সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা ১০টি মেগা প্রকল্পে প্রস্তাবিত বাজেটেও উল্লেখ্যযোগ্য হারে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই ১০ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ থাকছে প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে সাতটি মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়লেও তিনটিতে কিছুটা কমেছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার বাজেট বক্তৃতা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, এ বছর সরকারের ১০ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ থাকছে প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাওয়া যাবে ২৪ হাজার ৭৯৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। যা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটের বরাদ্দ অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের তুলনায় আসন্ন অর্থবছরে বরাদ্দ বেড়েছে পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে।
নতুন ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারের ১০ মেগা প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদ্মা সেতুতে বরাদ্দ বাড়ছে ২ হাজার ৭১৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫ হাজার ৩৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।
এছাড়াও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ থাকছে ৩ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ২৯০ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৩১৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
মেট্রোরেল প্রকল্পে এবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ হিসেবে ৭ হাজার ২১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। চলতি বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৪৮৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে এবারের বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। গত বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৭০৫ কোটি টাকা। এই নির্মাণ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ৩০৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ১ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
তবে সরকারের মেগা প্রকল্প হলেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দ কমেছে সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেন সড়ক টানেল নির্মাণ ও পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবিত বাজেটে।
এরমধ্যে সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ১ হাজার ৩৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ১০১ কোটি টাকা।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্পে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৩৪৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এই প্রকল্পে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ১৭৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
এবং পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৫৭৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।