাখ টাকার কুল বিক্রি করে এই বাগান হতে। বর্তমানে ১২ শ এর অধিক বলসুন্দরী ও আপেল কুলের গাছ রয়েছে।সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় হতে পাঁকতে শুরু হয় এই উচ্চ ফলনশীল কুল। এই কুল আকারে বড় ও স্বাদে সুমিষ্ট হওয়ায় পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন জেলায়।
গত বছর ২০২১ সালে এই কুল বিক্রি করে সাড়ে ৯ লাখ টাকা পেয়েছিলেন এবার এই কুল বিক্রি করে সাড়ে সাত লাখ টাকা আয় হয়েছে।এই কুল গাছ পরিচর্যা বাবদ বছরে লাখ খানেক টাকা খরচ হলেও প্রতি বছর ৭-৮ লাখ টাকা লাভবান হন এই কুল চাষি।
বান্দরবান কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়,জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ফলের আবাদ হয়।জেলায় যে সকল ফলের আবাদ হয় তার মধ্যে বিশেষ জায়গা দখল করছে উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন প্রজাতির কুল।গত বছর ২০২০- ২১ অর্থ বছরে জেলায় ১৪৭৭ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছিল এবং এ থেকে উৎপাদন হয় ১১৭২৭ মেট্রিকটন কুল।এবার ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২,৫৫০ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০,৪০০ মেট্রিক্টন।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান,জেলার সুনিষ্কাসিত মাটি,হালকা এসিড,বেলে দোয়াশ মাটি হওয়ায় বা ফল আবাদ করার জন্য যে ধরনের পরিবেশ প্রয়োজন তার সবই বিদ্যমান বান্দরবান জেলার এই পাহাড়ি মাটিতে।জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জায়গায় কুল বরই আবাদ হচ্ছে।এই বরই সুস্বাদু-সুমিস্ট হওয়ার কারনে দেশব্যাপী চাহিদা রয়েছে।এই কুল বরই চট্টগ্রাম -ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগীতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।