বান্দরবান অফিসঃ-দেশের দক্ষিণে বঙ্গপোসাগর এবং দেশের সর্ববৃহৎ নদী মেঘনার তীরে অবস্থিত ভোলা জেলা। দেশের সর্ববৃহৎ দ্বীপ এটি। ভোলা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল বরিশাল বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এই দ্বীপকে কেন্দ্র করে বর্তমানে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক পর্যটন কেন্দ্র, রয়েছে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করার মতো বহুমুখী সম্ভাবনা।
ভোলা জেলায় রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ। এই গ্যাসকে কেন্দ্র গড়ে উঠেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ৩৪ মেগাওয়াটের রেন্টাল এবং ২২৫ মেগাওয়াটের সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে আরও ২২৫ এবং ১০০ মেগাওয়াটের পৃথক দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া এলাকায় শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রচুর প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ থাকায় দিন দিন গ্যাসভিত্তিক শিল্পোৎপাদন কেন্দ্র গড়ে উঠছে ভোলাতে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ আগ্রহী হচ্ছে এই দ্বীপ জেলায় তাদের উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনের জন্য।
শিল্প বাণিজ্যে সমৃদ্ধশালী করার জন্য বর্তমান সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নানা রকম কাজ করে যাচ্ছেন। তার মতে, ভোলা জেলা হবে দেশের ‘দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর’। ভোলার চারদিকে নদী বেষ্টিত হওয়ায় ভাঙনের কারণে ছোট হয়ে আসছিলো এই জেলা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্লক বাঁধের মাধ্যমে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা হয়। মেঘনা, তেঁতুলিয়া আর ইলিশা নদীর ভাঙন রোধে প্রায় হাজার কোটি টাকার ব্লক বাঁধ নির্মাণের কাজ কাজ করছে বর্তমান সরকার।
শিল্প কারখানা নির্মাণের পূর্বশর্ত হলো উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ভোলা জেলার সর্বত্র পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে শিল্প পণ্য উৎপাদনের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যস্থানে পৌঁছে দেয়া যায়। শুধু সড়ক পথ নয়, নদী পথেও শিল্প পণ্য আনা নেয়া করা সহজ সাধ্য। এজন্য ভোলায় দিন দিন গড়ে উঠছে শিল্পোৎপাদন কেন্দ্র।
ভোলায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে। তাই গ্যাস ও বিদ্যুৎ সুবিধা থাকায় এরই মধ্যে ভোলায় প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ভিত্তি করে শেলটেক নামের একটি সিরামিক কারখানা গড়ে উঠেছে। কাজী ফার্ম লি: গড়ে তুলেছে সাগরিকা ফিড নামের বিশাল কারখানা। প্রিয় লি: নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে ব্রিক ফিল্ড। তাসনীম অ্যাগ্রো লি: নামের একটি কোম্পানি বিদ্যুৎ ভিত্তিক নবান্ন অটো রাইস চালু করেছে। পাশাপাশি তারা নবান্ন জুটেক্স নামের একটি পাটকল স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এসবই সম্ভব হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নীতকরণ, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ থাকার কারণে। সেই সাথে রয়েছে সরকারের যুগোপযুগী উদ্যোগ।
‘রূপকল্প-২১’ ও ‘রূপকল্প – ৪১’ বাস্তবায়নের জন্য, দেশের সর্বস্তরে উন্নতি সাধনের জন্য এগিয়ে এসেছে সরকার। এই লক্ষ্যে দেশের দ্বীপ জেলা ভোলাকে শিল্পাঞ্চল করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যোগাযোগের সুবিধার্থে ভোলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত তৈরী করা হয়েছে পাকা রাস্তা। এখানে জ্বালানির পাশাপাশি ভূমি ও শ্রমিক সহজলভ্য হওয়ায় দ্রুত শিল্প নগরীতে রূপান্তরিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ এই দ্বীপ। শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করতে প্রস্তুত এই নগরী।